ভৌতিক গল্প - অদ্ভুত আংটি
পর্ব: ৫
মহাকাশ যানে ওদের তিনজনের মধ্যে তেমন কোনো কথাই হচ্ছিল না।শুধু মিম ভাবছিল, কিভাবে বাচাবে তার ধরনীকে? কিভাবে লড়বে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে?
ওর সামনে তো অনেক বড় যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। ও কি পারবে সেই যুদ্ধে জয়ী হতে?
এতখনে ওদের মহাকাশযানটি মিমদের বাড়ির ছাদের উপর ল্যান্ড করেছে। যানটি থেকে ওরা তিনজন নেমে পড়ল।
ইরিনা মিমকে বলল, "একটু সাবধানে থাকবে কারন শত্রুরা জেনে গেছে আংটিটা তোমার কাছেই আছে।"
মিম মাথা নাড়ালো।
ক্রোকোম্যাক্স বলল," আমরা তোমার সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ করে বিভিন্ন তথ্য দিবো এই আংটির মাধ্যমে। সিগন্যাল পেলে রিছিভ করবে। কেমন? "
মিম বলল, " আচ্ছা ঠিক আছে। "
এবার ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্স মিমকে বিদায় জানাতে জানাতে মহাকাশযানে উঠে বসল। মিমও ওদের বিদায় জানালো। ওরা চলে যাচ্ছে দেখে মিমের খুব খারাপ লাগল। এতটুকু সময় ওদের সাথে থেকে ওই ভিন গ্রহের প্রানীদের প্রতি মিমের বেশ মায়া হয়ে গিয়েছে। মিম দেখল ওদের মহাকাশযানটি আলোর ছটা হয়ে দূর আকাশে মিলিয়ে গেল।
চারপাশে পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। সূর্যটা পূব আকাশে টকটকে লাল হয়ে অর্ধোদয় হয়ে আছে। পরিবেশটা বেশ হিমশীতল। মিম ওর ঘড়ির দিকে তাকালো। এখন সকাল ৬ টা বাজে। তার মানে ওরা যা বলেছিল তাই ঠিক। পৃথিবীর এক দিনের সমান টিউবিউলের দুই দিন হয়। পৃথিবীর ৬ ঘন্টা সময়ে মিম টিউবিউলে বারো ঘন্টা পার করে এল। এই মহাবিশ্ব সত্যিই অদ্ভুত।
এসব ভাবতে ভাবতে মিম সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এল। ওর রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিল।কখন যে ও ঘুমিয়ে পড়ল নিজেই বুঝতে পারে নি। এতখনে মিমের আম্মু আব্বু বাসায় চলে এসেছে। তখন সকাল ৮ টা বেজে গিয়েছে। মিমের আম্মু ভাবল মিম এখনো ঘুমিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি মিমকে ডেকে উঠালো।
মিম আজ নাস্তা না করেই কোনোরকমে কলেজে চলে গেল। কলেজে গিয়ে শোনে তুলিকে এখনো পাওয়া যায় নি। যদিও তুলি সবসময় ওর সাথে হিংসা করত এমন কি ওর জন্য মিমের প্রানও চলে যেতে বসেছিল তবুও মেয়েটার নিখোজের খবর শুনে মিমের মনটা বেশ খারাপই লাগছিল।
কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে। আজ মিমের আব্বু ওকে নিতে আসবে না। ওনার অফিসে একটা জরুরি মিটিং রয়েছে তাই মিমকে রিক্সা করে বাড়ি যেতে হবে। দেরি না করে মিম একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ির পথ ধরল।মিমদের বাড়ির পথে একটা চৌরাস্তার মোড় বাধে। জায়গাটা সবসময় বেশ থমথমে নীরব থাকে। রিক্সাটা যখন মোড়টা ঘুরবে তখনই কতগুলো লোক রিক্সাটা সামনে থেকে ঘিরে দাড়ালো।
মিম লোকগুলোকে চেনে। এরা হচ্ছে এই শহরের বখাটে ছেলের দল। মেয়েদেরকে উত্যক্ত করাই এদের কাজ। তাছাড়া টাকার বিনিময়ে নানা অন্যায় কাজও করে থাকে এরা। আর সব থেকে বড় কথা এরা সেই লোকগুলো যাদেরকে তুলি ভাড়া করেছিলো মিমকে ডিস্টার্ব করার জন্য। আগেও দুদিন এরা মিমকে বিরক্ত করেছিল। তবে একা না পাওয়ায় তেমন একটা সুবিধা করতে পারে নি।
আজ মিমকে এভাবে রিক্সাতে একা একা আসতে দেখে ওরা সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাইছে। রিক্সাওয়ালাটা গাড়ি থামালে ওরা মিমকে গাড়ি থেকে নামতে বলল।আর রিক্সাওয়ালাকে চলে যেতে বলল। মিম রিক্সা থেকে নামছিলো না। মিম যদিও ক্যারাত পারে আর ওর সাহসও অনেক কিন্তু আজ বেশ ভয় করছিল।
ওদের ভেতর একজন তখন মিমের হাত ধরে জোর করে রিক্সা থেকে নামিয়ে দিল। আর রিক্সাওয়ালা ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল নিজের জীবন বাচাতে। মিমের তখন প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো ছেলেটার উপর। ও ওর হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো। মিমের চোখগুলো তখন রাগে লাল হয়ে উঠেছিল। ওই ছেলেগুলো তখন মিমকে ঘিরে গোল হয়ে মিমের চারপাশে ঘুরছিল আর ব্যাড সাউন্ড করছিল।
