"কি ব্যাপার শেহজাদা কি এতোই ভালোবেসেছে আজ রাতে?"
আরেকজন বলল,
"আরে বোঝিস না কেনো? শেহজাদি তো দেখতে অনেক সুন্দর তাই শেহজাদা নিজেকে সামলাতে পারেনি।"
এমন কথা বলছিলো আর খিলখিলিয়ে হাসছিলো সবাই।
কিন্তু প্রমা সেদিকে কান দিচ্ছে না।প্রমা জানে এরকম কিছুই ঘটেনি।
প্রমা বিছানা থেকে উঠতে পারছে না।ওর সারা শরীরে ব্যাথা।ব্যাথাটি অবশ্য ফুল শয্যাজনিত কারণে নয়।ব্যাথাটি হয়েছে রাক্ষসী কুরুম্ভা'র অভিশাপ কেটে যাওয়ার ফলে।প্রমা চোখ মেলে তাকাতে পারছে না।
শুভ্র স্নানাগার থেকে বের হয়ে এলো।গায়ে জড়ানো একটি রাজকীয় তোয়ালে।
শুভ্র এসে দেখলো প্রমা এখনো উঠেনি।বিছানাতেই বসে আছে মাথা চেপে ধরে।শুভ্র হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলো প্রমার কাছে।
বলল,
"কি হয়েছে মেহের? এভাবে চুপচাপ বসে আছো কেনো? উঠো, উঠে স্নান সেরে নাও।"
প্রমা বলল,
"আমি জানি না আমার সারা শরীর কেনো জানি খুব ব্যাথা করছে।"
শুভ্র একটু চিন্তিত হলো তারপর বলল,
"আমি রাজবৈদ্য কে খবর দিচ্ছি।তুমি বসো।"
শুভ্র উঠে চলে গেলো।
প্রমা উঠে বসলো।ধীরে ধীরে স্নানাগারে গিয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিতে লাগল।শরীর কেমন ব্যাথা হচ্ছে।নিজেকে।কেমন যেনো হালকা লাগছে।
রানী জোলাইখা সব শোনে বলল,
"যদি সত্যিই প্রমা সুস্থ হয়ে থাকে তাহলে ওর শরীর ব্যাথা হওয়ার কথা।শুভ্র এখনি গুরুদেব শমসের কে খবর দাও।"
শুভ্র বলল,
"যথা আজ্ঞা আম্মিজান।"
শুভ্র চলে গেলো।রানী জোলাইখা কি যেনো একটা ভাবলো তারপর উঠে দাঁড়িয়ে হাটতে লাগলো।উদ্দেশ্য শুভ্র'র কক্ষ।প্রমা স্নান সেরে এসে বসে রয়েছে।রানী জোলাইখা সামনে গিয়ে একটি রক্ত ভর্তি গ্লাস প্রমা'র সামনে ধরল।প্রমা হঠাৎ রানী জোলাইখার এরকম কান্ড কারখানাতে বেশ চমকালো।ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,
"এসব কি মালেকায়ে আলম?"
রানী জোলাইখা বলল,
"কথা দিয়েছিলাম তুমি শুভ্র কে বিয়ে করলে তোমার চাহিদা অনুযায়ী আমি তোমাকে রক্ত পানের ব্যাবস্থা করব।তাই আমার কথা রাখতে তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।নাও খেয়ে নাও।"
প্রমা যেনো নতুন কিছু শোনছে।কি বলছে রানী জোলাইখা।পাগল হয়ে গেলো নাকি প্রমাকে ড্রাকুলা বানানোর পরিকল্পনা করছে।রানী জোলাইখা আবার তাড়া দিলো,
"নাও ধরো এটা পান করো।"
প্রমা এবার বেশ রেগে গেলো বলল,
"হোয়াট ননসেন্স! আর ইউ ম্যাড?আমি কি আপনাদের মতো রাক্ষস নাকী যে মানুষের রক্ত পান করব?"
রানী জোলাইখা বলল,
"আচ্ছা তাহলে পশুর রক্য এনে দেবো?"
