সেই রাতে - (পর্ব ৪, ৫, ৬ ও ৭) - লোমহর্ষক ভয়ংকর ভূতের গল্প

সেই রাতে
লেখক: রাহিমা নিশাত নিঝুম
পর্ব: ৪, ৫, ৬



পর্ব

তারাশঙ্কর বিশ্বাস পুলিশ স্টেশনে বসে আছে।মুখ গম্ভির, চেহেরায় বয়সের ছাপ ভালোই বোঝা যাচ্ছে।কপালে ভাজ পড়েছে চিন্তায়।মাথায় চুল কম, নেই বললেই চলে ঘাড়ের দিকে যে কয়টা চুল আছে তার অর্ধেক ই পাকা।পুলিশ অফিসার শরিফ খান বলল,
"আপনার মেয়ে কখন হাড়িয়েছে?"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস বলল,
"আমার মেয়ে প্রমা বিশ্বাস একজন সাংবাদিক।গোপন সুত্রে খবর পেয়েছিলো বান্দরবানের দিকে উত্তরের একটা বনে কিছু ক্রিমিনাল নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঐ বনে চুরাচালানী করে।প্রমা সেই ক্রিমিনালদের কু-কীর্তি ভিডিও তে ধারন করার জন্য সেই বনে গিয়েছিলো দুদিন আগে।আমি বার বার করে একা যেতে বারণ করেছিলাম।কিন্তু মেয়েটা কথা শোনেনি।ওখানে পৌছে আমাকে শেষ বার কল করেছিলো সন্ধ্যা ৭টায়।তারপর রাত ৮:৪৫ মিনিট থেকে ওর মোবাইল বন্ধ।এখন পর্যন্ত মোবাইল খোলেনি।"
শরীফ খান সব শোনে বলল,
"তার মানে আপনি বলতে চাইছেন মিস প্রমা বিশ্বাসের কোন বিপদ হয়েছে?"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস মাথা নাড়ল।শরীফ খান বলল,
"আপনি একটু ধৈর্য ধরুন।আমরা সব দিক দিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করব আপনার মেয়েকে খোজে বের করার।"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে চলে আসলো।মনে হাজারটা প্রশ্ন মেয়েটা কোথায় গেলো।তারাশঙ্কর বাবু যতোটা জানে তার মতে ক্রিমিনাল গুলোর খপ্পরে পড়লে মেয়েটার জীবন বরবাদ হয়ে যাবে।
প্রমা শোয়ে আছে একটি ঝকঝকে কারুকাজ করা একটি রুমের ভেতরে একটি পালঙ্কের উপর।প্রমা বিস্মিত হলো, পালঙ্ক ছেড়ে উঠে দাড়ালো।রুম থেকে বের হয়ে দেখলো এটা একটি রাজ প্রাসাদ।প্রাসাদের ভেতর সব কিছুই পুরোনো ধাচের।সব কিছুতেই আভিজাত্যের ছোঁয়া, আধুনিকতা নেই কোথাও।প্রাচীন কালের রাজা বাদশাদের আমলে যেরকম রাজপ্রাসাদ থাকতো ঠিক সেরকম।প্রমা বারান্দা পেরিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে এমন সময় একটি কঠোর কন্ঠ প্রমা'র পায়ের গতি থামিয়ে দিলো।প্রমা ঘুরে দাড়ালো একটি লোক সম্ভবত চাকর বাকর হবে।সেরকম-ই ইউনিফর্ম পড়া, হাতে একটি তীড়।
লোকটি বলল,
"আপনি কোথাও যেতে পারবেন না শেহজাদী।"
প্রমা অবাক হলো, এই লোকটা প্রমা'কে শেহজাদী কেনো বলছে! প্রমা বলল,
"শেহজাদী বলতে? তোমরা আমাকে শেহজাদী কেনো বলছো? আর আমি এখান থেকে যেতে পারব না মানে? আমি এক্ষুনি যাচ্ছি এখান থেকে।মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকী এরা।"
প্রমা রাগে গিজগিজ করতে করতে সিড়ি বেয়ে নিচে নামল।মুল ফটকের দরজা খোলতে গিয়ে চিৎকার মেরে সরে আসলো।মূল ফটকে পাচঁটি ভয়াবহ সাপ ফণাধর অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রমা দৌড়ে এসে পড়ল।চাকরটি বলল,
"মালকায়ে আলমের আদেশ।আপনি যেতে পারবেন না।তার জন্য সব রকমের ব্যাবস্থা করে রাখা হয়েছে।
প্রমা তাজ্জব বনে গেলো।এরা কি প্রমা কে চিড়িয়াখানার জন্তু পেয়েছে! যে যার মত ওকে আটকে রাখার চেষ্টা করছে।প্রমা পালঙ্কের উপর বসে এসব ভাবছে।আর কাব্য ছেলেটাকে খোজছে।কেনো সে ওকে এখানে নিয়ে এলো।আর এরা কারা! কোন দুনিয়ায় আছি আমি!
