ডাকপিয়ন - জারিফ আহমেদ - ভৌতিক গল্প

ডাকপিয়ন 

জারিফ আহমেদ 





চারোদিকের শোরগোল আরো জড়ালো হলো,,মনহচ্ছে অনেক কয়জন লোক তাদের এদিকেই আসছে,,,তাদের হাটার আওয়াজে মনে হচ্চে পুরো জংগেল টা কাপছে,,,এই জংগলে তো সেলিম চৌধুরী একা অনেকবার ই এসেছে,এরকম পরিবেশ তো কখনো দেখেনি।,,,সেলিম চৌধুরীর ইচ্ছা হলো,তানহা'র কবরে গিয়ে একবার দেখার,,,কিন্তু জাহেদ কে একা রেখে যাওয়ার সাহস পেলো না সেলিম চৌধুরী।
হঠাৎ সেলিম চৌধুরী কে চমকে দিয়ে চারোদিক থেকে সাদা কাপড় পরা অনেক গুলা অশিরিরী আসতে লাগলো,সবারই চোখের দিকে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা শুধু ঠোঁট গুলাই দেখা যাচ্ছে,,সেলিম চৌধুরী অনেক ঘাবড়ে গেলো, জাহেদ কে শক্ত করে ধরে রাখলো,,। সাদা কাপড়ের অশিরিরী গুলা তাদের অনেক কাছে এসে গেছে,,,জাহেদ তাদের দিকে মোহনীয় ভাবে তাকিয়ে আছে,,,।হঠাৎ জাহেদ সেলিম চৌধুরীর হাত ছেড়ে দিয়ে তাদের কাছে গিয়ে দাড়ালো আর তাদের সাথে যেতে শুরু করলো,,,সেলিম দৌড়ে বন্ধুকে আটকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু জাহেদ এক ঝটকায় সেলিম কে ফেলে দিলো,,,,
সেলিম বুঝতে পেরেছে,,এই অশিরিরী গুলাই কিছু একটা করেছে যার জন্যে জাহেদ এমন ব্যবহার করছে,,,,।জাহেদ এখন ঘোরের মধ্যে আছে।
সেলিম চৌধুরী ঘড়ির দিকে তাকালো এখন ৪ঃ৩০ বাজে আরেকটু পরেই সকাল হবে,,তাহলে এখনো এতো অন্ধকার কেনো এখানে,,মনে হচ্চে এখনো গভীর রাত,,।সেলিম চৌধুরী সেই সাদা কাপড়ের অশিরিরী গুলার পিছে পিছে যেতে লাগলো,,,,যেতে যেতে হঠাৎ একটা দেওয়ালের সাথে প্রচন্ড রকমের ধাক্কা খেলো।সামনে তাকিয়ে সেলিম চৌধুরী জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো,,,তার সামনে একটা বিশাল দেওয়াল,,"একি সেই সাদা কাপড়ের অশিরিরী গুলা কোথায়,জাহেদ কোথায় গেলো "
সেলিম চৌধুরী জাহেদের নাম নিয়ে জোরে আর্তনাদ করতে লাগলো।দেওয়ালে পিঠ লাগিয়ে সেলিম চৌধুরী কান্না করছে"তাহলে কী আমি জাহেদ কে হারিয়ে ফেলবো,বন্ধু তুই কোথায়,আমারি দোষ তোকে কেনো আমি এসবে জরালাম"
সেলিম চৌধুরী কোনো ভাবেই দেওয়াল টপকে ওপারে যেতে পারছে না,,এতো বড় দেওয়াল টপকে ওই পাশে যাওয়া অসম্ভব,। চিৎকার দিয়ে কাদতে ইচ্ছা করচে সেলিম চৌধুরীর।সেলিম চৌধুরী মাথা নিচু করে বন্ধুর জন্যে  কান্না করছে,,হঠাৎ সেলিম চৌধুরী তার আশে পাশে কারো উপস্থিতি টের পেলো,,,।চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে আবারো চমকে গেলো সেলিম চৌধুরী,,।তার সামনে সাদা কাপড় পরা একটা অশিরীরী দাঁড়িয়ে,একটু আগে ফয়সাল কে যে অশিরীরী গুলোও নিয়ে গেছে তাদের মতোই দেখতে এই অশিরীরি কিন্তু সেলিম তার মুখ দেখতে পারছে না।
হঠাৎ সেলিম চৌধুরী পিছনে তাকিয়ে আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলো,পিছনে আর কোনো দেওয়াল নেই,,,সেলিম চৌধুরী বড় বড় পা ফেলে সামনে এগোতে লাগলো,,পকেটে পিস্তল'টা একবার ভালো করে চ্যাক করে নিলো,,,।হাটতে হাটতে সেলিম চৌধুরী একটা বিশাল বড় প্রাসাদের সামনে এসে দাড়ালো,,,বিষ্ময়ে সেলিম চৌধুরীর চোখ কপালে গিয়ে ঠেকলো।এসবের পিছনে কে আছে তা আমার জানতেই হবে,জাহেদ কে মুক্ত করতেই হবে"নিজের মনে কথা গুলো বলে সেলিম চৌধুরী প্রাসাদের দিকে এগিয়ে গেলো।
সেলিম চৌধুরী ধীর পায়ে প্রাসাদে প্রবেশ করলো,,,প্রথম হলঘরে প্রবেশ করেই ধূপ আর বেলি ফুলের ঘ্রাণ পেলো সেলিম চৌধুরী।এই প্রাসাদে কেউ নেই।
এতো বিশাল প্রাসাদ কিন্তু কোথাও কেউ নাই।
হঠাৎ একটা রুমের পাশ দিয়ে যেতেই থমকে দাঁড়ালো সেলিম চৌধুরী,,।এই রুম থেকেই ধূপ আর বেলি ফুলের ঘ্রাণ আসছে,,,আর একটা নারীকন্ঠ কি সব মন্ত্র বলছে যার কিছুই সেলিম চৌধুরী বুঝতে পারছে না।
