ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প - অদ্ভুত আংটি - পর্ব: ৪

ভৌতিক গল্প - অদ্ভুত আংটি
💀☠️💀☠️💀☠️
পর্ব:

মিম ওর কথার মধ্যে কেমন রহস্যের গন্ধ পেল। কিন্তু সেটা যে আসলে কি তাই বুঝতে পারলো না। আদৌ কি এই এলিয়েন গুলো ভালো কিনা মিম কিছুই বুঝতে পারছে না। তাছাড়া এরা ওকে নিয়ে যেভাবে আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে তাতে মিমের বেশ সন্দেহ হচ্ছে। কি যে আছে কপালে তা আল্লাহই জানে।
এবার ইরিনা চলে যেতে উদ্যত হতেই
মিম ওকে বলল," আচ্ছা তা না হয় বুঝলাম কিন্তু টেনেসাস যে বললেন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হবে,কিন্তু আমি তো বাড়ি থেকে এসেছিলাম রাত ১২ টায়। এতখনে ১২.৩০ বেজেছে। তো সন্ধ্যা কিভাবে হবে?
এবার ইরিনা মুচকি হেসে বলল," তুমি কি ভাবছো তুমি এখনো পৃথিবীতেই আছো? মোটেই না। তুমি আছো পৃথিবী থেকে অনেক আলোকবর্ষ দূরে টিউবিউল গ্রহে। এখানে আমাদের অন্য এক সৌরজগৎ আছে। আমাদের সৌরজগতে মোট ১২ টি গ্রহ রয়েছে। যার মধ্যে আমাদের টিউবিউল একটা। এখানে আমাদের সৌরজগতের মূল নক্ষত্র হল " তুরিন"। তোমাদের সূর্যের থেকেও আমাদের তুরিন ৫ গুন বড় নক্ষত্র।
আমাদের এই টিউবিউল গ্রহ এই তুরিনকে ঘিরে খুব দ্রুত প্রদক্ষিণ করে। এতটাই দ্রুত যে পৃথিবীর এক দিনের সমান আমাদের দুদিন হয়।
আর তাছাড়া তোমাদের পৃথিবীতে তো এখন ২০১৯ সাল আর আমাদের টিউবিউলে এখন ৪০৩৭ সাল। তোমাদের গ্রহের সভ্যতার পরে আমাদের গ্রহে সভ্যতা গড়ে উঠেছে।এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো এখন এখানে সন্ধ্যা হবার কারনটা? "
মিম বলল," ও আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু তোমাদের গ্রহে এমন রং বেরঙের মানুষ কেনো?"
ইরিনা হেসে বলল, " না না ওরা সবাই আমাদের গ্রহের মানুষ নয় ওরা অনুষ্ঠান উপলক্ষে এসেছে বিভিন্ন গ্রহ থেকে। ওই যে নীল রঙের লোকগুলো, ওরা এসেছে "টিনিয়া "গ্রহ থেকে। হলুদ গুলো এসেছে "রিম্যাক্স" গ্রহ থেকে। কমলাগুলো "নরান্ড" গ্রহ থেকে। আর তোমার জন্য সবথেকে অবাক করা বিষয় কি জানো? তোমাদের সৌরজগতের মঙ্গল গ্রহ থেকেও এখানে লোক এসেছে। ওই লাল রঙের লোকগুলোই মঙ্গলের অধিবাসী। আচ্ছা পরে কথা বলবো। তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। "
মিম তো অবাক। মঙ্গলে প্রানের অস্তিত্ব নিয়ে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা কত অনুসন্ধান চালাচ্ছে, কিন্তু সঠিকভাবে তাদের সন্ধান কেউ দিতে পারে নি। আর ও আজ নিজের চোখেই কিনা মঙ্গলের সেই প্রানীদের দেখছে। অবশ্য ওদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহের প্রানীদেরই যখন দেখছে তখন আর মঙ্গল। কিন্তু মিম মঙ্গল গ্রহ চিনে তো তাই সেখানকার লোকগুলো নিয়েই ওর বেশি আগ্রহ জাগছে।