প্রমা মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরল।পেট থেকে সব বেরিয়ে আসতে চাইছে ওর।রানী জোলাইখা সরু চোখে তাকিয়ে ব্যাপার গুলো লক্ষ্য করল।প্রমা ক্ষেপে গিয়ে বলল,
"আপনি আমাকে আপনাদের মতো ড্রাকুলা বানানোর প্ল্যান করছেন? কিন্তু আপনার এই ঘৃন্য মনোবাঞ্ছা কোন দিন ও পূরন হবে না।"
ততোক্ষনে শুভ্র গুরুদেব কে নিয়ে হাজির হয়েছে।প্রমার মুখে এমন কথা শোনে চিৎকার করে উঠলো,
"মেহের...
প্রমা শুভ্র'র দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
"চিৎকার করো না তুমি।তোমার মহান মাতা আমাকে ড্রাকুলা বানানোর জন্য রক্ত ভর্তি গ্লাস এনেছে।আর আমি তোমার মা কে সেলাম করব?"
শুভ্র আবার কিছু বলতে যাবে তখন রানী জোলাইখা শুভ্র কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
"আমি শুধু তোমাকে পপর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলাম তোমার অভিশাপ কেটেছে কিনা।"
প্রমা বিস্মিত হলো।অভিশাপের কথাটি ওর কাছে বেশ নতুন লাগল।মুখে বিস্ময়ের ছাপ বজায় রেখে বলল,
"অভিশাপ...কিসের অভিশাপ?"
রানজ জোলাইখা বলল,
"তোমার উপর রাক্ষসরানী কুরুম্ভা'র অভিশাপ লেগেছিলো।যার ফলে তুমি মানুষ এর রক্ত মাংস খাওয়া ধরেছিলে।তোমার এই অবস্থা ভালো করার জন্য গুরুদেবের কথামত শুভ্র'র সাথে বিয়ে দিয়েছি।"
প্রমা কি বলবে কিছুই বোঝতে পারছে না।গুরুদেব বলল,
"মালেকায়ে আলম ঠিকই বলছে শেহাজাদী।"
প্রমা গুরুদেবের দিকে তাকালো।গুরুদেব বলল,
"তুমি যখন শেহজাদা শুভ্র'র সাথে ঝর্না দেখতে গিয়ে পানিতে হাত পা ডুবিয়েছিলে তখন-ই তোমার উপর অভিশাপ লেগেছিলো কারণ ঝরনাটি অভিশপ্ত।
প্রমা বলল,
"অভিশপ্ত!
"হ্যা অভিশপ্ত।আর এই অভিশাপের।কারণে রক্ত খাওয়া আরম্ভ।করেছিলে।"
প্রমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে কথাগুলো বলল গুরুদেব।প্রমা।হেসে উঠল স্বজোরে,
"আমাকে বোকা পেয়েছেন? বোকা পেয়ে কি রুপ কথার গল্প।শোনাচ্ছেন? আর আমি আপনাদের গল্প শোনে আবেগে আপ্লুত হয়ে বিশ্বাস করব! ভাবলেন কিভাবে?"
শুভ্র প্রমার সামনে এসে এক টানে গায়ের বস্ত্র ছিড়ে নিজের বক্ষ উন্মুক্ত করে বলল,
"এই দেখো তোমার দাতেঁর দাগ এখনো লেগে আছে।"
প্রমা শুভ্র'র বুকের দিকে তাকালো।শ্যাম বর্নের বক্ষে দাতের দাগ দগদগ করছে।গুরুদেব বলল,
"আর কিছুক্ষন বাদে তুমি সব জানতে পারবে।এখন তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন।"
রানী জোলাইখা বলল,
"তুমি বিশ্রাম নাও মেহের।"
ওরা সবাই চলে গেলো।শুধু রয়ে গেলো শুভ্র।প্রমা শুভ্র'র দিকে তাকালো।শুভ্র প্রমা'র চোখের দিকে তাকিয়ে হাসল।প্রমা খুব প্রশান্তি অনুভব করল এই মিষ্টি হাসিতে।
সবাই ঘুমিয়ে আছে।মধ্যাহ্ন ভোজের পর সবাই ঘুমিয়েছে
প্রমা জেগে রয়েছে।প্রমার মনে শুধু ঘুরে বেরাচ্ছে পালানোর চিন্ত।কি করে পালাবে এখান থেকে।