প্রমা কিচ্ছু বোঝতে পারছে না।এখন রাত না দিন তাও বোঝতে পারছে না।কি করে বোঝবে ওকে তো বাহিরেই বের হতে দিচ্ছে না।
অনেক সময় পরে একজন দাসি এলো প্রমা'র খোজে, বলল,
"শেহজাদি আমাদের রানী মালকায়ে আলম আপনাকে ডেকেছেন।"
প্রমা বলল,
"আপনারা কি সব শেহজাদি শেহজাদী আরম্ভ করেছেন? আমি কোন শেহজাদী না! আমি প্রমা, ক্রাইম রিপোর্টার প্রমা বিশ্বাস।"
দাসি শান্ত স্বরে বলল,
"আমি কিছু জানি না।শুধু জানি মালকায়ে আলম আপনাকে ডেকেছেন এবং আমি আমার দায়িত্ব পালনে সদা তৎপর।"
প্রমা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো রাজ সভায়।রাজ সভায় একজন মহিলা বসে আছেন রানীর আসনে।পড়নে চাকচিক্যময় পোষাক! দেখতে বেশ সুন্দরী।ইনিই মনে হয় রানী।
রানীর পাশেই বাসা রয়েছে কাব্য।কাব্যকে দেখেই প্রমা'র মেজাজ গরম হয়ে গেলো।রানী প্রমা'কে দেখে স্বাগত জানিয়ে বলল,
"স্বাগতম শেহজাদি, তুমি আমার পাশে তোমার আসন গ্রহণ কর।"
প্রমা চোখ কপালে তুলে এসব দেখছে।
প্রমা কিছুই বোঝতে পারছে না কি হচ্ছে এসব।প্রমা ধীর পায়ে রাজ সভার সম্মুখে যাচ্ছে।রানীর মুখে হাসি।কাব্য'র মুখও হাসোজ্জ্বল।
প্রমা রানীর সামনে দাড়ালো রানী বলল,
"আমার পাশে আসন গ্রহন করো।"
প্রমা রানীর ডান পাশের চেয়ারটাতে বসল।রানী সামনের দিকে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলতে লাগল,
"আমি শেরপুর নগরীর সাবেক বাদশাহ তৈমুরের কন্যা বর্তমান রানী জুলাইখা ঘোষনা দিচ্ছি আমার কন্যা শেহজাদি মেহেরের সাথে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র শেহজাদা শুভ্র'র বিবাহ সম্পুন্ন করে শেহজাদা শুভ্র ওরফে কাব্য'কে ভবিষ্যৎ বাদশা ঘোষনা দিচ্ছি।"
সভায় উপস্থিত সকলে করতালির বৃষ্টি ঝরিয়ে দিলো।প্রমা চোখ কপালে তুলে আছে।প্রমা'কে এরা শেহজাদি মেহের বলছে।কিন্তু কেনো?
প্রমা রেগে গেলো।রানি জুলাইখা'কে বলল,
"আপনি ভূল করছেন।আমি কোন শেহজাদি না, আর নাম আমি কোন মেহের।আমার নাম প্রমা, প্রমা বিশ্বাস।আপনারা জোর করে আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন।রেখেছেন তো রেখেছেন তাও আবার বিয়ে দিচ্ছেন (কাব্য'র দিকে আঙ্গুল তুলে) এই জংলী শুয়োরছানাটার সাথে।"
কাব্য রেগে গেলো।রানী জুলাইখা কাব্য'কে থামিয়ে বলল,
"শুভ্র কোন জংলী নয়।সে হচ্ছে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র।আর আমি তোমার আম্মিজান।"
প্রমা আশ্চর্যের সর্বোচ্চ চুড়ায় পৌছে গেলো।কপালে ভাজ টেনে ভ্রু কুচকে বলল,
"আর ইউ ম্যাড রানী জুলাইখা? আমি আপনার মেয়ে নই।আমার বাবা তারাশঙ্কর বিশ্বাস আর আমি মানব সন্তান আপনাদের মত ড্রাকুলা নই।"
কাব্য আর নিজের ক্রোধ সংবরণ করতে পারল না।বলল,
"মেহের তোমার সাহস কি করে হলো আম্মিজানের মুখের উপর কথা বলার?"