এসব ভাবতে ভাবতে ও রেডি হয়ে গেল। এদিকে ইরিনা ওকে নিতে এলো। ও মিমকে নিয়ে একটা প্রকান্ড বড় হলরুমে প্রবেশ করল। স্টেজের ওপর মিমকে দেখেই সব লোকরা উঠে দাড়ালো। মিম দেখল হলরুমটা খুব সুন্দরকরে সাজানো। স্টেজের উপর তিনটি কারুকাজ করা চেয়ার মেঝেরটিতে বসা আছেন মহামান্য টেনেসাস আর তার ডানপাশের চেয়ারটিতে ইরিনা যেয়ে বসল। আর আমা জন্য বামপাশেরর চেয়ারটা ছিলো। আমি সেখানে গিয়ে বসলাম।
এবার টেনেসাস একটা ছোটখাটো বক্তৃতা দিলেন এই অনুষ্ঠান সম্পর্কেই। এর পর তিনি ক্রোকোম্যাক্সকে উদ্দ্যেশ্য করে কিছু বললেন নিজেদের ভাষায়। ক্রোকোম্যাক্স চলে গেলো। কিছুখন পর হাতে একটা সুন্দর কারুকাজ করা থালা নিয়ে ফিরে এল। যার উপরটা সুন্দর একখন্ড কাপড় দ্বারা ঢাকা ছিলো। সে এটা এনেই টেনেসাসের হাতে দিল। টেনেসাস সেটা হাতে নেওয়ার সাথে সাথে সবাই দাড়িয়ে পড়ল। মিমও দাড়ালো। এবার টেনেসাস কাপড়টা উঠালেন। মিম দেখলো সেই নীল পাথরের আংটিটা যেটা ও এখানে আসার পর ইরিনার কাছে দিয়ে দিয়েছিলো।
এবার টেনেসাস বললেন, " এটা সেই 'ইউনিভার্স রিং' যা এতদিন আমাদের গ্রহে অনেক সাবধানে সংরক্ষন করে আসছি আমরা। আজ সময় এসেছে আংটিটা তার প্রাপ্য লোকের হাতে তুলে দেবার। আশা করি সে এই আংটিটার সদ্ব্যবহার করবে। "
মিম কথাটা শুনে মনে মনে ভাবলো এত দিন তাদের গ্রহে সংরক্ষন করে রেখেছে মানে টা কি? ওটা তো আমার কাছে ছিলো কিছুক্ষণ আগেই ইরিনা সেটা আমার কাছ থেকে নিলো। আর টেনেসাস কি না সবার সামনে বলছে খুব সাবধানে এতদিন সংরক্ষন করেছে। মানে টা কি এসবের?
এবার টেনেসাস মিমেরর দিকে ফিরে বলল,"তুমিই সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যার উপর দায়িত্বটা অর্পিত হল। "
মিম কিছুই বুঝল না ওর ওপর আবার কিসের দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে।
টেনেসাস এবার বললেন, " আর এই 'ইউভার্স রিংটা ' এই সৌভাগ্যবতীর আঙুলে পরিয়ে দিবে এই টিউবিউল গ্রহের একমাত্র উত্তরাধিকারী প্রিন্স ইরিনা। "
কথাটা শুনে মিম বেশ অবাক হল তার মানে ইরিনা এই টিউবিউল গ্রহের রাজাধিরাজ টেনেসাসের কন্যা!
ইরিনা এবার মুচকি হেসে মিমের কাছে আসল। ও আংটিটা মিমের বাম হাতের মধ্যমাতে পরিয়ে দিলো। মিমের পুরো শরীরটা কেমন বিদ্যুতে শক খাবার মতো হল। ও স্পষ্ট বুঝছিলো যে আগের আংটিটা পরে ওর যেরকম অনুভূতি হয়েছিলো এই আংটিটা পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন অনুভূতি হচ্ছে ওর। আংটি পরানোর সাথে সাথে পুরো হলরুমটা তীব্র ক্লাবের শব্দে ফেটে পড়ল।
মিম ভাবল এই ভিন গ্রহের প্রানীরাও তারমানে ভালো কাজে হাতে তালি দেওয়াটা জানে!