মিমের কানে কোনো শব্দই যাচ্ছিল না। ওর টার্গেট ছিল শুধু সেই ছেলেটা যে ওর হাত ধরে রিক্সা থেকে নামিয়েছিল। মিমের মনে হচ্ছিল এক থাপ্পড়ে যদি ওই ছেলাটার ৩২ টা দাঁতই ফেলে দিতে পারত তবে ওর খুব শান্তি লাগত।
মিমকে এভাবে রাগি লুকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওই ছেলেটা বলল," এই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো হা? মনে হচ্ছে আমাকে আস্ত গিলে খাবি। খুব রাগ না তোর? দাড়া তোর রাগ ভাঙাচ্ছি। "
এটা বলেই ছেলেটা মিমের দিকে হাত বাড়াতে লাগল। এদিকে মিমের হাত রাগে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ছেলেটা মিমকে টাচ করার আগেই মিম জোরে ওর গেলে একটা ঘুষি বসিয়ে দিল। আর ছেলেটা সাথে সাথে মাটিতে ধপাস করে পড়ে গেল। পুরো ঘটনাটা ঘটছিল স্লো মোশনে।
ছেলেটার এই অবস্হা দেখে বাকিরাও আগের অবস্হান থেকে দু পা পিছিয়ে গেল। মাটিতে পড়া ছেলেটা এবার টলতে টলতে উঠে বসল। চারপাশের সবকিছু ঝাপসা লাগছে ওর কাছে। উঠে বসার সাথে সাথে ছেলেটার মুখ দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়তে লাগল। ছেলেটা এবার হাত দিয়ে মুখের ভেতর থেকে বের করে আনল ভেঙে যাওয়া একটা দাত। এটা দেখে বাকি ছেলেগুলোর ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছিল।ভয় মিশ্রিত চোখে একবার নিচে বসা ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছিল আর একবার মিমের দিকে।
এতখনে মিমের রাগ কিছুটা কমেছে। ও দেখল নিচে বসা ছেলেটা এর মধ্যেই ওর ভেঙে যাওয়া পাঁচটা দাঁত মুখ থেকে বের করে ফেলেছে। মিমের বুঝতে বাকি নেই যে ছেলেটার মুখের ৩২ টা দাঁতই ভেঙে গিয়েছে। কারন এটাই ও মনে মনে চেয়েছিল রাগের বশে।
বাকি ছেলেগুলোর দিকে মিম তাকানোর সাথে সাথে ওরা সেখান থেকে ভয়ে দৌড়ে পালালো। মিমের এবার ছেলেটার এমন করুন অবস্হা দেখে বেশ দয়া হল। ও ছেলেটাকে এভাবে ফেলে চলে না গিয়ে একটা রিক্সা থামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল। হাসপাতালে ওকে ভর্তি করে মিম বাড়ির পথ ধরল।
এদিকে মিমের আম্মু ওর জন্য খুব টেনশন করছে। এতখন হয়ে গেল তাও ও বাড়িতে না ফেরায়। মিম বাড়িতে ফিরলে ওর আম্মু জিজ্ঞাসা করল এত দেরি কেনো হয়েছে। মিম বলল প্রাকটিক্যাল ক্লাস ছিল। আর কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেল।
ফ্রেশ হয়ে লান্স করে নিজের রুমে গিয়ে বসল। তখনই ওর মনে পড়ল আংটিটার কথা। আরে শত্রুর সামনে থাকাতেও আংটিটা থেকে আলো বের হল না কেনো! তুলি তো ওর শত্রু। ওর সামনে সেদিন যখন গিয়েছিল তখন আংটিটা থেকে আলো বের হচ্ছিল। কিন্তু আজ এই ছেলেগুলোর সামনে থাকতেও কেনো আলো বের হল না? এরাও তো ওর শত্রুই ছিল। এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য মিম ইরিনাদের কাছে সিগন্যাল পাঠাতে যাবে ঠিক তখনই ও দেখল ওর রুমের দরজাটা আটকিয়ে তার সামনে তুলি দাড়িয়ে আছে।
মিম বেশ অবাক হল তুলিকে তো খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে ও এখানে হুট করে কোথা থেকে উদয় হল। আর কেনোই বা এসেছে ওর কাছে।
মিম এসব ভাবছে অন্যমনস্ক হয়ে। এবার ও খেয়াল করল তুলি ওর দিকে রক্ত চক্ষু মেলে তাকিয়ে আছে। ওর চোখদুটো অসম্ভব ভয়ঙ্কর লাগছে। এবার ওর পুরো শরীরটাই আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে লাগল।
ওর মুখটা উজ্জ্বল ফর্সা থেকে কালো একেবারে কুচকুচে হয়ে গেল। ওর সুন্দর পোষাকটা আস্তে আস্তে কালো লম্বা মাথায় টুপিওয়ালা পোশাকে পরিনত হল। নখগুলো লাল আর অনেক বড় বড়। পায়ের পাতা পর্যন্ত কালো পোষাকটা ছিল। তার পরেও ওর পায়ের আঙ্গুল গুলো কিছুটা দেখা যাচ্ছিল। সেগুলো অনেক ধারালো, বড় বড় আর লাল রঙের। ওর এক হাতে বড় একটা লাঠির মত কিছু রয়েছে যার নিচের প্রান্ত মাটিতে দাড়িয়ে আছে আর উপরের প্রান্ত ওর কাধ বরাবর। সেই লাঠির উপরের প্রান্তে একটা ড্রাগনের মাথার খুলি।