প্রমা বলল,
"ইনি আমার আম্মি জান নয়।আর আপনি কি মেহের মেহের শুরু করছেন? আমি মেহের নই।আমি প্রমা বিশ্বাস।"
কাব্য আর এক মূহুর্ত দেরী না করে প্রমা'র হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো প্রাসাদের একটি আলিশান ঘরে।সেখানে গিয়ে একটি পুরোনো সিন্দুক খোলে তার ভেতর থেকে একটি তৈলচিত্র বের করল।সেখানে একটি ৬মাসের বাচ্চা মেয়ে দেখা যাচ্ছে।কাব্য সেই তৈলচিত্রটি প্রমা'র চোখের সামনে ধরে বলল,
"এটা দেখো মেহের।এটা হচ্ছে তোমার ছবি।এই বাচ্চার ঘাড়ে দেখো একটি নীল রঙ্গা লাভ চিহ্ন যা তোমার ঘাড়েও রয়েছে।"
প্রমা ছবিটি হাতে নিয়ে বাচ্চাটিকে দেখল।
বাচ্চাটির হাসি মাখা মুখ।দেখতে বেশ সুন্দর।ঘাড়ে একটি নীল রঙ্গা লাভ চিহ্ন ঠিক এরকম একটি চিহ্ন প্রমা'র ঘাড়েও রয়েছে।প্রমা।বলল,
"এই বাচ্চাটির সাথে আমার সম্পর্ক কি?"
রানী জোলাইখা বলল,
"এটা হলো তোমার ছোট বেলার ছবি।তুমি আমার মেয়ে শেহজাদী মেহের।"
প্রমা বলল,
"আমি যদি শেহজাদি মেহের হই তবে আমি এখানে বড় হলাম না কেনো?"
রানী জোলাইখা বলল,
"কারণ ছোট বেলা তুমি হাড়িয়ে গিয়েছিলে।"
প্রমা হো হো করে হাসল বলল,
"আপনি রুপকথার গল্প শোনালেই কি আমি বিশ্বাস করব?"
রানী জোলাইখা বলল,
"রুপ কথার গল্প নয়।এটা সত্যি,
তোমাকে একজন চুরি করে নিয়েছিলো।"
প্রমা মুখ ঝামটি মেরে বলল,
"আমি বিশ্বাস করি না।"
রানী জোলাইখা বলল,
"চলো তবে আমার সাথে।আমি তোমাকে প্রমাণ দিচ্ছি।"
প্রমা'র হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রানী জোলাইখা।প্রমা'র চোখে মুখে বিস্ময়...

পর্ব ৫

তারাশঙ্কর বিশ্বাস চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে।মা মরা মেয়েটা কোথায় হাড়িয়ে গেলো কে জানে।একমাত্র মেয়েকে চোখের আড়াল হলেই পাগল হয়ে যায়।আর আজ সেখানে এত দিন ধরে মেয়েটা নিখোজ।তারাশঙ্কর বিশ্বাস ঠিক মত খাচ্ছে না, ঘুমাচ্ছে না।সর্বদা চিন্তিত থাকে।
তারাশঙ্কর বিশ্বাস সোফায় চিন্তিত হয়ে বসে আছে চুপচাপ।নন্দলাল তারাশঙ্কর বিশ্বাসের পাশে দাড়ালো, সংকোচ মাখা কন্ঠে ডাকল,
"বাবু...
তারাশঙ্কর বিশ্বাস চোখ মেলে তাকালো।নন্দলাল কে দেখে বলল,
"ওহ নিন্দ তুই, কিছু বলবি?