এসব ভাবার সময় কোথায়? মিমের মাথায় এমনিতেই প্রশ্নের জটলা পাকিয়ে রয়েছে। হাতে তালি দেওয়া নিয়ে ভাবার কোনো সময় ওর নেই।
>এই আংটিটা কি সেই আগেরটাই না কি অন্য কোনোটা? >ওকে এটা দেওয়ার উদ্দ্যেশ্যটা আসলে কি?
>এই গ্রহের লোকগুলো কি সত্যিই ভালো কিছু চাইছে না কি তাদের মনে অন্যকিছু?
> টেনেসাস কেনো বলল যে তারা আংটিটা খুব সাবধানে সংরক্ষন করে রেখেছিলো এতদিন?
মিম যতদূর জানে জিলঝিলা পুরষ্কারের আংটি সাধারনত প্রতি বছর বছরই বানানো হয়। তবে টেনেসাস কেনো একথা বললেন?
> টেনেসাস কেনো বলল যে তারা আংটিটা খুব সাবধানে সংরক্ষন করে রেখেছিলো এতদিন?
মিম যতদূর জানে জিলঝিলা পুরষ্কারের আংটি সাধারনত প্রতি বছর বছরই বানানো হয়। তবে টেনেসাস কেনো একথা বললেন?
অনুষ্ঠান শেষে মিমকে নিয়ে ইরিনা কক্ষে গেলো। মিম এবার ইরিনাকে সবগুলো প্রশ্নই একসাথে করে বসল।
ইরিনা একটু মুচকি হেসে বলল," বুঝতে পারছি তোমার মাথায় প্রশ্নের জটলা পাকিয়ে গিয়েছে। দাড়াও আমি এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
তোমার প্রথম প্রশ্ন ' এই আংটিটা আগেরটা না কি অন্যটা।'
হ্যা এটা আগের সেই আংটিটা নয়। এই আংটিটার নাম হল 'ইউনিভার্স রিং ' বা ' দি রিং অফ ইউনিভার্স'। এটা মহাবিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের মধ্য একটি। আর এই আংটিটা এতই শক্তিশালী যে এর আকর্ষন দ্বারা একটি গ্রহকেও তার কক্ষচুত্য করা যাবে। আর যে কেউ আংটিটা পরতেও পারে না। এর জন্য তাকেও শক্তিশালী হতে হয়।
তোমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ' তোমাকে কেনো আংটিটা দেওয়া হয়েছে। ' আপাতত এই প্রশ্নটির উত্তর তোমাকে দেওয়া যাবে না। সময় হলে তুমি ঠিকই বুঝতে পারবে।
তোমার তৃতীয় প্রশ্ন ' আমরা সত্যিই কি চাইছি সেটা তুমি সময় হলেই বুঝতে পারবে। আমাদের গ্রহের লোকেরাও কেমন আর তারা তোমার থেকে কি চাই সেটাও তুমি সময় হলে জানতে পারবে। শুধু এখন এটুকু জানো আমাদের উদ্দেশ্য খারাপ নয়। '
তোমার চতুর্থ প্রশ্ন ' টেনেসাস কেনো বললেন আংটিটা এতদিন খুব সাবধানে যত্ন করে রাখা হয়েছে। ' প্রশ্নটার উত্তর তোমার এতখনে বোঝার কথা। এটা মহাবিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী আংটি যা পাওয়ার জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিল অনেক গ্রহের প্রানী। এই আংটিটা সাবধানে না রাখলে কোনো ভুল লোকের হাতে পড়লে মহাবিশ্বের যে কি অপুরীয় ক্ষতি হত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইরিনা মিমের দিকে তাকালো কিছু শোনার আশায়।
মিম বলল," বুঝলাম। তবে আপনি আমাকে আগে কেনো বলেন নি যে আপনি টেনেসাসের মেয়ে। "
ইরিনা বলল, " বলিনি কিন্তু তুমি ঠিকই জেনে গেছো। যেমনটা জানবে অন্য সব রহস্য গুলো। "
এই বলে ইরিনা মিমকে রেস্ট নিতে বলে চলে গেলো। মিম একটু বসে পরে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালো। মিম বেশ অবাক হল। আকাশে ৭ টা চাঁদ উঠেছ। কিন্তু সব বিষয় জানার পর এটা সহজেই অনুমান করতে পারল যে 'টিউবিউলের উপগ্রহ সাতটি। যার ফলে আকাশে ৭টি চাঁদ উঠেছে। ' এই দৃশ্যটা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। মিম এরকম অনেক বিষয়ই খেয়াল করেছে, যেগুলো পৃথিবীতে অবাস্তব বা অসঙ্গায়িত কিন্তু টিউবিউলে তা পুরোপুরি বাস্তব এবং সঙ্গায়িত।