তুলিকে এই রুপে বেশ ভয়ঙ্কর লাগছে। কালো মুখের উপর লাল চোখ আর সাদা দুটো দাঁত মুখের দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে আছে। ওকে একেবারে ডাকিনীরমতো লাগছে। মিম অবশ্য ডাকিনী কখনো দেখে নি। তবে বইএ পড়েছে ডাকিনীর রুপের বর্ননা। যার সাথে তুলির রুপেরও কিছু মিলে গিয়েছে আজ।
এবার মিমের মিমের চোখ ওর আংটির উপর পড়ল। এখন ওর আংটি থেকে আলোর ছটা বের হচ্ছে। মিম বুঝল তুলি ওর শত্রু তাই আংটি থেকে আলো বের হচ্ছে। কিন্তু তুলির এমন রুপ হবার কারন কি তা বুঝতে পারল না। তবে ওর সামনে যে আছে সে যে কোনো মানুষ নয় তা মিম ভালোভাবেই বুঝে গেছে। কিন্তু ও এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
এদিকে তুলিও আক্রমনাত্বক হয়ে উঠল। ও মিমের দিকে এগিয়ে আসছিল আর মিমের আংটিটা থেকে আলো তীব্রভাবে বের হচ্ছিল।
মিম এবার বলল, " তুলি এমন কেনো করছো? আর তোমার চেহারাই বা এমন ভয়ঙ্কর হলো কিভাবে? "
এবার কালো চেহারার তুলি জোরে চিৎকার করতে করতে বলল, " হা হা হা হা তুলি? কাকে তুলি বলছিস তুই? আমি কোনো তুলি নই। আমি হলাম 'মেরাসমাস' গ্রহের রানী, এই মহাবিশ্বের ত্রাস, ডার্ক এলিয়েনদের গডফাদার, ডার্ক কুইন " ডার্কিনী তেলছা। "
এটা বলেই সে ভয়ঙ্কর ভাবে একটা হাসি দিল।
মিম তো ইরিনাদের থেকে এই ডার্ক কুইনের শক্তি সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছিল। এত শক্তিশালী একটা ডিভিলের সামনে দাড়িয়ে আছে ভাবতেই মিমের গলাটা শুকিয়ে আসছিল ভয়ে।
কিন্তু পরক্ষনেই ওর মনে আত্ন বিশ্বাস জন্মালো। ওর কাছেও শক্তি আছে। এই ' ইউনিভার্স রিংটাই' ওর শক্তি। এই আংটির শুভ শক্তির কাছে ডার্ক কুইনের অশুভ শক্তি কিছুতেই টিকবে না। মিম এসব ভাবছিল আর এদিকে ডার্ক কুইনও ওর কাছাকাছি চলে এসেছে।
ডার্ক কুইন ওকে আঘাত করার আগেই মিম ওকে আঘাত করে বসল। ও মনে মনে ডার্ক কুইনকে ধ্বংস করার কথা ভাবছিল। আর মিম জানে ও মনে মনে যা ভেবে কাজ করে ঠিক তাই হয়।
কিন্তু মিম তো অবাক। ডার্ক কুইন ওর আঘাতে ধ্বংস হয় নি। মিমের অবাক হওয়া দেখে ডার্ক কুইন ভয়ঙ্কর একটা হাসি দিলো। একটা বিশ্ব জয়ের হাসি।
কিন্তু মিম তো অবাক। ডার্ক কুইন ওর আঘাতে ধ্বংস হয় নি। মিমের অবাক হওয়া দেখে ডার্ক কুইন ভয়ঙ্কর একটা হাসি দিলো। একটা বিশ্ব জয়ের হাসি।
এদিকে মিম ওকে আঘাত করছে আর পেছনে হাটছে। ডার্ক কুইন ওর হাতে থাকা লাঠি থেকে আলোর মতো কি একটা বের করছে যেটা মিমের দেওয়া আঘাতকে নিষ্ক্রয় করে দিচ্ছে। ডার্ক কুইনও ওর দিকে এগিয়ে আসছিল। পেছনে সরতে সরতে মিমের পিঠ একেবারে দেয়ালে এসে ঠেকেছে। আর ডার্ক কুইনও ওর একেবারে কাছে চলে এসেছে।
ডার্ক কুইনের এক হাতে লাঠি ছিল আর এক হাত বাড়িয়ে দিল মিমের দিকে। এবার মিম আঘাত করতে গিয়ে টার্গেট মিস করে ওর হাতের লাঠিটাতে আঘাত করল। সাথে সাথে ডার্ক কুইন দুই তিন হাত পেছনে মাটিতে গিয়ে পড়ল।
মিম তো অবাক এতখন ওকে এত আঘাত করেও কিছু হল না আর এখন সামান্য লাঠিটাতে আঘাত করেই তাকে কুপোকাত করে দিল। মনে মনে মিমের এবার আত্মবিশ্বাস ফিরে এল ।
এদিকে ডার্ক কুইনও মাটি থেকে উঠে পড়েছে। ক্রোধে ওর অগ্নিবর্ণ চোখদুটো যেন কোটর থেকে বাইরে বের হয়ে আসতে চাইছে। ওর মাথাটাকেও এদিক ওদিক ঘুরাচ্ছে। মনে হচ্ছে মিমকে মারার নেশায় মত্ত হয়ে গিয়েছে।
এবার ও মিমের দিকে এগিয়ে আসতেই মিম ওর হাতের লাঠিটা শক্ত করে ধরে ফেলল। কারন মিম বুঝে গিয়েছে ডার্ক কুইনের দূর্বলতার জায়গা কোনটা। এদিকে মিম যত শক্ত করে লাঠিটা মুঠোর ভেতর ধরছে ডার্ক কুইনের শ্বাস প্রশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে। ও এক হাত দিয়ে নিজের গলা ধরে আছে এমন ভাবে যেন কেউ ওর গলা টিপে ধরেছে যার ফলে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে আর ও তার হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আর এক হাত দিয়ে লাঠিটা মিমের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে ডার্ক কুইনের যাই যাই অবস্হা। এমন সময় ওর আম্মু দরজায় নক করল। আর মিমকে দরজাটা খুলতে বলল। আম্মুর কথা শুনে মিম দরজার দিকে তাকিয়ে পড়েছে। আর ওর হাতটাও একটু ঢিল হয়ে গিয়েছে। এই সুযোগে ডার্ক কুইন মিমের হাত থেকে এক ঝটকায় লাঠিটা ছাড়িয়ে নিয়ে সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল। মিম দরজা থেকে চোখ সামনে নিয়েই দেখে ডার্ক কুইন তার সামনে নেই, উধাও হয়ে গিয়েছে।