নন্দলাল ছলছল চোখে বলল,
"বাবু আপনি তো প্রমা মা মনি'র চিন্তায় কিছুই খাইতাছেন না।এইভাবে চললে আপনি অসুস্থ হইয়া যাইবেন।"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস বলল,
"আমার গলা দিয়ে যে অন্ন নামে নারে নন্দ।"
নন্দলাল কি বলবে বোঝতে পারছে না।মেয়েটা জন্মের সময় তন্দ্রা দেবী মারা গেলো তারাশঙ্কর বিশ্বাস কে একা করে।তারপর থেকে মেয়েটা'কে বুকে জড়িয়ে বেঁচে আছে।এখন যদি বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল টা এভাবে নিখোজ থাকে তাহলে সেই মানুষটির মনের অবস্থা কেমন হবে তা তো জানা কথা।
একাকী জীবন বড়ই কষ্টের, মানুষ একা থাকতে পারে না।সুখ সাচ্ছন্দে বেঁচে থাকতে হলে জীবনে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গি/সঙ্গিনী খুবই প্রয়োজন।সঙ্গীবিমুখ হয়ে বেচে থাকা জীবন্ত লাশের মতই স্বাদহীন অতিশয় তিক্ত।তারাশঙ্কর বিশ্বাস সেই তিক্ততা কে সঙ্গি করে বেচে আছে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে।আজ সে এতোটা দূরে,।যেই দুরত্বের কোন তল নেই।তারাশঙ্কর বিশ্বাসের চোখদুটো'তে অশ্রুকণা চিকচিক করছে।শুধু ঝরতে পারছে না আষাঢ়ে বৃষ্টির মতো বাধাহীন বর্ষনে।
তারাশঙ্কর বিশ্বাসের টেলিফোন বেজে উঠল।নন্দলাল ফোন তুলে হ্যালো বলল।তারাশঙ্কর বিশ্বাস মেয়ের শোকে কোন কিছুতেই তেমন খেয়াল রাখে না।নন্দলালের মুখ খুশিতে চিক চিক করে উঠল।তাড়াতড়ি করে তারাশঙ্কর বিশ্বাস এর দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
"আমাদের প্রমা মা মনি'র কল, নেন কথা বলেন।"
নন্দলালের কথা শেষ হওয়ার আগেই টেলিফোনটা নিন্দলালের হাত থেকে খপ করে ছিনিয়ে নিলো তারাশঙ্কর বিশ্বাস।উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
"মা রে তুই কোথায় আছিস? কেমন আছিস? আমাকে একা ফেলে কোথায় চলে গেছিস।"
প্রমা এতোদিন পর বাবার কন্ঠ শোনতে পেয়ে কান্না করে দিলো।বলল,
"বাবা আমি ভালো আছি।তুমি ভালো আছো তো?
তারাশঙ্কর বিশ্বাস হাড়ানো প্রান পাখিটা পাওয়ার মত আনন্দে বলল,
"আমি তোকে ছাড়া কেমন আছি বোঝিস না?আমার লক্ষি মা মনি তুই কোথায় আছিস? আমার কাছে ফিরে আয়।"
প্রমা বিশাল একটি কষ্ট দীর্ঘশ্বাসের অন্তরায় আড়াল করে বলল,
"বাবা আমি ফিরে আসব।কিন্তু তার আগে তোমাকে একটি প্রশ্ন করার ছিলো।"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস বলল,
"তোর যত কথা আছে সব পরে শোনব।তুই আগে আমার কাছে চলে আয়।"
প্রমা বলল,
"বাবা আমার খুব জরুরী কিছু জানার আছে এবং তা এই মুহুর্তে।আমি তারপরে বাড়ি ফিরে আসব।"
"আচ্ছা বল কি জানতে চাস?
প্রমা একটি দারুন অস্থিরতা গোপন করার চেষ্টা করেও পারছে না।মনে সাহস আনার চেষ্টা করছে।বাবার এই শোকাহত মনটা'কে কষ্ট না দিয়েও উপায় নেই।তারাশঙ্কর বিশ্বাস তাড়া দিলো,
"কইরে মা বল কি বলবি।"
প্রমা সাহস এনে বলল, হে ভগবান আমাকে শক্তি দাও।
তারপর মনে সাহস টেনে বলল,
"বাবা...বাবা আমি কি সত্যি তোমার ঔরসজাত সন্তান?"