সেলিম চৌধুরী রুমের সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো, তারপর দরজা ঠেলা দিতেই হাল্কা আওয়াজ করে দরজাটা খুলে গেলো,,, আর তখনি সামনে তাকিয়ে সেলিম চৌধুরী যা দেখলো তার জন্যে একটুও প্রস্তুত ছিলো না।পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো মনে হলো সেলিম চৌধুরীর,,,।নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না সেলিম চৌধুরী,,,,মুখ দিয়ে কথা বলার মতো সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।চোখ থেকে আপনা আপনিই পানি পড়ছে,,,,সেলিম চৌধুরী মূর্তির মতো পাথর হয়ে সামনে বসে থাকা বিভিষিকা কে দেখছে,,,,কতোক্ষণ কতো সময় পেরিয়ে গেছে সেলিম জানে না,,,,এমন কখনো হতে পারে তা কল্পনার বাইরে ছিলো,,,,,সেলিম চৌধুরী নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো,"ঠিক দেখছি তো"?
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সেলিম চৌধুরী 
সামনে বসে থাকা বিভিষিকা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো  "তুমি",,,,,,,,,,,?????????
সেলিম পলকহীন চোখে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।কখনো কী ভেবেছে তানহা কে এভাবে জলজ্যান্ত অবস্থায় দেখতে পাবে?এও কী সম্ভব? মৃত মানুষ কে সশরীরে চোখের সামনে দেখতে পারা যায়,,নাহ সেলিম সব ভুল দেখছে,কোথাও তো ভুল হচ্চে,,,,,
সেলিমের "তুমি" কথাটার এখনো কোনো উত্তর আসে নাই,,সেলিমের মতো তানহা ও অনেক অবাক হয়ে আছে,,,,
সেলিম নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলো আর তখনি বুঝলো,,,তানহা পুরোপুরি নগ্ন অবস্থায় আছে,,,তানহার সামনে,,কি সব রাখা,,জাহেদ কে দেখে সেলিম চৌধুরী আরো বেশি অবাক হলো,,,জাহেদের দেহ টা তানহার সামনে রাখা,,,
সেলিম চৌধুরী ঘুরে দাড়ালো,,"তুমি কাপড় পড়ে নাও তানহা,এই অবস্থায় আমি তোমার কাছে কিছু জানতে চাই না"
এতোক্ষণ তানহা ও ঘোরের মধ্যে ছিলো,,তার সব পরিকল্পনা এভাবে ভেস্তে যাবে,এটা কখনো কল্পনা করে নাই!
ঃ-তুমি ফিরতে পারো এদিকে,,,
সেলিম তানহার দিকে ঘুড়ে দাড়ায়,,,তানহা সাদা শাড়ি পড়ে আছে এখন।
ঃ-আমার বন্ধু ঠিক আছে? 
সেলিমের কথার জবাবে তানহা চুপ করে থাকে,,,
ঃকী হচ্চে এসব তানহা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,,প্লীজ আমাকে বলো,,,
ঃ-তুমি ভুল সময়ে চলে আসছো সেলিম,,তোমার কথার কোনো জবাব আমি এই মূহুর্তে দিবো না,,,আমার হাতে সময় খুব কম,,,শুধু মনে রাখো,,,আমি যা করছি তোমার কাছে যাওয়ার জন্যেই করছি,,,
,ঃ-মানে,,,
ঃ-মানে তোমার বন্ধুকে আমার জন্যে ত্যাগ দিতে হবে,,,
ঃ-What,,তারমানে এতোদিন থেকে যা কিছু ঘটছে সব তোমার কাজ,,
ঃ-বল্লাম তো আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারবো না এখন,,প্লীজ সেলিম আমি আর এভাবে থাকতে পারছি না,আমি তোমার কাছে যাওয়ার জন্যেই সব কিছু করছি,,আমার এতোদিনের তপস্যায় পানি ঢেলে দিও না প্লীজ,,,
ঃ-না কিছুতেই না,,তুমি আমার বন্ধুর কিছুই করবে না।আমি ওর কোনো ক্ষতি করতে দিবো না।সেলিমের কথার মাঝেই হঠাৎ সেলিম পিছন থেকে একটা আঘাত অনুভব করলো,,,মাথায় হাত দিয়ে জোরে আর্তনাদ করে উঠলো সেলিম।সব কিছু ঝাপসা লাগলো সেলিমের চোখে। মূহুর্তেই  মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সেলিম।
চাচা ও ঠিকাছে তো?বললো 'তানহা'
ঃ-হ্যা তুই তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর,আমি সেলিম কে নিয়ে যাচ্ছি,,,
-------------------------
সেলিমের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করলো,,মাথায় হাত দিয়ে ব্যাথা'টা খুব ভালো ভাবেই অনুভব হলো সেলিম চৌধুরীর। জ্ঞান ফিরতেই সব আস্তে আস্তে মনে পরে গেলো। সেলিম চৌধুরী জাহেদ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।"জাহেদ জাহেদ ঠিক আছে তো,,,?"