মিম মনে মনে ভাবল আজ আম্মু না আসলে এই ডিভিলটাকে শেষ আজই করে ফেলতাম। আবার ওর আম্মুর ডাকে ওর হুস ফিরলো। ও তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। ওর আম্মু দেখে এই শীতেও মিম ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে। ডার্ক কুইনকে দেখে ভয়ে আর ওর সাথে যুদ্ধ করেই এই শীতেও ঘেমে গিয়েছে মিম।
মিমের আম্মু বলল," কি রে তুই এভাবে ঘেমে একাকার হয়েছিস কেনো? "
মিম কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিছুতো একটা বানিয়ে বলতেই হয়। গরম কাল হলে না হয় কথা ছিল। ঘামাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই শীতে এটা তো অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আর তাছাড়া ওর আম্মুকে তো আর বলা যাবে না যে ও এলিয়েনদের সাথে যুদ্ধ করছিল। এটা বললে ওকে নির্ঘাত পাগল ছাড়া কিছুই ভাববে না। কি না আবার পাবনাতেই সিট বুকিং করে।
মিমের আম্মু মিমকে চুপ থাকতে দেখে খুবই বিচলিত হয়ে পড়লেন।
তিনি বললেন, "কি রে কি ভাবছিস এত? ভয় টয় পেলি না কি? "
মিম বলল," হ্যা আম্মু ওইটাই পেয়েছি। আসলে আমি এখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর খুবই ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন দেখেছি যার কারনে এমন ঘেমে গিয়েছি।"
মিমের আম্মু বলল," ও। স্বপ্নটা খুবই ভয়ঙ্কর ছিল কি? "
মিম বলল, " হ্যা আম্মু খুবই ভয়ঙ্কর। "
মিমের আম্মু বলল," সে যাই হোক স্বপ্ন তো স্বপ্নই। তোকে যা বলতে এসেছিলাম তাই তো বলা হল না। শোন্ কালকে তোর মামাতো বোন বর্ষার বিয়ে। একটু তাড়াতাড়িই হয়ে গেল। বরপক্ষের একটু তাড়া আছে যার কারনে এত দ্রুত বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে। তোর মামা আজকেই আমাদের চলে যেতে বলেছেন সেখানে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। বেরোতে হবে। "
মিম তো মহা খুশি। বিয়ে বলে কথা। সে যার বিয়ে ই হোক না কেনো। বিয়েতো একটা আলাদা মজার বিষয়।খুশির চোটে মিম তো এলিয়েনের কথাটাই ভুলে গেল। ও যে ইরিনাদের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল তাই ভুলে গেল।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখে ওর আম্মু আব্বুও রেডি হয়ে গিয়েছি।বাসা থেকে বের হয়ে বাসার মেইন গেটটা বন্ধ করার সাথে সাথে ডার্ক কুইন ওদের ঘরের মধ্যে আবির্ভূত হল। ওর মুখে ভয়ঙ্কর একটা হাসি।
জোরে জোরে চিৎকার করতে করতে ডার্ক কুইন বলল," আজ বেচে গেলি কিন্তু আমিও দেখব কত দিন বাচিস তুই আমারর হাত থেকে। আংটিতো আমি পাবোই। ' ইউনিভার্স রিং' আমারই হবে, আমার। হা হা হা। " ভয়ঙ্কর একটা হাসি দিতে দিতে সে অদৃস্য হয়ে গেল।
এদিকে মিমরা ওর মামা বাড়ি পৌছে গিয়েছে। সারা বাড়ি ভর্তি আত্নীয় স্বজন। বাড়িটার ডেকোরেশনের কাজ এখনো চলছে। মিমরা বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই মিমের মামা এগিয়ে এলেন। ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে বিশ্রামের ব্যবস্হা করলেন। মিমের আবার বিশ্রাম। এত লোকজন দেখে মিমের ক্লান্তি সব দূর হয়ে গিয়েছে।
ওর খালাতো মামাতো সব ভাই বোনরাই চলে এসেছে বিয়েতে।ওর দুইটা আন্টি আর দুইটা মামা। বড় আন্টির দুই মেয়ে বর্নী আর অবনী। ছোট আন্টির এক ছেলে স্বচ্ছ আর এক মেয়ে তন্দ্রা।ছোট মামার এক ছেলে রিয়ান আর দুই মেয়ে নাইনা আর নাদিয়া। বড় মামার দুই মেয়ে বর্ষা আর অহনা। এক কথায় মিমের খালাতো মামাতো ভাই বোন মিলে একটা ক্রিকেট টিমের সমান। আর বড় মামার বড় মেয়ে বর্ষারই কাল বিয়ে।
সবার সাথেই মিমের কথাবার্তা হল। অনেকদিন পর সবাই এভাবে একসাথে হল। গল্প করতে করতে রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে মিমের আম্মু, আন্টি, মামাদের একটা আড্ডা আর এদিকে মিমের সব ভাই বোনদের একটা আড্ডা।