কথাটি শোনামাত্র তারাশঙ্কর বিশ্বাস স্তব্ধ হয়ে গেলো।
প্রমা ভেতর থেকে আরো অস্থির হয়ে গেলো।তবু আবার বলল,
"বাবা বলো না প্লীজ।"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস অজানা শঙ্কায় অস্থির হয়ে গেলো।কম্পিত স্বরে বলল,
"তুই তো আমারি সন্তান।কিন্তু এই কথা কেনো জিজ্ঞেস করছিস? তুই কোথায় আছিস মা?
প্রমা বলল,
"বাবা আমি একটি জঙ্গলে আটকে আছি।এখানের একজন রানী আমাকে তার মেয়ে বলে দাবী করছে।"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস আতকে উঠলো অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল,
"কিহ...
বলার সময় অদ্ভুত ভাবে তারাশঙ্কর বিশ্বাসের কন্ঠটা কেঁপে উঠল।প্রমা তা খেয়াল করল এবং সন্দেহযুক্ত মনে প্রশ্ন করল,
"বাবা তুমি কি রানী কে চিনো?
তারাশঙ্কর বিশ্বাস খুব দ্রুত জবাব দিলো,
"কে এই রানী জোলাইখা আমি তাকে চিনি না।"
প্রমা চমকিত হলো সেই সাথে ব্যাথিত, বলল
"বাবা তুমি নাম কি করে জানলে আমিতো নাম বলিনি।"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস ধরা পড়ে গেলো, কি করে ঢাকবে এখন।
বলল,
"আমার মনে হলো এই নামটাই হবে।"
প্রমা বলল,
"বাবা এতো কাকতালীয় ভাবে মিলে যায় নাম?
প্রমার বাবা নিশ্চুপ।প্রমা বলল,
"বোঝেছি তুমি আমার জন্মদাতা নও।"
আদিবাসীর তীরে বিদ্ধ হওয়া গুইসাপের মত ছটফট করে উঠল তারাশঙ্কর বিশ্বাস।
প্রমা বলল,
"বাবা আমি ফিরে আসব খুব শীঘ্রই।"
তারাশঙ্কর বিশ্বাস কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলো।তারাশঙ্কর বিশ্বাস রিসিভারটা রেখে দিলো ধপাস করে।নন্দলাল দৌড়ে এলো।
রানী জোলাইখা বলল,
"কি এবার প্রমান হলো?"
প্রমা'র গলা পিপাসায় শোকিয়ে এসেছে।শোকনো কন্ঠে বলল,
"কিন্তু আমি কি করে বাবার কাছে গেলাম আর কি করেই বা মানব সমাজে বেড়ে উঠলাম?"
কাব্য পান পাত্রটা প্রমার সম্মুখে ধরল।প্রমা ঢকঢক করে পানি পান করে নিলো।
রানী জোলাইখা বলল,
"সে অনেক কাহিনী।"প্রমা বলল,
"আমি সব জানতে চাই।"
রানী জোলাইখা বলল,
"আগে তোমার ২২ বছর পূর্ন হোক।তোমার ২২ বছর পূর্ন হতে আরো ২দিন বাকী আছে।এই।দুদিন পরে তুমি এই রাজ্যের রানী হওয়ার ক্ষমতা পাবে।তখন তোমাকে সব বলব।এখন আমি যাচ্ছি।
কাব্য'র উদ্দেশ্যে বলল,
"শুভ্র ওকে রাখিস।"
কাব্য সম্মতি দিলো।চলে গেলো রানী জোলাইখা।
কাব্য বলল,
"চলো তোমাকে এই রাজ্যটা ঘুরে দেখাই মেহের।"
প্রমা বলল,
"দয়া করে আমাকে আর এই অদ্ভুত নামে ডাকবেন না।আমার নাম প্রমা বিশ্বাস।"
শুভ্র হাসল, বলল