সেলিম পকেট হাতড়ে টর্চ লাইট বের করলো তারপর তার আলো দিয়ে চারোপাশ-টা দেখতে লাগলো।এতো বড় একটা ঘর,সুন্দর সজ্জিত,,,কিন্তু ওরা আলো'টা নিভিয়ে রেখেছে।
সেলিম চৌধুরী দরজা খোলার অনেক চেষ্টাই করলো,,কিন্তু কিছুতেই দরজা খুলছে না,,,সেলিম দরজার কাছে বসে পরলো,,,সেলিম চৌধুরীর মাথা কাজ করছে না। কী করে সেলিম তানহা কে বাধা দিবে। 
তানহার কথা কিছুই সেলিম বুঝতে পারছে না,কিন্তু এসব হত্যা কান্ডে তানহার হাত আছে তা সেলিম চৌধুরী বুঝতে পারছে।
হঠাৎ দরজায় কারো উপস্থিতি টের পেলো সেলিম।কেউ একজন দরজার  লক খুলে দিয়েছে,সেলিম দ্রুত উঠে দরজা খুলে।আর সাথে সাথে সাদা কাপড় পড়া কেউ একজন অদৃশ্য হয়ে যায়।সেলিম রুম থেকে বের হয়ে তিনতলার সেই রুমটায় আসে,,যেখানে তানহা জাহেদ কে আটকে রেখেছে,,,তানহার কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে,অনেক দ্রুততার সাথে কী সব পাঠ করছে  তানহা।
তুমি আমার দাসত্ব করতে প্রস্তুত?
ঃ-হ্যা মালকিন।
ঃ-তুমি তোমার জীবন আমার জন্যে উৎসর্গ করতে পারবে?
ঃ-হ্যা মালকিন পারবো!
ঃ-তোমার নাম কী?
ঃ-আমার নাম জাহেদুল ইসলাম
ঃ-না তুমি মিথ্যা বলছো,,,তোমার নাম সালাউদ্দিন 
ঃ-আমার নাম জাহেদুল ইসলাম।
ঃ-আমার সাথে মিথ্যা বলার পরিণাম ভালো হবে না।সত্যি করে বলো তোমার নাম কী?
ঃ-আমার নাম জাহেদুল ইসলাম
তানহা রেগে ফেটে পরলো,,,চাচার দেওয়া নামের  সাথে এই নাম কিছুতেই মিলছে না,,,তানহা হুংকার দিয়ে উঠলো,,,আর তখনি সেলিম দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করলো।ভিতরে প্রবেশ করে সেলিম দেখলো তানহা আবারও নগ্ন অবস্থায় বসে আছে সামনে জাহেদের ও একই অবস্থা,,,,সেলিম পিছনে ঘুরে বলতে লাগলো "প্লীজ স্টপ ইট তানহা,বন্ধ করো এসব মরণ খেলা।"
ঃ- বন্ধ করবো? কেনো সেলিম? তুমি কী ভুলে গেছো,সেই পিশাচ গুলা আমার সাথে কী করেছে।আমাকে বাচতে দিয়েছে ওরা? আমার সব স্বপ্ন এক রাতের মধ্যেই শেষ করে দিয়েছে,,,,এখন যখন আমি আবার সুযোগ পেয়েছি আমার স্বপ্ন গুলাকে বাচানোর তখনি তুমি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছো,,,
এসব তোমার কাজ তাই না?,,তোমরা দুজনে মিলে আমার এতো বছরের পরিকল্পনা শেষ করে দিয়েছো?
ঃ-হ্যা আমার পরিকল্পনা।আমাকে মারো?মেরে ফেলো আমাকে।তোমাকে ছাড়া ১০ টা বছর আমি বেচে থেকেও মরে গেছি,,,আমি আর বাচতে চাই না,,মেরে ফেলো,,,আমাকেও মরণ চিঠি দাও।
সেলিম পিছনে ফিরে তাকালো,তানহা সাদা শাড়ি পরে নিয়েছে,,,
ঃ-তানহা আমি চাই তুমি আমার কাছে ফিরে আসো,,,কিন্তু কোনো নিষ্পাপ প্রাণ কে হত্যা করে নয়।এই নিষ্পাপ ছেলে গুলা তো কোনো দোষ করে নাই ওদের কেনো তুমি শাস্তি দিচ্চো।
কারণ আমিও কোনো দোষ করিনাই তারপর ও তো শাস্তি পেতে হয়েছে।
ঃ-তানহা আমার তানহা আমিও চাই তোমাকে কিন্তু এভাবে না কাউকে হত্যা করে না,,,,।
তাদের কথার মাঝে রুমে হঠাৎ সেই ডাকপিয়ন'টা দৃশ্যায়মান হলো,,,,
সেলিম চৌধুরী ডাকপিয়নের কাছে গিয়ে বললো,,,"আমাকে একটা মরণ চিঠি দিতে পারবেন"
সেলিমের কথায় ডাকপিয়ন মাথা থেকে ক্যাপ খুলে ফেললো,তারপর মাথা উচু করে সেলিমের দিকে তাকালো,,,,,
সেলিম ডাকপিয়ন কে দেখে চমকে উঠলো ,,,"চাচা আপনি"?