প্রমা আর কিছু না ভেবেই বেরিয়ে পড়লো কক্ষ থেকে।সদর দরজার কাছে এসে আটকে গেলো।দরজায় পাহারারত রয়েছে প্রহরীরা।প্রহরীদের চোখও ঘুমে ঢুলুঢুলু।প্রমা পা টিপে টিপে প্রহরীদের চোখ ফাকিঁ দিয়ে বেরিয়ে গেলো।রাজ প্রাসাদ থেকে বের হয়ে দিগ্বিদিক ছূটতে লাগল।ঠিক কোন দিকে যাবে বোঝতে পারছে না।সঠিক ভাবে সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে একদিকে হেটে চলল।সামনের দিকে এগিয়ে চলছে শুধু।দুইধারেই ঘন জঙ্গল।দিনের বেলাতেও অন্ধকার দেখাচ্ছে।প্রমা পাগলের মত করে দৌড়ে যাচ্ছে।এসে থামল একটি দুর্গের সামনে।দুর্গটি দেখে প্রমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল।প্রমা ধীরে ধীরে দুর্গটির ভেতরে প্রবেশ করল।ভেতরের সব জিনিস কেমন যেনো এলোমেলো।আর বেশ পুরোনো।প্রমা হেটে হেটে সব কিছু দেখছে।প্রমা হঠাৎ দেখতে পেলো এক রানী একটি শিশু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে বসে ঘুম পাড়ানী গান শোনাচ্ছে।
আবার দেখতে পেলো একটি বাচ্চা দৌড়াচ্ছে আর মহারানী সেই বাচ্চাটকে ধরার জন্য ছূটছে পেছন পেছন।এরকম অনেক দৃশ্যই দেখতে পেলো।
কিন্তু হঠাৎ অনেক গুলো ঘোড়ার খূরের আওয়াজ শোনতে পেলো প্রমা।কিছু দুস্য টাইপের লোক এসে দুর্গটি ঘেরাও করল।তারা রানীর সেই বাচ্চাটিকে ছিনিয়ে নিতে চায়।দুর্গে প্রবেশ করে রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে দুস্যবাহিনী।অনেক চাকর বাকর এর রক্তে লাল হয়ে গেলো দুর্গের মেঝে।দুস্য সর্দার এক লাফে রাজার কাছে চলে গেলো।রাজা এদের হঠাৎ আক্রমণে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে আছে।সেই সুযোগ লুফে নিলো দুস্য সর্দার।তরবারির এক কোপে কেটে দিলো রাজার মাথা।রানী রাজার এই অবস্থা দেখে চিৎকার মেরে বাচ্চাটিকে বুকে জড়িয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে গেলো...!তার পেছন পেছন চলল দুস্যবাহিনী।
পর্ব ৯ ও শেষ পার্ট
।
রানী জোলাইখা তরবারি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখে তার অগ্নি লাভা।ক্রোধের অগ্নিবারুদ চোখ দিয়ে বের হচ্ছে।শুভ্র কোষ মুক্ত তরবারি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একদল দুস্য প্রবেশ করলো রআজ প্রাসাদে শুভ্র লাফিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল ওদের উপর।অনেক রক্তারক্তি কান্ড ঘটছে।রানী জোলাইখাও অস্ত্র চালাচ্ছে।শুভ্র একের পর এক দুস্যদের মাথা আলাদা করে যাচ্ছে।শুভ্র'র বুকে এক দুস্য তরবারি দিয়ে পোচ দিলো।তরবারির আঘাতে শুভ্র'র বুক থেকে রক্ত পড়ছে চুইয়ে চুইয়ে।এসব কারণ শুভ্র'কে দমাতে পারছে না।শুভ্র একের পর এক সৈন্য কে ঘায়েল করে যাচ্ছিলো।হঠাৎ একটি দুস্য এসে রানী জোলাইখা কে ধরে ফেলল।জোলাইখার গলায় তরবারি ধরে বলল,
"খবরদার কেউ আর একটা আঘাত ও করবে না।নাহলে রানীর মাথা আলাদা হয়ে যাবে।"
শুভ্র কথাটি শোনে থমকে দাড়ালো।নিরুপায় হয়ে শুভ্র হাত থেকে তরবারি ফেলে দিলো এবং সবাই ফেলে দিতে বলল।দুস্য সর্দার সবাইকে বন্ধি করে নিয়ে চললো।
।
একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রেখেছে ওদের।এমন এক জায়গায় রেখেছে যার দুই পাশে ভয়ংকর সরোবর।আর তাতে রয়েছে বেশ কিছু কুমির।ওখান থেকে পড়লেই মৃত্যু।রানী জোলাইখা সব কিছু খেয়াল করে দেখছে।শুভ্র এখনো অবচেতন রয়েছে।শুভ্র'র জ্ঞান ফিরাতে হবে।রানী জোলাইখা চারপাশে তাকিয়ে দেখে নিলো দুস্য বাহিনির অবস্থান।তারপর ফিসফিস করে ডাকলো,
"শুভ্র...