রাত বারোটায় ঘড়ির টং টং আওয়াজে সবার হুস ফিরলো। তাড়াতাড়ি আড্ডা থেকে উঠে সবাই যার যার মতো ঘুমাতে গেল।
"মিম একটা অচেনা জায়গায়। চারিদিকে গ্রহ উপগ্রহ। অনেক দূরে একটা লাল গ্রহ দেখা যাচ্ছে। নিশ্চয় মঙ্গল গ্রহ হবে। মিম আরো একটু ভালো করে দেখার চেষ্টা করল। মঙ্গলের থেকে আরো অনেকখানি দূরে একটা নীলমতো গ্রহ। এটা নিশ্চয় পৃথিবী হবে। মিম এসব ভাবছিল। এমন সময় পেছন থেকে কারো আওয়াজ শুনলো। তাড়িয়ে দেখে ডার্ক কুইন। ডার্ক কুইন হাসছে আর বলছে, " অবাক হয়েছিস না? হবারই তো কথা।ভেবেছিলি মরে যাবো? কিন্তু মরি নি। বেচে আছি আমি। বেচে আছি। হা হা হা। " এটা বলে ডার্ক কুইন এমন একটা গগনবিদারী হাসি দিল যে হাসির শব্দ শুনে চারপাশের গ্রহ উপগ্রহগুলোও কেপে উঠল। "
এমন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে মিম ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল। ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে মিম এক গ্লাস পানি পান করল। এখন একটু ভালো লাগলো ওর। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়ল ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সের কথা। ওদের সাথেতো কথা বলার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিয়ের আনন্দে ভুলে গিয়েছিল।
মিম আস্তে আস্তে ওর মামাদের বাড়ির ছাদে চলে আসল। এখন সকাল ৫ টা বাজে। তাই ঘুম থেকে কেউ এখনো উঠে নি। ছাদে এসে তাড়াতাড়ি আংটিটা সামনে ধরে তার দিকে তাকালো আর মনে মনে ইরিনাদের কাছে সিগন্যাল পাঠানোর ইচ্ছে করল। সাথে সাথে আংটিটা থেকে আলোর রশ্মী বের হতে লাগল। আলোর রশ্মীটা কয়েকবার জ্বলে নিভে একসময় স্থির হয়ে গেল।এবার আংটিটা থেকে আলোর রশ্মী ছাদের উপরে এক জায়গায় পড়ল। সাথে সাথে সেখানে আলোর দ্বারা তৈরি একটা দেহের কাঠামো তৈরি হতে শুরু করল। সেই দেহটির চেহারা যখন স্পষ্ট হল মিম দেখল সেটা ইরিনা।
ইরিনা মিমকে দেখেই বলল," হাই কেমন আছো মিম? "
মিম বলল," কেমন আর থাকবো? ওই ডিভিল কুইনটাতো আমার লাইফটাই শেষ করে দিচ্ছিল আজকে। "
এই বলে মিম ইরিনাকে আজকের সব ঘটনা খুলে বলল কিভাবে তুলি ডিভিল হয়ে গেল আর ওর উপর অ্যাটাক করল। আর এটাও জানতে চাইলো যে ওই শত্রু ছেলেগুলোর সামনে গেলে আলো বের হল না কিন্তু ডিভিল কুইনের সামনে গেলে আলো বের হচ্ছিলো কেনো আংটিটা থেকে।
ইরিনা মিমের কথা শুনে খুবই বিচলিত হয়ে গেল।
ও মিমকে বলল, " কি বলছো এসব? এই তুলিটা আবার কে? ওকে তুমি চেনোই বা কিভাবে? "
মিম বলল," ও তো আমাদের কলেজেই ভর্তি হয়েছিলো আমাদের সাথেই। আর তুমি তো জানেন না ও আমার সাথে সবসময় সয়তানি করত।"
এবার মিম তুলির ব্যাপারে ইরিনাকে সবকিছু বলল।
ইরিনা বলল, " তার মানে কি ডিভিল কুইন আগে থেকেই জানতো যে আংটিটা তোমাকেই দেওয়া হবে? কিন্তু কিভাবে? এই ব্যাপারটাতো শুধু আমাদের টিউবিউল গ্রহের কতজন বিশ্বস্ত লোকই জানে তাছাড়া আর কেউ না। ভবিষ্যৎদর্শী যন্ত্রের মাধ্যমেই আমরা জেনেছিলাম। এটা তো বাইরে যাবার কথা না। তাহলে ডিভিল কুইন কেনো আংটিটা পাওয়ার আগেই তোমার সাথে শত্রুতা শুরু করে? না কি সে জেনে গিয়েছিলো কথাটা? কিন্তু সেই বিশ্বাসঘাতক কে যে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এই তথ্যটা ডিভিল কুইনকে দিয়ে দিলো? "
মিম ইরিনার মুখে এত প্রশ্ন শুনে বলল, " এতসব প্রশ্নের উত্তর তোমরাই জানো না আর আমি কি করে জানবো? "
ইরিনা বলল, " আচ্ছা ঠিক আছে আমরাই উত্তর বের করবো। আর হ্যা তুমি বলছিলে না ওই শত্রু ছেলেগুলোর কাছে গেলেও তোমার আংটি থেকে আলো বের হয় নি কিন্তু তোমার শত্রু তুলি বা ডিভিল কুইনের সামনে গেলে আলো কেনো বের হচ্ছে? এর কারন তোমার আংটিটা তোমাকে তখনই জানান দিবে যে তুমি তোমার শত্রুর সামনে আছো যখন তুমি ভিন গ্রহের কোনো শত্রুর সামনে পড়বে। কিন্তু তোমার পৃথিবীর কোনো মানুষ শত্রু যদি তোমার সামনে আসে তবে তোমার আংটি থেকে কোনো আলো বের হবে না। বুঝেছো?"