ঃ-অবাক হচ্ছো,,হওয়া'টা স্বাভাবিক,,,,।কারণ তোমরা সবাই তো জানো আমি মারা গেছি,,,,
সেলিম তুমি তানহা কে ভালোবাসো তাই না,,তাহলে তানহা যা করছে তাকে তা করতে দাও।
ঃ-চাচা আমি কিছু বুঝতে পারছি না,,
ঃ-বুঝবে সেলিম,,,১০ বছর আগে তানহার সাথে কী কী ঘটেছিলো তার সবটা তুমি জানো না,,,
ঃ-চাচা আমাকে সব খুলে বলেন,
ঃ-শুনো তাহলে,,,,,,,,,
----------------------
***১০ বছর আগের ঘটনা,,,,!
"মা,বাবা তোমরা আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ে ঠিক করেছো,আর এখন বলছো খুশি খুশি বিয়ে করে নিবো"
ঃ-দেখ তানহা,আমরা তোর ভালো চাই,সেলিমের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করে তুই সুখী হবি না,,।
ঃ-আমার সুখ তোমাদের দেখতে হবে না।
ঃ-আমরা তোর মা বাবা আমরা তোর সুখ দেখবো না তো কে দেখবে,,,কালই তোর বিয়ে,সেলিম কে ভুলে যা।আজকে তুই এই ঘরেই বন্দি হয়ে থাকবি,,,
তানহার হাতের মোবাইল,ল্যাপটপ নিয়ে তানহার বাবা মা রুমে তালা মেরে চলে যায়।তানহার পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায় মূহুর্তেই,,কী করবে এখন,,।
সেলিম কে কীভাবে বলবে সব কিছু,,সেলিম চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্যে শহর থেকে অনেক দূরে আছে।
একা এই অবস্থা তানহা কী করে সামলে নিবে,,,
তানহা তার মা বাবা কে চিনে।কালকের মধ্যেই ওরা তানহার বিয়ে দিয়ে দিবে।তানহা বুঝতে পারলো কান্না করে কোনো লাভ হবে না,,,।
রাত বারতেই,যখন সবাই ঘুম,তানহা জানালা দিয়ে বাইরে চলে আসলো,,,এতো রাতে একটা দোকান ও খোলা নেই,কী করে সেলিম কে জানাবে সব।
তানহা সেলিমের বাসায় যাবে ভাবলো,,
সেলিমের বাসার চাবি তানহার কাছে ছিলো,সেলিম একাই থাকতো,,,তাই তানহার আর কোনো সমস্যা হবে না,।
তানহা নির্জন রাস্তা দিয়ে সেলিমের বাসার দিকে যাচ্ছিলো,এর মধ্যেই ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।
 এই বৃষ্টির মধ্যেই হঠাৎ একটা গাড়ির হেড লাইটের আলো তানহার চোখের মধ্যে এসে পড়লো
,,তানহা একবার ভাবলো,,লিফট নিবে কিন্তু এই রাতের বেলা কারো গাড়িতে লিফট নেওয়া ঠিক হবে না,,তানহা জোড়ে জোড়ে পা ফেলে হাটতে লাগলো,,
হঠাৎ গাড়ি থেকে একটা ছেলে  তানহা কে বললো,,এতো রাতে এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাচ্ছেন,,আমার গাড়িতে আসেন,আমি আপনাকে পৌছে দেই"
তানহা সরাসরি  না করে দিয়ে,আরো দ্রুত হাটতে থাকে,, হঠাৎ গাড়িটা তানহার সামনে এসে দাঁড়ায়।গাড়ি থেকে দুইটা ছেলে নেমে তানহা কে জোড় করে গাড়িতে উঠায়,,,তানহা অনেক অনুনয় বিনোনয় করে তানহা কে ছেড়ে দিতে কিন্তু কিছুতেই ছেলে গুলা তানহা'র কথা শুনে না,,,।
তানহা বুঝতে পেরেছে এই পিশাচ গুলা থেকে কোনোভাবেই আর নিজেকে বাচাতে পারবে না,,,,গাড়ির মধ্যেই এই অমানুষ গুলা তানহার শরীরে হাত দিতে থাকে,,সব গুলা নেশা করে মাতাল হয়ে আছে,,,গাড়ি'টা একটা ঘন জংগলে এসে থামলো,,,তারপর তানহা কে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে পিশাচ গুলা ভক্ষণ করতে লাগলো,,,তানহা পালানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়,,ওরা সংখ্যায় ৫ জন ছিলো,,,,সারারাত  গণধর্ষণের পর ওরা তানহা কে নগ্ন অবস্থায় এভাবে ফেলে রেখে চলে গেলো,,,,তানহা দু চোখে অন্ধকার দেখলো গল গলিয়ে বমি করে দিলো তানহা,
এতো অসহায় কখনোই লাগে নাই।উঠার শক্তিটুকু ও তানহার নেই।সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা,,,সেলিমের কথা বারবার মনে হতে থাকে তানহার ,,,
আচ্ছা এই অবস্থায় সেলিম যদি তানহা কে দেখে তাহলে সহ্য করতে পারবে তো,,,?