।
প্রমার কাছে এখন সব কিছুই স্পষ্ট।রানী জোলাইখা ই ওর গর্ভধারিনী মা।
প্রমা শুধু এটুকুই জেনেছে।প্রমা কিভাবে তারাশঙ্করের বাড়ি গেলো কিভাবে সেখানে বড় হলো এসব কিছু এখনো জানে না।প্রমা একটি স্বর্নের পালঙ্কে শুয়ে আছে।কক্ষটি আলিশান।দেখতে অনেক সুন্দর দামী দামি আসবাব পত্রে ভরা।প্রমা বিছানা থেকে নামল।ধীরে ধীরে সব কিছু দেখতে লাগল।কক্ষের দরজা খোলার চেষ্টা করল কিন্তু সেটি অপর প্রান্ত থেকে তালাবদ্ধ।প্রমা কতক্ষন চিৎকার চেচামেচি করল।কোন লাভ হলো না।প্রমার এখন রানী জোলাইখার জন্য চিন্তা হচ্ছে।কেমন জানি মনে হচ্ছে রানি জুলাইখার কোন বিপদ হয়েছে।বুকের পাশটা খা খা করছে অজানা ব্যাথায়।যতোই হোক রক্তের টান বলে একটা কথা আছে।আর শুভ্র...
শুভ্র কোথায় আছে? শুভ্র'র জন্য কষ্ট হচ্ছে খুব।শুভ্র'র সাথে যে প্রমা সাত জন্মের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।প্রমা সাত জন্ম বিশ্বাস করে।বিশ্বাস করে মানুষের সাতবার জন্ম হয়।সেই সাতটি জন্মেই প্রমা শুভ্রকে বার বার চায়।শুভ্র'র জন্য ভালোবাসার যে পারিজাত ফোটেছে তা কখনো ঝরে যাবার নয়।
।
শুভ্র'র জ্ঞাম ফিরেছে।তাকিয়ে দেখলো চারদিকে অন্ধকার।আবছা আলো আছে খানিক টা সেটা বেশ অল্প।শুভ্র রানী জোলাইখার হাত ধরে খুব সতর্ক ভাবে হেটে চললো সরু রাস্তা দিয়ে যার দুই পাশে ভয়ংকর জলাশয়।শুভ্র রানী জোলাইখা কে কোলে তুলে নিলো।না হলে দুজন হাত ধরে হাটা যায় না এতোই সরু রাস্তা।আর রানী জোলাইখা যদি পা পিছলে পরে যায় তাহলে সরাসরি কুমিরের পেটে চলে যাবে।
শুভ্র হাটছে ধীরে ধীরে।সরু রাস্তাটি পার হয়ে এলো এক অন্ধকার গুহায়।যেখানে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে অসংখ্য মানুষ এর মাথার খুলি, কঙ্কাল।শুভ্র ভাবলো ড্রাকুলা সর্দার মনে হয় এখানে অনেক অসহায় মানুষ দের ধরে এনে নিজের খাবার বানাতেন।কত নিষ্ঠুর আর জঘন্য কাজ এগুলো।রানি জোলাইখা কে বলল,
"আম্মিজান আপনি আমার পেছনে পেছনে আসুন।সামনে কোন বিপদ হলে আমি প্রতিরোধ করব।"
শুভ্র হাটছে রানী জোলাইখা তার পেছন পেছন।হঠাৎ একটি হাত শুভ্র'র পা টেনে ধরল।শুভ্র ঘাবড়ে গেলো।পা ঝাড়া দিয়েও ছাড়াতে পারছে না দেখে পায়ের দিকে তাকালো।দেখলো একটি কংকাল শুভ্র কে আটকে ধরেছে।শুভ্র এপাশ ওপাশ তাকালো।কোন লাঠি পেলো না।তারপর চোখ পড়লো একটি মানুষ এর হাতের হাড় পড়ে আছে।শুভ্র সেটি হাতে নিয়ে কংকালে আঘাত করল।শুভ্র পা বাধন মুক্ত হয়ে গেলো।ওরা বেরিয়ে পড়ল গুহা থেকে।গুহার মুখে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকালো।সামনেই একটি নদী দেখা যাচ্ছে এবং নদির ঐ পাশে একটি রাজপ্রসাদ।হ্যা এটিই ড্রাকুলা সর্দারের প্রাসাদ।