এরকম ভাবতে ভাবতে ওর রুমে ইরিনা প্রবেশ করল। ইরিনা মিমকে নৈসোভোজের জন্য ডাকতে এসেছে । মিম ইরিনার সাথে খেতে গেলো। বিশাল একটা রুমে বিশাল এক মাদুর বিছানো। অনেক লোক সারিবদ্ধ হয়ে বসা। সামনে সবার খাবারের প্লেট। এখনো খাবার পরিবেশন শুরু হয় নি। মিম বুঝতে পারলো এখানে খাওয়া দাওয়া টেবিল চেয়ারে হয় না। মিম ইরিনার পাশে গিয়ে বসল।
খাবার গুলো যদিও বাঙালী রান্নার মতো না তবুও খেতে বেশ সুস্বাদু। খাওয়া দওয়ার পর মিম রুমে গেলো। ইরিনা ওর রুমে গিয়ে মিমকে গুড নাইট বলে চলে যেতে চাইছিলো-
মিম ওকে বলল," আমার কাজ তো এখানে শেষ। আমি এখন বাসায় যেতে পারি না?"
ইরিনা বলল," যেতে তো পারো। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম তোমাকে একটু আমাদের গ্রহটা ঘুরিয়ে দেখাবো। যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে। "
মিম বলল, " না না আপত্তি কেনো? অবশ্যই যাবো। "
ইরিনা হাশিমুখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মিম ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন সকালে ইরিনার ডাকে মিমের ঘুম ভাঙলো। মিম তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ল ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সের সাথে।
সত্যিই টিউবিউল গ্রহটা খুব সুন্দর। এখানে সূর্যের আলো সবুজ রঙের।কোনো গাছপালার কান্ড নেই।সব গাছ পুরোপুুরি সবুজ রঙের। আর লোকজনও সব সবুজ।
এককথায় চারিদিক সবুজের যেন বন্যা বয়ে যাচ্ছ । আর এখানে শহর গ্রাম বলতে কিছু নেই। সবার বাড়িতেই কৃষিকাজ হয়। এখানে উচ্চবিত্ত বা অফিসার শ্রেনীর কোনো লোক নেই। এমনকি মিম অবাক হল যে টেনেসাস নিজেও কৃষিকাজ করে। আর তার নিজস্ব সুন্দর বাগানটারও তিনি নিজে পরিচর্জা করেন প্রাসাদে এত মালি থাকতে।
মিম এর কারন জিজ্ঞাসা করায় ইরিনা বলল," বৃক্ষই আমাদের জীবন। আমাদের গ্রহ আমাদের সূর্য ' তুরিনের' প্রথম নিকটতম গ্রহ। তাই তুরিন থেকে সব রকমের ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের গ্রহে আসে যা সরাসরি টিউবিউলের মাটিতে আঘাত করলে সাথে সাথে সেখানে মাটি পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে।আর সেই সব রশ্মিকে বাধা দেয় আমাদের পুরু ওজনস্তর। তুমি তো জানো তোমাদের পৃথিবীতেও ওজনস্তর রয়েছে যা মানুষের অসচেতনতার ফলে দিন দিন ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। তা যেদিন থাকবে না সেদিন পৃথিবীও প্রানীর বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়বে।আমি বুঝি না আল্লাহ কেনো এমন নির্বোধদের ' আশরাফুল মাখলুকাত' ( সৃষ্টির সেরা) বলেছেন। যারা কি না নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনে।
মিমের এবার বেশ রাগ হল মানবজাতী নিয়ে এমন উক্তি শুনে।