তানহা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে হঠাৎ তানহা তার মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাস অনুভব করে,,মনে হচ্ছে তার মুখের কাছেই কেউ ঝুকে আছে,,,তানহা চোখ খুলে।আর তখনি চমকে উঠে তানহা,তানহা চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের করতে পারলো না,,,
তানহা উঠার অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে,,শুধু অসহায় দৃষ্টিতে সামনে থাকা মানুষ্টার দিকে তাকিয়ে থাকলো,,,ছেলেটা কে দেখে আর স্বাভাবিক মানুষ লাগছে না চুল গুলা কেমন কোকড়া কোকড়া,চুলে জট পাকিয়ে আছে।জামা কাপড়ে সব ময়লা,,গা দিয়ে অনেক গন্ধ আসছে,,,।
লোকটার চোখ চকচক করছে,,করবেই বা না কেনো এই জংগলে একা একটি মেয়েকে নগ্ন অবস্থায় দেখে সব পুরুষের ই হিংস্র রুপ বাহিরে চলে আসার কথা।তানহা কে ভীত চোখে তাকিয়ে থাকিতে দেখে ছেলেটা হো হো করে হেসে উঠে
ঃএমন সুযোগ এতো সহজে পেয়ে যাবো ভাবিনি,,,হাহাহাহাহা,,,,
তানহা হাতজোর করে মিনতি করে,,,ছেলেটা তার হলদেটে দাত বের করে হাসতে থাকে তানহা বুঝতে পারে,এবার এই অমানুষ টার খাবার হতে হবে তাকে,,।
তখনি হিংস্র লোকটা তানহার একটা হাত ধরে টেনে হেচড়ে জংগলের আরো গভীরে নিয়ে যায়,,।বাধা দেওয়ার কোনো শক্তি তানহার নেই।
শুধু চোখ গুলো পুরুষদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা প্রকাশ করছে। একটা ঝোপের মাঝে এনে রাখে লোকটা  তানহা কে,,,তারপর পকেট থেকে একটা চকচকে ছুড়ি বের করে,,,।ছুড়ি দেখে তানহা চমকে উঠে,।
ছেলেটা ছুড়ি হাতে তানহার দিকে এগিয়ে যায়।তারপর বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে বলে"ভয় নেই তোমার শরীরের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই,,,আমি তোমাকে দিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করবো,,,আমি এর আগেও অনেক জন কে দিয়ে করিয়েছি,,তাই পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিলো অনেক কষ্টে আজ পালিয়ে এসেছি,,এসেই আমার সেই বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্ট করার জন্যে তোমাকে পেয়ে গেলাম কী কপাল আমার,,রেডি হয়ে যাও মেয়ে,,বেশি কষ্ট দিবো না তোমাকে,,বিশ্বাস রাখো"
লোকটার কথা শুনে তানহা ভয়ে কাপতে শুরু করে,তানহা এই মূহুর্তে মৃত্যু কে ভয় পায় না,,কিন্তু এই যন্ত্রণা গুলা তানহা সহ্য করতে পারবে না।তানহা হাত জোর করে অস্পষ্ট কথা বলার চেষ্টা করে। "প্লীজ আমাকে মারলে একেবারেই মেরে ফেল,এভাবে মারিস না প্লীজ"
তানহার কথায় পিশাচ'টা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।আর তারপর ছুড়ি দিয়ে তানহার হাতের এক খন্ড মাংস তুলে ফেলে,,ব্যাথায়,যন্ত্রনায় তানহা জোড়ে আর্তনাদ করে উঠে,তা দেখে সামনে থাকা পিশাচ'টা আনন্দে হাসতে থাকে।
ছেলেটা আবারো ছুড়ি দিয়ে তানহার কাধের দিকের আরেক খন্ড মাংস তুলে নেয়।,এভাবেই কয়েকবার তানহার শরীরে আঘাত করে পিশাচ টা। লাল রক্তে ভেসে যায় চারোপাশ।
অসহ্য যন্ত্রনায় তানহার সারা শরীর জ্বালা করছে।এমন যন্ত্রণা সহ্য করে তাকে মরতে হবে তা কখনো কল্পনাও করে নাই তানহা।তানহা মাটিতে লুটিয়ে পরে। নিস্তেজ হয়ে পড়ে তানহার দেহ।ছুড়ি টা নিচে রেখে লোকটা তানহার দিকে ঝুকে পড়ে আর তখনি তানহা ছুড়ি'টা হাতে নিয়ে লোকটার চোখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।
লোকটা চোখে হাত দিয়ে চিৎকার করতে করতে দূরে ছিটকে পড়ে।