প্রমা একা কক্ষে বসে আছে তখন একজন দাসী প্রবেশ করে অভিবাদন জানিয়ে বলল,
"শেহজাদি রাজকুমার ইভিলের সাথে আপনার বিবাহ ঠিক করা হয়েছে।আপনি বিবাহের জন্য প্রস্তুত হোন।অন্য দাসীরা আপনার সাজ সজ্জার জন্য একটু পরেই কক্ষে আসছে।"
প্রমা বিস্ময়ে হতবাক।এ কোন জ্বালায় পড়ে গেলো ও, যে যার যার মতো বিবাহ ঠিক করছে অথচ প্রমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করছেনা।প্রমা বলল,
"কিসের বিয়ে? আর কোথাকার রাজপুত্র? এসব আমি মানবো না আর হ্যা বিয়েও আমি করছিনা বোঝেছো?"
দাসী বলল,
"মহারাজের হুকুম তাই আপনাকে মানতেই হবে।"
প্রমা আর কোন কথা না বলে পালঙ্কের পাশে রাখা ফুলদানী টা ছুড়ে মারলো দাসীর কপালে।দাসী টি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।দাসীর কপাল থেকে কালো রক্ত বেরোতে লাগল।এক সময় দাসীর শরীর টি কিছু কালো বাদুর হয়ে উড়ে চলে গেলো।প্রমা অবাক হলো এরা কি তবে সবাই ভূত পেত্নী।
প্রমা বেরিয়ে গেলো দরজা ঠেলে।প্রহরীদের চোখ ফাকি দিয়ে বেরিয়ে এলো সদর দরজা পেরিয়ে।
প্রমা দৌড় লাগালো প্রাসাদ পেছনে ফেলে।পেছনে পেছনে কিছু সৈন্য ছুটে আসলো।প্রমা পালাতে পারল না ধরে ফেলল সৈন্যরা।
।
শুভ্র আর রানী জোলাইখা নদী পার হয়ে এলো প্রাসাদের কাছে।সদর দরজায় প্রহরীরা দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্র কিছুক্ষন ভাবলো কিভাবে প্রাসাদের ভেতরে যাবে।রানী জোলাইখা বলল,
"শুভ্র আমাদের চোরের মত গিয়েও কোন লাভ হবে না।ওরা ঠিকই ধরে ফেলবে।"
শুভ্র বলল,
"তাহলে কি করব আম্মিজান?"
রানী জোলাইখা বলল,
"বীরের মত প্রবেশ করো ভেতরে।"
শুভ্র যথা আজ্ঞা আম্মিজান বলেই প্রহরীর সামনে গেলো।প্রহরী কিছু বোঝে উঠার আগেই প্রহরীর ঘাড় ভেঙ্গে দিয়ে প্রহরের কোমর থেকে তরবারি টা এক টানে খোলে নিলো।অন্য সকল প্রহরী এবং সৈন্যরা ছুটে আসছে খোলা তরবারি হাতে নিয়ে।শুভ্র ঝড়ের গতিতে তরবারী চালাতে চালাতে সামনে এগিয়ে চলল।রানী জোলাইখার হাতেও একটি তরবারি।সেও বেশ ভালোই তরবারি চালাচ্ছে।নিজেদের শরীর কিছুটা ক্ষতবিক্ষত হলেও থামছে না ওরা।প্রাসাদের ভেতর প্রবেশ করলো।
বেরিয়ে এলো ড্রাকুলা সর্দার লুসিফার লুত।হাত তালী দিয়ে বলল,
"স্বাগতম স্বাগতম রানী জোলাইখা।শিকারী নিজে থেকেই খাচার সামনে চলে এসেছে যে।"
রানী জোলাইখা বলল,
"খাচাঁয় বন্ধি হতে নয় তোর মত নরকের শয়তান কে শাস্তি দিতে আমি এখানে এসেছি।"
লুসিফার লুত অট্টহাসিতে মেতে উঠল।হাসি থামিয়ে বলল,
"আমাকে দেবে শাস্তি? তাও তুমি!"