মিম বলল," আল্লাহ যখন বলেছেন তখন এটাই পরম সত্য।মানুষই শ্রেষ্ঠ।"
ইরিনা বলল, কিভাবে মানবো? তোমাদের ওজনস্তর কেমন বছরের পর বছর ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে আর আমাদের প্রচেষ্টায় আমাদের ওজনস্তর প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেখো যেখানে তুমি মানব জাতির ভালো চাইছো এলিয়েনদের সাথে মিশে মানব জাতীর উপকার করতে চাইছো সেখানে তোমাদেরই কোনো সদস্য আবার খারাপদের সাথে মিশে পৃথিবীটাকেই ধ্বংস করতে চাইছে।
এটা বলার সাথে সাথে ক্রোকোম্যাক্স ইরিনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল," আহা তোমরা দুজন কি শুরু করলে? থামো তো। দেখো আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছে গেছি। মিম আর ইরিনা কথা থামিয়ে হাওয়াই গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। মিম দেখল কত সুন্দর একটা হ্রদ। তার পানি পুরো স্বচ্ছ সবুজ। পাশে একটা সুন্দর পার্ক মতো জায়গা। কিন্তু এখানে সব কেমন নীরব। লোকজন অনেক সবার মুখ নড়ছে কিন্তু কোনো শব্দই শুনতে পাচ্ছে না মিম।আর সব লোকের মাথায় হেলমেটের মত কি যেন পরা।
মিম ক্রোকোম্যাক্সকে জিজ্ঞাসা করছে কারনটা। কিন্তু ও অবাক হল নিজের বলা কথাও ও শুুনতে পাচ্ছে না। এবার ক্রোকোম্যাক্স ওর মাথায় একটা হেলমেটের মত কি পরিয়ে দিল। সথে সাথে মিম চারপাশের সব আওয়াজ শুনতে পারছিল।
ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সও ওটা পরে নিলো।
এবার ক্রোকোম্যাক্স বলল," এটা একটা মাধ্যম শূণ্য জায়গা। শব্দ চলাচলের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন এটা তো তুমি জানো। এখানে মাধ্যম না থাকায় শব্দ শোনা যায় না ।
আর তোমার মাথায় যে যন্ত্রটা দিয়েছি ওটা হচ্ছে 'সাউন্ড ডিটেক্টর'। ওটা মাধ্যম বিহীন জায়গা থেকেও শব্দ ধরে শুনতে সাহায্য করে ।
মিম খুব অবাক হল। এমন জায়গা আর যন্ত্র দেখে। এভাবে অনেকক্ষন ঘোরার পর মিম দেখল আকাশ থেকে একটা নভোযান খুব দ্রুত নিচে নামছে। ও ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সকে ওটা দেখালো। ওরা বেগুনি রঙের যানটা দেখে জোরে চিৎকার করে উঠল। আর সাথে সাথে,,,,,,,,,,,,
মিম খুব অবাক হল। এমন জায়গা আর যন্ত্র দেখে। এভাবে অনেকক্ষন ঘোরার পর মিম দেখল আকাশ থেকে একটা নভোযান খুব দ্রুত নিচে নামছে। ও ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সকে ওটা দেখালো। ওরা বেগুনি রঙের যানটা দেখে জোরে চিৎকার করে উঠল। আর সাথে সাথে সেটা থেকে কারা যেনো হাই কুয়ালিটি বন্দুক দিয়ে শুট করতে লাগল মিমদের উদ্দেশ্যে।
ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্স মিমকে তাড়াতাড়ি আড়াল করে দাড়াল। ঘটনার আকস্মিকতায় মিম ওর হাত দুটো সামনে নিয়ে বসে পড়ল মাটিতে। মনে মনে ইচ্ছা করছিল ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সকে বাচানোর আর ওই বন্দুকধারীদের উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার। কিন্তু তার উপায় নেই। মিম চোখ বন্ধ করে ছিল। ঘটনাটা ঘটছিল স্লো মোশনে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। হঠাৎ মিম একটা জোরে কিছু বিষ্ফোরনের শব্দ শুনতে পেল। ও চোখ মেলে দেখে ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্স ওর সামনে দৃড় ভাবে দাড়িয়ে আছে।আর ওর আংটি দিয়ে আলো বেরুচ্ছে।