আর তখনি জংগলে কয়েকজন পুলিশ  এসে তানহা কে উদ্ধার করে,হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তানহার অবস্থা খুবই শোচনীয়। তানহার বাবা মা এসেছে কিন্তু তানহা কারো সাথে দেখা করবে না,,,,।শুধু বারবার সেলিম চৌধুরীর নাম নিচ্ছিলো।সেলিম তানহার ফোন বন্ধ পেয়ে পাগল পাগল হয়ে যায়।তানহার মা বাবা সেলিম কে তানহার অবস্থা সম্পর্কে জানায়,,তানহা হাসপাতালে আছে শুনে সেলিম বারবার তানহার এই অবস্থার জন্যে নিজেকে দোষ দিতে থাকে,,,।
হাসপাতালে এসেই সেলিম তানহার এই অবস্থা দেখে সহ্য করতে পারে না কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তানহা সেলিম কে সাহস দেয়।
ঃ-কিছু হবে না আমার সেলিম।তুমি এমন করলে আমি নিজেকে কীভাবে সামলাবো বলো,যুগিয়ে বলে
ঃ-তানহা আমাকে মাফ করে দাও,আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারি নাই,,আজ আমার জন্যেই তোমার এই অবস্থা।
ঃ-সেলিম,,তুমি এমন কথা আর বলিওনা আমি তোমার হয়েই থাকবো সারাজীবন।
আর শুনো কখনো আমার কিছু হলে আমাকে তোমার বাড়ির পাশে হাইওয়ের সেই জংগল টায় কবর দিবে।
ঃ-তানহা এমন কথা আর বলবে না।তোমার কিছু হবে না।তুমি সুস্থ হয়ে যাও,,তারপর আমরা বিয়ে করে ফেলবো,,চাকরি না হোক আমি অনেক পরিশ্রম করবো,দিন মজুরের কাজ হলেও করবো আমি,,।সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
সেলিমের কথায় তানহা ফুপিয়ে কেঁদে উঠেল"কিন্তু আমি অপবিত্র হয়ে গেছি সেলিম তারপরও আমাকে বিয়ে করবে তুমি"
ঃ-তুমি আমার কাছে পবিত্র,, আমি কিছু জানতে চাই না,,শুধু ওই পিশাচ গুলাকে দেখতে চাই যাদের জন্যে তোমাকে আজ এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে।
ঃ-কিন্ত এতো সুখ আমার কপালে যে সইবে না সেলিম।আমার সময় ফুরিয়ে আসছে,,অন্ধকার কবরে আমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো বলো।
সেলিম তানহা কে জড়িয়ে ধরে রাখে,,,দুজনে কান্না করছে,,তানহার চোখের পানিতে সেলিমের শার্ট ভিজে গেছে হঠাৎ তানহার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।সেলিম তানহা কে জড়িয়ে ধরেই বসে থাকে।কতো সময় পেরিয়ে গেছে সেলিম জানে না,,,
তানহার বাবা মা সেলিমের কাছ থেকে তানহার লাশ'টা নিয়ে শুইয়ে দেয়,,,,সেলিম মূর্তির মতো তানহার লাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।সেলিমের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্চে তার প্রিয় মানুষটা কিছুক্ষণ আগেই তাকে ছেড়ে চলে গেছে।একা করে গেছে সারাজীবনের জন্যে।এখন কী নিয়ে বাচবে সেলিম?
সেলিম তানহা কে হাইওয়ের পাশে সেই গহীন জংগলে কবর দেয়।তানহার বাবা মা এটা নিয়ে অনেক আপত্তি করে।
কিন্ত সেলিম তার ভালোবাসার মানুষের শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করে।
----------------------------------------
তানহার মৃত্যুর পর সেলিমেএ জীবনে ভবঘুরে হয়ে যায়।
তার এক বছর পরেই সেলিমের চাকরি হয়।পুলিশের চাকরি।সেলিম চাকরি তে জয়েন করার পরেই রাত জেগে রাস্তায় রাস্তায় টহল দেয়।তানহা কে ধর্ষণ করা সেই ৫ মাতাল ছেলে গুলাকে ও সেলিম খুজতে শুরু করে কিন্তু খবর নিয়ে জানতে পারে তাদের পাচ জনেই আত্নহত্যা করে মারা যায়।তানহার মা বাবা ও আত্নহত্যা করে।।এই সব কিছু কেমন যেন রহস্যময় লাগে সবার কাছে,সেলিমের কাছে ও।
---------------------------------
১০ বছর আগের বিষাক্ত স্মৃতি গুলো এতোদিন তানহা নিজের মধ্যে রেখে মুক্তির জন্যে অপেক্ষা করছে,,,,