আবার হাসি শুরু করলো বলল,
"ভুলে কি গেছো তুমি সেই রাতের কথা রানী জোলাইখা?"
রানী জোলাইখা বলল,
"ভুলিনি শয়তান।আমি কিচ্ছু ভুলিনি।আমার সব কিছুই মনে আছে
তোর জন্য শুধু তোর জন্য আমার একমাত্র কন্যা আমার থেকে ১৯ টি বছর দূরে ছিলো।তোর জন্য আমি আমার স্বামী কে হাড়িয়েছি দুরন্ত যৌবনে।তোর যাদুর বলে আমার রাজ্য পরিনিত হয়েছে নরখাদক আর ড্রাকুলার রাজ্যে।এসব কিছুই আমি ভুলিনি।"
লুসিফার বলল,
"তবে আমাকে শাস্তি দেওয়ার সাহস তুমি পাও কোথায়?
কথাটি বলে রানী জোলাইখা কে বন্ধি করার আদেশ দিলো প্রহরীদের।শুভ্র আবার তরবারি চালানো শুরু করল।হঠাৎ একজন শুভ্র বুকে তরবারির আঘাত হানলো।শুভ্র'র হাত থেকে তরবারি পড়ে গেলো।আরো একটি আঘাত লাগলো শুভ্র'র পিঠে।শুভ্র বসে পড়ল।রানী জোলাইখা এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে এলো শুভ্র'র দিকে।এই সুযোগে রানী জোলাইখা কে ধরে ফেলল সৈন্যরা।
।
প্রমা কে বিয়ের সাজে সজ্জিত করে রাজ সভায় উপস্থিত করা হয়েছে।ড্রাকুলা সর্দার সবার উদ্দেশ্যে ঘোষনা দিলেন,
"আমার পুত্র ইভিল লুতের সাথে শেহজাদী মেহেরের বিবাহ সম্পন্ন করব আপনাদের সামনে।আপনারা নব দম্পতী কে অভিবাদন জানাবেন।"
সবাই করতালিতে মুখরিত করে দিলো সভা।ড্রাকুলা সর্দারের মুখে হাসি।বিবাহ উপলক্ষে সবার জন্য রক্তের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।সবাই রক্তভোজে মেতে উঠেছে।প্রমার এসব দেখে বমি আসছে।এমন সময় রাজপুত্র ইভিল সভায় উপস্থিত হলো।সবার মাথা নত হওয়া দেখেই বোঝতে পারল প্রমা।
ইভিল ড্রাকুলা সর্দারের পাশে বসল।সবাই ইভিলের নামে জয়জয়কার দিচ্ছে।প্রমা ইভিলের দিকে তাকালো।
এ যে ইব্রাহিম মুসা, রানী জোলাইখার রাজ্যের বীর সেনাপতি।
প্রমা চমকিত হলো।ড্রাকুলা সর্দার দুজন প্রহরীকে ইশারা দিয়ে কিছু বোঝাতেই তারা কুর্নিশ জানিয়ে চলে গেলো।কিছুক্ষন পর ফিরে এলো রানী জোলাইখা এবং শুভ্র কে নিয়ে।প্রমা ওদের দেখে চিৎকার দিলো ওদের কাছে যাওয়ার জন্য।তখনি কিছু দাসী এসে প্রমাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।ড্রাকুলা সর্দার বলল,
"রানী জোলাইখা তুমি আমার পরম আত্মীয়, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।তুমি হাসি মুখে কন্যা দান করো।"
রানী জোলাইখা বলল,
"আত্মীয়তা তোর সাথে? এটা তোর দিবা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না।তোর পুত্রের সাথে আমার কন্যা শেহজাদী মেহের'এর কোন দিন বিবাহ হতে পারে না।"
লুসিফার বলল,
"কেনো হতে পারেনা? আমার পুত্র ইভিল কোন দিক দিয়ে তোমার কন্যার অনুপযোগী?"