ও উঠে দাড়াতেই দেখল ওদের তিনজনকে ঘিরে আছে সেই স্বচ্ছ বেলুনের মতো দেয়ালটা। আর ওদের সামনে কিছুটে উপরে ধোয়ার কুন্ডলী। এতখনে দেয়ালটা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। উৎসুক জনতা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবিস্ময়ে। ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্স সামনে থেকে সরতেই মিম দেখল লেকের পানিতে ভাসছে সেই নভোযানটা।
মিমের বুঝতে বাকি নেই যে ঘটনাটা সেদিন বনে বাঘের সাথে ঘটা ঘটনার মতই হয়েছে। বুলেট ওই স্বচ্ছ দেয়ালটাতে প্রতিফলিত হয়ে আবার তাদের নভোযানে গিয়েই লেগেছে। যার ফলে তাদের এখন ওই অবস্হা।
ক্রোকোম্যাক্স আর ইরিনা মিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাড়াতাড়ি ওদের হাওয়াই গাড়ির দিকে যেতে বলল। মিম ক্রোকোম্যাক্স আর ইরিনার পেছন পেছন যাচ্ছিল আর বার বার জিজ্ঞাসা করছিল, তারা কারা ছিল?
কিন্তু ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্স কেউই কোনো উত্তর দিচ্ছে না। তিনজনে গাড়িতে উঠার পর ইরিনা বলতে লাগল।
ইরিনা বলল," তারা ছিল "মেরাসমাস " গ্রোহের এলিয়েন। যাদেরকে ডার্ক এলিয়েনও বলা হয়। তারা এই মহাবিশ্বের ত্রাস। তোমাকে বলা হয়েছিল যে আংটিটা খুব সাবধানে রাখা হয়েছে। কারন এই ডার্ক এলিয়েনরা। অনেকবার হামলা করেছিল আমাদের গ্রহের উপর। কিন্তু শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যাবস্হার কারনে আমাদের গ্রহের তেমন ক্ষতি করতে পারে নি। আমাদের গ্রহের সবার একটাই কথা ছিল জীবন থাকতে এই আংটি তাদের হাতে যেতে দিবে না। তারা এমনিতেই এতটা হিংস্র। তারা আংটিটা পেলে পুরো মহাবিশ্ব হাতের মুঠোয় পুরে ইচ্ছামত ধ্বংসলীলা চালাবে। তাদের গ্রহের রানী "ডার্কিনী তেলছা", যাকে" ডার্ক কুইন" ও বলা হয় সে হচ্ছে এক শক্তিশালী ডিভিল। যে কালো যাদু করে অনেক কালো শক্তি সঞ্চয় করেছে। তোমাদের পৃথিবীর বাংলা ভাষায় যাদেরকে ডাকিনী বলা হয়। সেই ডাকিনীর কালো জাদুর শেষ ধাপ হচ্ছে এই আংটিটা হাতে পরা। তবেই সে মহাবিশ্বের রানী হতে পারবে। যার কারনে সে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতদিন আংটিটা নেওয়ার জন্য সে খুব ছোটখাটো হামলা করলেও এখন বড় রকমের হামলা করছে আংটিটা পাবার জন্য । তাই আমরা এত তাড়াতাড়িই তোমাকে আংটিটা দিয়ে দিলাম। আমরা চাই না ওটা ভুল লোকের হাতে পড়ুক।
মিম এতখন ইরিনার সব কথা শুনছিল। এতখনে ওরা প্রাসাদে পৌছে গিয়েছে।
মিম হাওয়াই গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল, " আপনাদের এসব ঝামেলার মধ্যে আমাকে আবার জড়ানোর কি দরকার? আংটিটা অন্য কাউকে দিতে পারতেন। "