মিম বলল, "হুমম বুঝেছি।
এদিকে সকাল হয়ে যাচ্ছিলো। মিম ইরিনাকে বিদায় জানিয়ে ছাদে একটু ঘোরাফেরা করছিল। কি সুন্দর পরিবেশ সকালের! সূর্যের হালকা লাল কমলা আভাটা পূর্ব আকাশ থেকে সবেমাত্র উঁকি দিলো। পাখিরা কিচির মিচির করে সকলকে জানান দিচ্ছে এই শিশির ভেজা সকালের শুভাগমন।তাছাড়া ছাদের উপরের টবগুলোতে ফুটে থাকা শিশিরভেজা ফুলগুলো মিমের মনকেও যেন ছুয়ে দিচ্ছে। মিম অপলক চারিদিকের পরিবেশটা দেখছে।
এদিকে নিচ থেকে ডাক পড়ল। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। সবাই এই শীতেও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে। আজই তো বিয়ে।মিম নিচে নেমে এল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবাই যার যার কাজে নেমে পড়ল। ভাইয়াদের কারো কাজ পড়েছে মেহমানদের খাবার পরিবেশন, কারো কাজ বরযাত্রীদের ঠিকমত আপ্যায়ন করা,কারো কাজ খাবার দাবার ঠিকমতো সার্ভ হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখা, আর বোনগুলোর মধ্যে কেউ বেছে নিয়েছে বরকে কতভাবে জ্বালাতন করা যায় আর কিভাবে বরের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যায় সেই কাজ।
মিম কোনো ঝামেলা পছন্দ করে না। বিশেষকরে ছেলেদের সাথে। তাই বরযাত্রীদের কোনোরকম কাজই মিম নিলো না । ওর কাজ পড়েছে বাড়ির দেখাশোনা করা। বিয়ে বাড়িতে সব জিনিস ঠিকমতো গুছিয়ে রাখা। এক কথায় নজরদারী।
সবাই খুব সুন্দর করে সেজেছে আজ। মিম একটা সুন্দর জমকালো লেহেঙ্গা পরেছে।সাথে হাত ভর্তি চুরি, লম্বা চুলগুলো খোলা, কানে বড়সড় একটা দুল,হালকা মেকাপ আর ঠোটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক। যদিও মিম মেকআপ কুইন না তবে আজ ওর মেকআপ কুইন খালাতো বোন অবনীর চাপে পড়ে মেকআপ করতে হয়েছে। যাই হোক মিমকে সত্যিই আজ খুব সুন্দর লাগছে।
এদিকে সব গোছগাছ শেষ। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। মেহমানরা আসতে শুরু করেছে। দুপুর হতে চলল। ওরা ভাবছিল মেহমানদের আগে খাইয়ে দেবে বরযাত্রী আসার আগে। তাই করা হল। কিন্তু এক বার খাওয়ানোর পরই বরযাত্রীরা চলে আসলো। সেই সময় বাইরের সব আত্নীয়স্বজনদের খাইয়ে দেওয়া হয়েছিলো। মিমদের এখনো খাওয়া হয় নি।
এদিকে সবাই বর এসেছে বর এসেছে বলে চিল্লাচ্ছে। সব ছেলেমেয়েরা হাতে ফুলের থালা নিয়ে গেটের কাছে গেল। সবাই অধীর আগ্রহে দাড়িয়ে আছে গেটের সামনে। বর গাড়ি থেকে বের হতে পারছে না মিমের বড় ভাই বোনদের দাবি না পূরন করে । শেষে বর গাড়ি থেকে নামল। সবাই ফুল ছিটাচ্ছে। মিমও ছিটাচ্ছে। বরের সাথে সাথে একটা ছেলেও বরের গাড়ি থেকে বের হলো। ছেলেটা সেই কখন থেকে মিমের দিকে তাকাচ্ছে। মিমের এত ভিড়ের মধ্যেও খুব অস্বস্তি লাগছে। বাজে ছেলে একটা মেয়ে দেখলেই যেন তাকাতে ইচ্ছা করে। এসব ঝামেলার জন্যই মিম বরযাত্রীদের আপ্যায়নের কাজটা নেয় নি।
এদিকে অবনীটাও ওর হাত ধরে আছে।
মিম অবনীকে বলল," এই তোরা এদিকটা সামলা আমি বর্ষারে একটু নিউজটা দিয়ে আসি। "
এই বলে মিম সেখান থেকে চলে গেল। তারপর সারাবাড়ি তদারকির কাজ করছে। বাচ্চাদের থেকে সবকিছু সাবধানে রাখা, মিষ্টি সামগ্রী গুছিয়ে রাখা এসবই করছে। ওখান থেকে আসার পর অনেকখন হয়ে গেল ও আর বরযাত্রীদের সামনেই যায় নি।
এদিকে মিমের প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। ও এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে ছাদে চলে গেল। আর মিষ্টিগুলো গপাগপ গিলতে লাগল। এমন সময় পেছন থেকে কারো আওয়াজ শুনে মুখে মিষ্টিপুরা অবস্হায়ই পেছনে তাকালো। দেখে সেই ছেলেটা।
ছেলেটা মিমের অবস্হা দেখে হেসে দিলো।
তারপর বলল," তোমাকে সেই তখন একবার দেখেছিলাম আর এই এতখন পর এখন খোজ পেলাম। কোথায় ছিলে এতখন? By the way আমি রেয়ান। বরের চাচাতো ভাই। আর তুমি? "
মিমের ছেলেটার কথায় কোনো খেয়াল নেই, ওর খেয়াল ওর আংটিটার দিকে। আংটিটা থেকে হালকা আলোর রশ্মী বের হচ্ছে। যেটা আস্তে আস্তে তীব্র হয়ে উঠছে,,,,,,,