রানী জোলাইখা বলল,
"অনুপযোগী অনেক দিকেই অনুপযোগী।কোন রক্ত চোষা বাদুড়ের সাথে আমার কন্যার বিবাহ হতে পারে না।আর হ্যা আমার ভ্রাতুষ্পুত্র শুভ্র'র সাথে মেহেরের বিবাহ হয়ে গেছে।"
কথাটি শোনে ইভিল তরবারী হাতে নিয়ে বলল,
"এটা হতে পারে না।"
রানী জোলাইখা এবং শুভ্র ইভিলের দিকে তাকালো।এতোক্ষন ওরা একে দেখেনি এবার দেখে দুজনেই বিস্ময়ের সর্বচ্চো চূড়ায় পৌছে গেলো।এ যে মুসা ইব্রাহিম।
রানী জোলাইখা বলল
"বেঈমান আমার রাজ্যে থেকে আমার নুন খেয়ে তুই আমার বিপক্ষে তরবারী তুলে ধরেছিস?"
লুসিফার বলল,
"এ আমার পুত্র ইভল।তোমার রাজ্যে ছদ্মবেশে ছিলো।
কারণ আমি জানতাম তুমি তোমার কন্যাকে ফিরিয়ে আনবেই।ঐ দিন রাতে একটি মানব সন্তানের কাছে তোমার কন্যাকে তুলে দিয়েছিলে।সেই মানব আমার চোখ থেকে পালাতে পারলেও তুমি তার উপর ঠিকই নজর রেখেছিলে।তাই আমি আমার পুত্র কে পাঠিয়েছিলাম।ও খোজ নিয়ে আমাকে সব জানিয়েছে।"
রানী জোলাইখা অবাক হয়ে সব শোনছে।লুসিফার বলল,
"এবার আমার পুত্রের সাথে তোমার কন্যার বিবাহ দিয়ে বিশ্ব সম্রাজ্যের অধিপতি হবো আমি।বিশ্বে শয়তানি শক্তি, শয়তানি রাজ্য কায়েম করব রানি জোলাইখা।"
হাসতে শুরু করল লুসিফার।রানি জোলাইখা বলল,
"আমি জীবিত থাকতে সেই স্বপ্ন তোর কোন দিন সত্যি হবে না।"
ইভিল বলল"তবে মৃত্যকে আলিঙ্গন কর তুমি।"
রানী জোলাইখাকে মারার জন্য তৈরী হতেই বাধা দিলো লুসিফার বলল,
"সে তোমার হবু স্ত্রীর মাতা।"
দমে গেলো ইভিল।এগিয়ে গেল শুভ্রর দিকে। চাবুকের আঘাতে দগ্ধ করতে লাগল।রানী জোলাইখা কে বেধে রেখেছে।ছাড়া পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টাই করছে।"
প্রমা এসব দেখে মনে মনে বলল,
"আমার হাতে একটা তরবারি থাকত যদি।"
সাথে সাথে প্রমার হাতে একটি চকচকে অতি ধারালো বিশেষ তরবারি চলে আসলো।প্রমা অবাক হলো।
এক শুদ্ধ বাতাসে প্রমার চুল উড়তে লাগল।ওর ঘাড়ের সেই নীল রঙ্গের লাভ চিহ্ন জ্বলজ্বল করে উঠলো।হুংকার ছুড়ে ঝড়ের গতিতে উড়ে গেলো ইভিলের সামনে।তরবারির এক কোপে বিচ্ছিন্ন করে দিলো স্কন্ধ।কাটা কাথা ছিটকে পড়লো দূরে।কাটা ঘাড় হতে রক্ত কল কল করে পড়ছে।
প্রমা আক্রোশে তেড়ে গেলো অন্যান্য সৈন্যদের সামনে।একে এক শেষ করতে শুরু করলো সব কয়টাকে।লুসিফার ছেলের মৃত্যুতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।পরক্ষনেই ভয়ানক রুপ ধারন করে প্রমার দিকে তেড়ে গেলো।প্রমাকে আঘাত করতেই দূরে ছিটকে পড়লো ড্রাকুলা সর্দার লুসিফার।প্রমার সামনে লুসিফারের কোন যাদু মন্ত্রই কাজ করছে না।লুসিফার পাগল হয়ে গেলো যেনো নিজের ব্যার্থতায়।শুভ্র রানী জোলাইখা কে মুক্ত করলো।