"এখনো কি তোমার মনে সন্দেহ আছে তুমি মেহের নও? শ্রদ্ধেয় আম্মিজান তোমার বয়সটাও পুরোপুরি বলে দিলো।"
প্রমা আশ্চর্যান্বিত হলো বটে।তবুও শুভ্রকে পাত্তা না দিয়ে ঝাড়ি মেরে বলল,
"সে যাইহোক আপনি আর আমার পেছনে পেছনে আসবেন না।আমি একাই ঘুরব এই রাজ্য।"
শুভ্র বলল,
"এই রাজ্যে তুমি নতুন।সবাই তোমাকে চিনে না।অনেক বিপদ হতে পারে।"
প্রমা বলল,
"হোক বিপদ, সেসব আমি ভয় পাই না।আমি একা একাই ঘুরব।আর বিপদ কে কি করে দূর করতে হয় তা আমি বেশ ভালো জানি।"
প্রমা আর কোন কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে চললো সামনে।কাব্য পেছন থেকে বেশ কয়েকবার মেহের বলে ডাকল কিন্তু তাতে কর্নপাত করল না প্রমা।
প্রমা রাজপ্রাসাদ টা পেছনে ফেলে বেরিয়ে পড়ল রাজ্য দেখার অজুহাত।উদ্দেশ্য লোকালয়ে যাওয়ার রাস্তা খোজা।প্রমা সব দেখছে, সারি সারি গাছ পালা কিন্তু সব কিছু কেমন যেনো থেমে আছে।গাছে কোন ফুল নেই, নহর (নদী) শোকনো।পাখির কিচির মিচির নেই।কেমন যেনো হাহাকার মিশানো।প্রমা'র মনে হচ্ছে কোন এক রুপ কথার ভয়ংকর দৈত্য এসে সব তছনছ করে দিয়েছে।প্রমা কষ্ট পেলো
এখানকার মানুষ গুলো কেমন যেনো অদ্ভুত দেখতে।আচ্ছা এরা কি রক্তচোষা বাদুড়ের মত নাকী।প্রমা ভাবল সে যাইহোক আমি আমার পালানোর রাস্তা খোজে বের করি।প্রমা আপন মনে রাস্তা খোজছে তখন কিছু ঘোড়ার খুরের আওয়াজ শোনতে পেলো।এদিকেই আসছে যেনো।প্রমা এসব ভাবতে ভাবতেই একটি ছেলে প্রমার সামনে ঘোড়া ছুটিয়ে এসে থামল।
ঘোড়ার লাগাম ধরে টেনে থামালো।হর্ষধ্বনিতে লাফিয়ে উঠলো অশ্ব।
ঘোড়ার উপর থেকে লাফিয়ে নেমে ছেলেটি প্রমাকে ভালো করে দেখলো।গোফে হাত বুলিয়ে বলল,
"সুবহানাল্লাহ! এ যে আসমান থেকে নেমে আসা কোন হুর পরী।"
প্রমার কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে।ছেলেটি বলল,
"আমার নাম মুসা।
ইব্রাহিম মুসা, এই রাজ্যের বীর।"
প্রমা বলল,
"আপনি বীর না ক্ষীর তা দিয়ে আমার দরকার কি? আমার রাস্তা ছাড়ুন।"
মুসা ইব্রাহীম স্বজোরে হেসে উঠল,
"মাশা'আল্লাহ মাশা'আল্লাহ! এমন মেয়েই তো থাকা চাই।"
প্রমা আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো।মুসা ইব্রাহীম ঠোটের উপরের খানদানী গোফে হাত বুলিয়ে হাসলো।লাফিয়ে ঘোড়ায় উঠে লাগাম ধরে টান দিলো।কঠোর মৃত্তিকায় অশ্বের পদধ্বনি স্বজোরে আঘাত হানছে।
প্রমা অনেক চেষ্টা করেও বের হওয়ার রাস্তা খোজে পাচ্ছে না।যতোদুর চোখ যায় শুধু বিস্তৃত বন।
হতাশ হয়ে গেলো প্রমা।ফিরে এলো রাজপ্রাসাদে।
শুভ্র হেসে বলল,
"পেলে না তো বের হওয়ার রাস্তা!"