মিমের ছেলেটার কথায় কোনো খেয়াল নেই, ওর খেয়াল ওর আংটিটার দিকে। আংটিটা থেকে হালকা আলোর রশ্মী বের হচ্ছে। যেটা আস্তে আস্তে তীব্র হয়ে উঠছে।মিমের চোখ গেলো ছাদের দরজার দিকে। ও দেখল তুলি আসছে হাসতে হাসতে। এদিকে মিমের আংটিটা থেকে আলোও খুব তীব্র বের হচ্ছে। সামনের ছেলেটা আবার দেখে না ফেলে এই ভয়ে মিম ওর অপর হাত দিয়ে আংটিওয়ালা আঙ্গুলটা ধরে রাখে।
এদিকে রেয়ান ওর সাথে কথা বলেই যাচ্ছে কিন্তু মিম কোনো রিপ্লে দিচ্ছে না দেখে ও মনে মনে ভাবল, মেয়েটাকি পাগল না কি? না কি কানে কম শোনে? এত কথা বলছি তাও কোনো রিপ্লে নেই।
এদিকে তুলিও মিম আর রেয়ানের পাশে এসে দাড়ালো। এতখন মিম তুলির দিকে তাকিয়ে ছিল চোখ বড় বড় করে এবার রেয়ানও দেখল। রেয়ান তো ভাবল সে নিশ্চয় কনেপক্ষের লোক। কিন্তু মিম তো জানে সে কোন পক্ষের। তুলি মিমের দিকে একটা সয়তানি হাসি দিয়ে তাকালো। তারপর রেয়ানের দিকে তাকালো।
তুলি রেয়ানকে বলল," হাই আমি তুলি, মিমের প্রাণের বান্ধবী। "
রেয়ান বলল," ও হাই আমি রেয়ান। বরের চাচাতো ভাই। বাট এই মিমটা আবার কে? "
তুলি বলল," এ মা এতখন ছাদে দাড়িয়ে কথা বললে যার সাথে তার নামটাই জানো না? মিমের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে বলল,এটাই মিম।"
রেয়ান বলল," ও আচ্ছা তার মানে ওর নাম মিম। "
মিম তো ওদের কথা শুনছিলো। ওর ভীষণ ভয় লাগছে। ও মনে মনে ভাবছে তুলি যদি এই ছেলেটার সামনে ওর সাথে যুদ্ধ শুরু করে তবে ও তো পাল্টা আঘাত না করে পারবে না। কিন্তু তখন সবাই সব কথা জেনে যাবে। মিম তা কখনো চায় না। এই ছেলেটার সামনে কিছুতেই এসব করা যাবে না।
এমন সময় তুলি বলল," কি মিম যুদ্ধ এখন শুরু হলে কেমন হয়? "
মিমতো কথাটা শুনে চমকে গেলো।রেয়ানও চমকে গিয়েছে।
ও বলল," যুদ্ধ! তোমরা আবার কি যুদ্ধ শুরু করবে?"
এদিকে মিম দেখল তুলি আস্তে আস্তে কেমন সয়তানে পরিনত হতে যাচ্ছে।
মিম মনে মনে ভাবল, এই ছেলেটার সামনে কিছুতেই যুদ্ধ করা যাবে না। কি করবো এখন আমি? তখন ওর মনে পড়ল হাতের আংটিটার কথা। ও মনে মনে ভাবলো এই ছেলেটাকে এক থাপ্পড়ে অজ্ঞান করে দেবে। যেই ভাবা সেই কাজ। এক থাপ্পড়ে মিম ছেলেটাকে অজ্ঞান করে দিলো। বেচারা বুঝতেও পারে নি ওর এই অবস্হা করবে মিম।তারপর দৌড়ে গিয়ে ছাদের দরজাটা বন্ধ করে দিলো যাতে কেউ হুট করে ছাদে চলে না আসতে পারে।
এদিকে তুলি রাগে গজ গজ করতে করতে ডিভিল কুইনে পরিনত হলো।
তুলি বলল," কি ভেবেছিস তুই? সেদিন তোর কিছু করতে পারি নি বলে কি আজও কিছু করতে পারবো না ভেবেছিস? হা হা হা। আমাকে হারানো এত সহজ নয়। আজ মরবি তুই আমার হাতে। "
মিম দেখল ডিভিল কুইন কেমন ভয়ঙ্কর লাল চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। যেন এখনি গিলে খাবে। মিমের মনে একটু সাহস জন্মালো ডিভিল কুইনের হাতের লাঠিটা দেখে। কারন মিম জানে ডিভিল কুইনের দূর্বলতার জায়গা কোনটা।
এদিকে ডিভিল কুইনও মিমের দিকে এগিয়ে আসছিল। মিম আর কিছু না ভেবেই সরাসরি ডিভিল কুইনের হাতের লাঠিটাতে আঘাত করলো। সাথে সাথে ডিভিল কুইন খানিকটা দূরে ছাদের উপর গিয়ে পড়ল।ওর হাতের লাঠিটাও ছাদের উপর পড়ে গেলো। এটা দেখে তো মিম মহা খুশি।
আনন্দে নাচতে নাচতে খুব গর্বের সাথে মিম ডিভিল কুইনকে বলল," ডিভিল কুইন তোর দূর্বলতা আমি জেনে গিয়েছি হুমম। আমাকে ধমকাস তুই? তোর আজ আমি কি অবস্হা করি শুধু তাই দেখ,আমাকে তো চিনিস না তুই, তোর ডিভিলগিরী আজ আমি ছুটাচ্ছি দাড়া। "
এই বলে মিম ডিভিল কুইনের কাছে যেতে যেই না পা বাড়ালো ওমনি ডিভিল কুইন পড়া অবস্হা থেকে হাওয়াই ভাসার মতো ভেসে সোজা হয়ে দাড়ালো।
তারপর বলল," হা হা হা কি ভেবেছিলি তুই আমাকে ঘায়েল করা এতই সোজা ? তোর মতো শক্তির সাথে আমি বিনা শক্তিতে মরার জন্য পাঙ্গা নিতে এসেছি ? হা হা হা আমাকে মারার সাধ্য তোর নেই। মরবি তো তুই।"