প্রমা বলল,
"তুই আমার বাবা কে হত্যা করেছিস।তোর জন্যে আমাদের সুন্দর রাজ্যে চৈত্রের খড়া।তোর পাপের শাস্তু এবার আমি দেবো।"
প্রমা লুসিফারের শরীরে তরবারী দিয়ে আঘাত করল কিন্তু লুসিফারের কিচ্ছু হলো না।প্রমা এই অবস্থা দেখে তরবারি টা দেখলো আবার।লুসিফার হাসতে শুরু করল বলল,
"তুই আমার কিছু করতে পারবি না।"
প্রমা রাগে গর্জন করে উঠলো।আবার তরবারি চালালো লুসিয়ারের উপর কিন্তু আবারো সেরকম ই হলো।কিচ্ছু হলো না ওর।প্রমা কি করবে কি করে শেষ করবে ড্রাকুলা কে তাও বোঝতে পারছে না।হঠাৎ ড্রাকুলা সর্দার চিৎকার করে উঠলো।সবাই তাকালো ওদিকে ড্রাকুলা সর্দার ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।শুভ্র এবং প্রমা দেখতে পেলো রানী জোলাইখার হাতে তীর লেগেছে।আর তাতে লুসিফার ব্যাথা পাচ্ছে।তার মানে রানী জোলাইখার ভেতরে লুসিফারের আত্মা লোকানো আছে।প্রমা আর শুভ্র এটি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
রানী জোলাইখা বলল,
"মা মেহের তুই আমার জন্য ভাবিস না।আমাকে মেরে ফেল তোরা।বিনাশ করে দে এই শয়তান টা কে।"
প্রমা রানী জোলাইখা কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল বলল,
"না আম্মিজান তুমি মরবে না।আম্মিজান তুমি এসব বলবে না।"
রানী জোলাইখার মরুর মত তপ্ত বুকে শীতল পানির স্রোত বয়ে গেলো যেনো।এতোদিনে জমানো সকল কষ্ট প্রমার মুখের আম্মিজান ডাকে উবে গেলো।রানী জোলাইখা প্রমা কে জড়িয়ে ধরল।প্রমার চোখে মুখে চুমু খেয়ে বলল,
"মেহের আরো বল, আরো ডাক আমাকে।"
প্রমা রানী জোলাইখা কে আম্মিজান বলে ডাক দিল।রানী জোলাইখা শুভ্রকে বলল,
"আমার কলিজার টুকরা কে দেখে রেখো।"
শুভ্র রানী জোলাইখার পা ধরে বসে পড়ল বলল,
"আম্মি জান আপনি এটা করতে পারেন না।আপনাকে আমরা মরতে দেবো না।"
রানী জোলাইখা শুভ্রকে টেনে তুলে বুকে নিয়ে বলল,
"আমি তোদের মাঝেই বেচে থাকব আজীবন।"
সকল মায়া মমতার পিছুটান উপেক্ষা করে রানী জোলাইখা তীরের ফলা ঢুকিয়ে দিলো নিজের বুকে।ড্রাকুলা সর্দার মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।প্রমা শুভ্র কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।
।
রাজ্য আবার আগের মতোই হাসি আনন্দে ভরে উঠলো।পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে, গাছের সবুজ পাতায় পাতায় বাতাসের মৃদু দোলা।যাদু শক্তি কেটে গেছে রাজ্য থেকে।শুভ্র সেই নীল রঙ্গের ঝরনার পাশে পাথরের উপর বসে আছে।প্রমা শুভ্র'র কোলের উপর বসে মাথা রেখেছে শুভ্র'র বুকে।
এই বন্ধন যেনো জন্ম জন্মান্তরের।
-সমাপ্ত
© bnbooks.blogspot.com