তানহার চাচা "আকবার আলির" মুখে সব শুনে সেলিম মাটিতে বসে ডুকরে কেদে উঠে"আমার তানহা এতো'টা কষ্ট সহ্য করেছে,
কেনো আমি সেদিন তানহার কাছে ছিলাম না"সেলিম তানহা কে জড়িয়ে ধরতে যেয়েও ধরতে পারে না।তানহা এখন একটা ছায়া শুধু,,।যাকে স্পর্শ করা যায় না  শুধু অনুভব করা ছাড়া।
ঃ সেলিম তানহা এখন আর আগের মতো রক্তে মাংসে গড়া কোনো মানুষ না।
 তুমি তো জানো আমি বেচে থাকতে কালো যাদু চর্চা করেছিলাম,,,এখনো করছি,,।আমার মৃত্যু ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়,,কিন্তু শরীরের মৃত্যু হলেও আত্মার মৃত্যু হয় না,,,কালো যাদুর মাধ্যমে মৃত্যুর পর আমি আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসি,,আর এখন তানহাকে ও এই পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে চাই,,,এজন্যেই তানহা কে স্বপ্নে বলেছিলাম তানহার কবর টা যেন এই জংগলে দেওয়া হয়।
মৃত্যুর আগেও আমি এই জংগলে বসেই কালো যাদু চর্চা  করতাম।তবে আমার ক্ষমতা তখন ছিলো না তাই তানহা কে আমি সেদিন সেই অসভ্যদের হাত থেকে বাচাতে পারি নাই।
আমি জানি তুমি তানহা কে এখনো অনেক ভালোবাসো,,তাই তো এখনো অবধি বিয়ে করো নাই,,কখনো করবেও না।আমি চাই তোমাদের অতৃপ্ত জীবন আবার তৃপ্ত হোক,,।তাই আমার ২০জন অবিবাহিত পুরুষ মানুষের জীবন দরকার ছিলো।যারা স্ব ইচ্ছায় তানহার জন্যে তাদের জীবন উৎসর্গ করবে।
সেলিম আকবর আলীর পা জড়িয়ে ধরে বললো,,
ঃ-চাচা তানহা কে ফিরিয়ে আনার আর কী কোনো উপায় নাই নিষ্পাপ মানুষ গুলাকে হত্যা করা ছাড়া,,,
ঃ-না সেলিম আর কোনো উপায় নাই।আর একটা মাত্র প্রাণ দরকার।তাহলে তানহা মানুষ রুপে আবারো ফিরে আসবে। তোমার বন্ধুর জীবন তোমাকে ত্যাগ দিতে হবে তানহার জন্যে,,,
ঃ-না চাচা না,,,প্লীজ চাচা আমি আপনার পায়ে পরছি,আপনি অন্য কোনো উপায় খুজে বের করুন।
"সেলিম তুমি আমাকে ভালোবাসো না,তুমি চাও না আমি তোমার কাছে আবারো ফিরে আসি" বললো তানহা।
ঃ-চাই।আমি ভীষণভাবে চাই তুমি ফিরে আসো।কিন্ত আমি জাহেদ কে হারাতে চাই না।ওর তো কোনো দোষ নাই।
তানহা কিছু বলতে যাবে তখনি জাহেদ বলে উঠলো "আমার নাম সালাউদ্দিন, আমি আপনার দাসত্ব করতে প্রস্তুত মালকিন,আমি আপনার জন্যে নিজের জীবন স্ব-ইচ্ছায় উৎসর্গ করতে প্রস্তুত"
জাহেদের কথায় সেলিম চমকে জাহেদের দিকে তাকায়,,জাহেদের শরীরেও সাদা কাপড় পরানো এখন,,,।
ঃ-জাহেদ তুই কী বলছিস এসব,তুই এখন স্ব জ্ঞানে নাই,,,।
ঃ-আমি  নিজ জ্ঞানেই আছি বন্ধু,,আমি সব কিছু শুনেছি,সব কিছু জানি,,ভালোবাসা তো অনেক দেখেছি কিন্তু তোদের দুজনের মতো ভালাবাসা এই প্রথম দেখলাম।তোদের দুজনের জন্যে আমি হাসি মুখে জীবন দিতে রাজি দোস্ত,,,,।
ঃ-না জাহেদ আমি কাউকে হারাতে চাই না আর,,।
ঃ-সেলিম এই প্রথম আমার একটা ভালো কাজ করার সুযোগ হয়েছে এই সুযোগ টা আমার থেকে ছিনিয়ে নিস না বন্ধু।
সেলিম কিছু বলতে যাবে তখনি জাহেদ, তানহা কে বলে আমার রিয়াল নাম সালাউদ্দিন। ভাবি আপনি যা চান করতে পারেন আমি আপনাদের জন্যে সব কিছু করতে প্রস্তুত,,,,
তানহার চোখ দিয়েও অনবরত পানি পড়ছে,,নিজের কথা ভেবে কতো গুলা নিষ্পাপ প্রান কে হত্যা করেছে তানহা,,,।
তানহা কে চুপ করে থাকতে দেখে জাহেদ আবারো বলে,আমার এই জীবন নিয়ে বেচে থাকা বৃথা।জীবনে অন্যায় অনেক করেছি,এই প্রথম ভালো কিছু করার সুযোগ পাচ্ছি,,ভাবি দেরি না করে যা করার করেন।