ডিভিল কুইনের কথা শুনে মিম খুব ভয় পেয়ে গেলো। ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না আজ লাঠিটাতে এত জোরে আঘাত করার পরেও ওর কিছু হলো না কেনো। এদিকে ডিভিল কুইন মিমের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আর মিম ও ভয়ে ভয়ে পেছাচ্ছে।
একসময় মিম ছাদের একেবারে কিনারায় চলে এলো। আর দু পা পিছালেই নিচে পড়ে যাবে। এমন সময় মিমের হুস ফিরলো।
ও মনে মনে ভাবলো, "মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহ তার সকল সৃষ্টির উপরে মানুষকে স্হান দিয়েছেন। আর তাছাড়া আমার কাছে এত শক্তিশালী একটা আংটি রয়েছে। তারপরেও আমি কেনো এই ভিনগ্রহের এলিয়েনটার ভয় পাবো ? না না আমি কিছুতেই ওকে ভয় পাবো না। ওর ভয়ে পিছপা হবো না। লড়বো আমি ওর সাথে।"
যেই ভাবা সেই কাজ। মিম দেখল ডিভিল কুইন ওর খুব কাছে চলে এসেছে। এক হাত মিমের দিকে বাড়ানো রয়েছে। মিম আর পিছু না হটে ডিভিল কুইনের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। তুমুল আকারে মারামারি চলছে। কিন্তু কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারছে না। একবার মিম ডিভিল কুইনকে মারছে তো আর একবার ডিভিল কুইন মিমকে মারছে।
মিমের আংটির কোনো শক্তিই ডিভিল কুইনের উপর ক্রীয়া করছে না। আর ডিভিল কুইনের কালো জাদুর কোনো শক্তিই মিমের উপর ক্রীয়া করছে না। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়ছেও না।
মেয়েদের মারামারি বলে কথা। ডিভিল কুইন মারামারির এক পর্যায়ে মিমের চুলগুলো ধরে টানতে লাগলো। মিমের তো এই আইডিয়াটা এতখন মাথাতেই আসে নি। মেয়েদের কুপোকাত করার সবথেকে বড় অস্ত্রই তো চুল। মিম আর কিছু না ভেবেই ডিভিল কুইনের মাথার চুলগুলো ধরে টানতে লাগলো।
এবার ডিভিল কুইন কেমন দূর্বল হয়ে পড়ল। ও মিমের চুল ছেড়ে এক হাত দিয়ে নিজের গলা ধরে কাউকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর এক হাত দিয়ে মিমের থেকে নিজের চুলগুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
মিম তো মহা খুশি। এতক্ষনে ও ডিভিল কুইনের দূর্বল জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছে। ও আরো জোরে ডিভিল কুইনের চুলগুলো ধরে রাখলো। ডিভিল কুইনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কষ্ট পাচ্ছে ও।
এবার মিম ডিভিল কুইনকে বলল," কি রে খুব কষ্ট হচ্ছে? এতক্ষন তো তুই আমার চুল ধরে ছিলি, কই আমি তো এজন্য হেরে যায় নি। আর তোর শুধু চুলগুলো ধরাতেই তুই কুপোকাত হয়ে গেলি? বুঝি না তোর হাবভাব। সেদিন লাঠিতে আঘাত করলে তোর ব্যাথা লাগছিলো। আর আজ লাঠিতে মারলাম কোনো কাজ হলো না, কিন্তু চুলগুলো ধরতেই তোর এই অবস্হা?
তুই কি আমার সাথে লড়তে আসার আগে নিজের প্রানভোমরাটাকে একটা জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে আসিস না কি?যেমন সেদিন ওই লাঠিটাতে আর আজ নিজের চুলের ভেতর। হা হা হা"
কথাটা শুনে ডিভিল কুইন মিমের দিকে কেমন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। যা দেখে মিমের খুব হাসি পাচ্ছিলো। অবশ্য কারো সামনে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসা কোনো সৈন্যের চোখে ভয়ের আভা দেখলে যে কারোরই হাসি পায়।
এদিকে মিমের হাতদুটো একটু ঢিল হওয়াতে ডিভিল কুইন এক ঝটকায় মিমের থেকে দূরে সরে গেলো। সাথে সাথে ডিভিল কুইনের মাথা থেকে একটা ছোটখাটো মুকুট ছাদের উপর পড়ল। ডিভিল কুইন বিদ্যুৎগতিতে মুকুটটা কুড়িয়ে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
মিম তো বেশ অবাকই হলো।ও ভাবলো , তারমানে আমি ওর চুল ধরাতে নয় বরঞ্চ ওই মুকুটটা ধরাতেই কি ডিভিল কুইন হেরে গেলো ? কিন্তু কেনো? সেদিন ওই লাঠিটা আজ ওই মুকুটটা এই দুটোর সাথে ডিভিল কুইনের বাচা মরার কি সম্পর্ক? মিম কিছুই বুঝতে পারছে না। না কি মিমের ডিভিল কুইনকে উপহাস করে বলা শেষ কথাগুলোই সত্য!
চলবে..................
© bnbooks.blogspot.com