এবার ক্রোকোম্যাক্স বলল," আংটিটা পরার ক্ষমতা আমাদের কারো থাকলে আমরা আগেই আংটিটা পরে নিতাম। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছে এর জন্য নির্দিষ্ট করে সেখানে আমাদের হাত কি? আংটিটা পরার জন্য শক্তি প্রয়োজন।"
মিম বলল," তাহলে ডার্ক কুইন কি করবে আংটিটা নিয়ে? যদি পরতেই না পারবে? "
ইরিনা বলল," ও এর জন্যই তো এতদিন সাধনা করে সেই শক্তি অর্জন করেছে। যার ফলে আংটিটা ও পরতে পারবে। কিন্তু ভালোর জন্য নয়। খারাপের জন্য।
ওরা এতখনে প্রাসাদে প্রবেশ করেছে। মিম ওদের প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর ওরা উত্তর দিচ্ছে।
এমন সময় টেনেসাস ওদের সামনে এল। ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্স টেনেসাসকে পুরো ঘটনাটা বলল।
টেনেসাস বলল," আমাদের স্যাটেলাইটের প্রোগ্রাম গুলো কিছু ভাইরাসের কারনে হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। যার কারনে নির্দিষ্ট অঞ্চলের নিরাপত্তা কিছুসময়ের জন্য বন্ধ ছিল। এই কথা শত্রু পক্ষ জানতে পেরে সেখান দিয়ে আমাদের গ্রহে প্রবেশ করে ফেলে। আর হামলা করে। মিম তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তুমি এই টিউবিউলের একমাত্র রাজকন্যা আর এই গ্রহের সবথেকে শক্তিশালী সেনাপতি ক্রোকোম্যাক্সকে বাচিয়েছো। "
মিম এই ঘটনায় বেশ ভয় পেয়ে ছিল। ও বলল," দেখুন না তো আমার এই আংটি চাই আর না তো চাই কোনো শক্তি। আমি যেমন ছিলাম তেমনই থাকতে চাই। কোনো ঝামেলা আমার ভালো লাগছে না। আমি পৃথিবীতে চলে যেতে চাই "
টেনেসাস একথা শুনে শান্ত গম্ভীর গলায় বলল, " কোনটাকে ঝামেলা বলছো? নিজের দেশকে বাচানো তোমার কাছে ঝামেলা মনে হচ্ছে? নিজের গ্রহের মানুষদেরকে বাচানো তোমার কাছে ঝামেলা মনে হচ্ছে? তুমি দায়িত্বটা না নিলে ডার্ক কুইন তোমার গ্রহকে ছেড়ে দেবে ভাবছো? তোমার গ্রহকেও ধ্বংস করে দেবে সে। তোমার সামনে অনেক দায়িত্ব। তুমি ঠিক করো তুমি কি করবে। "
এতখনে মিমের দয়ালু হৃদয়টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। ও তো সবসময় সবার বিপদে এগিয়ে গিয়েছে, পাশে দাড়িয়েছে। যদি সত্যিই তার গ্রহের মানুষের কোনো বিপদ আসে ওর বাচাতে হবে তাদেরকে। মিমের হাতটা মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসল।
ও বলল," আমি বাচাবো আমার ধরনীকে। আমার জীবন দিতে হলে তাও দেবো। আমি কিছুতেই চোখের সামনে বসুন্ধরার ধ্বংস দেখতে পারবো না। আমি লড়ব। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমি লড়ব। "
এবার টেনেসাস, ক্রোকোম্যাক্স আর ইরিনার মুখে হাসি ফুটে উঠল। বিজয়ের হাসি।
এদিকে আজ রাতেই ওরা রওনা দিল পৃথিবীর উদ্দেশ্যে। মহাকাশ যানে ওদের তিনজনের মধ্যে তেমন কোনো কথাই হচ্ছিল না।
শুধু মিম ভাবছিল, কিভাবে বাচাবে তার ধরনীকে? কিভাবে লড়বে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে?
ওর সামনে তো অনেক বড় যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। ও কি পারবে সেই যুদ্ধে জয়ী হতে?.......
চলবে.....................

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.