তানহা কী করবে বুঝতে পারলো না,এতক্ষণ তানহা জাহেদকে মেরে ফেলার জন্যে উঠে পরে লেগেছিলো আর এখন তানহা কিছুতেও জাহেদের ক্ষতি করতে চাচ্ছে না,,,।তানহা সেলিমের দিকে তাকিয়ে আছে,,,সেলিম ইশারায় তানহা কে অনুরোধ করে জাহেদের কোনো ক্ষতি না করতে আর তখনি জাহেদ পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করে নিজের কপালে ঠেকিয়ে বলে" মাফ করে দিস দোস্ত আমি শুধু তোদের আবারও এক সাথে দেখতে চাই,মালকিন আমি আপনার জন্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেলাম" কথা গুলা বলেই জাহেদ ট্রিগারে চাপ দেয়,,,সেলিম দৌড়ে জাহেদ কে ধরে ফেলে,,
ঃ-জাহেদ চোখ খোল তুই।আমি তোকে হারাতে চাই না দোস্ত।তানহা জাহেদ কেনো কথা বলছে না,প্লীজ ওকে ফিরিয়ে দাও,,,।
তানহা সেলিম কে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা খুজে পায় না।
আকবর আলী সেলিমের কাছ থেকে জাহেদের লাশ টা নিয়ে লাশের গায়ে কী সব পানি ছিটিয়ে দিলো,,তার কিছুক্ষণ পরেই একটা সাদা ধোয়ার মতো অবয়ব জাহেদের দেহ থেকে উঠে দৃশ্যয়মান হলো, আকবর আলী জোরে জোরে কি সব পড়তে লাগলো,,তখনি রুমের মধ্যে সাদা কাপড় পড়া অনেক গুলা আত্মা প্রবেশ করলো,,,এখানে ফয়সাল আবির চৌধুরী,রিহাদ,জাহেদ আরো অনেকের আত্মা আছে।
আকবর আলী সব আত্মাদের বললো "আজ তোমাদের ও মুক্তি হয়ে যাবে,ফয়সাল তুমি লুকিয়ে সেলিম কে অনেক বার সাহায্য করেছো,এই প্রাসাদে প্রবেশ করতে,তাই তোমার আত্মাকে সবার আগে মুক্তি দিলাম"
আকবর আলীর কথার সাথে সাথে ফয়সাল অদৃশ্য হয়ে গেলো এরপর এক এক করে ১৯ টা আত্মা অদৃশ্য হয়ে গেলো,,শেষে জাহেদের আত্মা সেলিম আর তানহার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বিদায় নিলো,!
আকবর আলী তানহা কে একটা পাত্রে রাখা কি সব পান করতে বলে,তারপর তানহার লাশ'টা বের করে তানহার সামনে রাখে,,
 তানহা একটা ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে লাশের ভিতর প্রবেশ করে
"আজ থেকে তানহা পরিপূর্ণ মানুষ তবে তানহার একটা অত্যাধিক ক্ষমতা থাকবে,তানহা আশেপাশে কোনো অন্যায় হলে,জানতে পারবে,আর তখন তানহা আর স্বাভাবিক থাকতে পারবে না,মাঝে মাঝে তানহা নিজে নিজে কথা বলবে,এমন আরো অস্বাভাবিক কাজ তানহা করতে পারে।
তাই তানহা কে সব সময় চোখে চোখ রাখতে হবে তোমার,তোমার কাছাকাছি থাকলে তানহা সব রকম অস্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত থাকবে।
সেলিম আকবর আলীর পা ছুয়ে সালাম করে বললো" আর কখনো আমার তানহা কে তিল পরিমাণ কষ্ট আমি পেতে দিবো না,দোয়া করবেন চাচাজান আমাদের জন্যে"
ঃআমি জানি সেলিম,তোমরা অনেক সুখী হও,আমার দোয়া সব সময় তোমাদের সাথে,এখন এই প্রাসাদ থেকে দুজনে বেরিয়ে পরো,সব আত্মাদের মুক্তি হলেও আমার মুক্তি নেই।আমি যুগ যুগ এই জংগলেই থাকবো"
সেলিম ও তানহা আকবর আলী কে বিদায় জানিয়ে প্রাসাদ থেকে বের হয়ে আসে,,তারা বের হতেই প্রাসাদ'টা প্রচন্ড জোরে কেপে উঠে,তারপর নিমিষেই অদৃশ্য হয়ে যায়।
সেলিম শক্ত করে তানহার হাত ধরে রাখলো,,জংগলের বাইরেই গাড়ি রাখা আছে তারপর গাড়িতে উঠে দুজনে আধুরা স্বপ্ন পূরনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো,,,সেলিমের মনে আজ অনেক বছর পর আবারও সেই আগের ভালো লাগাটা কাজ করছে।১০ বছর পর হলেও তাদের ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেয়েছে।আর কখনো তানহা'কে চোখের আড়াল করবে না সেলিম।
আপনারা ও দোয়া করবেন তাদের জন্যে।শুধু তাদের জন্যে না তাদের মতো,সত্যিকার করে যারা ভালোবাসে সবার ভালোবাসা যেন পূর্ণতা পায়❤️
(সমাপ্ত)

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.