প্রমা অবাক হলো।শুভ্র বলল,
"আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।এই পুরো রাজ্য আমার নখদর্পণে।"
প্রমা আর কিছু না বলে চলে গেলো।
রাতে খাবার টেবিলে প্রমা বেশ অবাক হলো।টেবিলে হরেক রকম লোভনীয় খাবারে সুসজ্জিত।টেবিলের মাঝে রাজকীয় ক্যান্ডেল জ্বলছে।প্রমা ভেবেছিলো এরা হয়তো মানুষ এর রক্ত মাংস দিয়ে আহার করে।কিন্তু প্রমা'র সে ভুল ভাঙ্গল।এরা কোন রক্ত মাংস কিছুই মুখে দিচ্ছে না।রানী জোলাইখা বলল,
"মেহের পানাহার শুরু করো।"
প্রমা খেতে শুরু করল।
রাজ সভায় রানী জোলাইখা'র পাশে বসে আছে প্রমা এবং শুভ্র।প্রমার বেশ বিরক্ত লাগছে।এসব বাদশাহি বিচার আচার কিছুতেই ভালো লাগছে না প্রমা'র।কিন্তু উঠতেও পারছে না।
রানী জোলাইখা বলল,
"এই রাজ্যে আমি বিপদের আশঙ্কা করছি।তার জন্য আমি আমার রাজ্যকে সুরক্ষিত রাখতে রাজ্যের প্রবেশ পথে বীর সেনাদের নিযুক্ত করতে চাই। আমক এখনি এই রাজ সভায় এই রাজ্যের উত্তম বীর মুসা ইব্রাহিম কে দেখতে চাই।"
জোলাইখার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পেয়াদাগন বেরিয়ে পড়ল।এক ঘন্টার মাঝে মুসা ইব্রাহীম কে রাজ সভায় ডেকে এনে হাজির করল।মুসা ইব্রাহীম কুর্নিশ জানিয়ে বলল,
"মালেকায়ে আলম আপনি আমাকে ডেকেছেন।"
রানী জোলাইখা বলল,
"আমার রাজ্য সুরক্ষিত রাখতে তোমার সাহায্য আমার খুবই প্রয়োজন।"
মুসা ইব্রাহিমের চোখ ততোক্ষনে প্রমা'র দিকে চলে গেছে।প্রমা বেশ বিরক্ত হলো।
মুসা ইব্রাহীম বলল,
"আমি আপনার হুকুম পালনে সদা প্রস্তুত।"
শুভ্র বলল,
"তবে দেরী কেনো? বেরিয়ে পড়ো সৈন্যদের নিয়ে।পাহারায় নিযুক্ত থাকো আগামী দুই দিন।"
মুসা ইব্রাহিম বলল,
"মালেকায়ে আলম যদি অনুমতি দেন একটা কথা জিজ্ঞেস করব।"
জোলাইখা অনুমতি দিলো।মুসা ইব্রাহিম বলল,
"আপনার পাশে বসা এই সুন্দরী রমনীটি কে? তা কি জানতে পারি?"
শুভ্র উত্তেজিত হয়ে বলল,
"সেসব জেনে তোমার দরকার নেই।তুমি তোমার কাজ করো।"
রানী জোলাইখা শুভ্রকে থামিয়ে বলল,
"এ হচ্ছে আমার কন্যা রাজকুমারী মেহের।এ রাজ্যের ভবিষ্যৎ মালেকায়ে আলম।"
মুসা ইব্রাহীম চলে গেলো।
প্রমার খুব মন পোড়ছে।বাবার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে, কেমন আছে কি করছে কে জানে।আর মাত্র একদিন, এই একদিন পর সব জানতে পারবে প্রমা।শুভ্র প্রমা'র পাশে এসে দাড়ালো।প্রমা বিরক্ত হলো।
শুভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
"আজ চাঁদের আলো খুব বেশী আলো দিচ্ছে।চাঁদের আলোয় কি মনে ভালোবাসা জাগছে না?"
প্রমা তাচ্ছিল্যের সুরে মনে মনে বলল,
"ড্রাকুলাদের আবার ভালোবাসা।"
শুভ্র বলল,
"কি হলো মেহের।কথা বলছো না কেনো?
প্রমা বলল,
"চাঁদ সব সময় ই সুন্দর আর সর্বদা সুন্দর জোসনা বিলায়।শুধু মাঝে মাঝে মেঘের আধারে ঢাকা পড়ে ক্ষনিকে তরে মিলিয় চায়।একটু পরে আবার ঠিকই মেঘ কেটে আলো ছড়ায়।"
শুভ্র হাসলো।প্রমা এই প্রথম শুভ্র'র হাসি দেখলো।হাসি দেখে বেশ ভালো লাগল।
আর একদিন পরেই প্রমা আসল সত্য জানতে পারবে।এটা ভেবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল প্রমা।

পর্ব ৬

"শুভ্র তুমি মেহের কে একা ছেড়ে দিও না।মেহের এখনও বিশ্বাস করেনি ও আমার সন্তান।"
শুভ্র বলল,
"আম্মিজান মেহের ইচ্ছে করলেও পালাতে পারবে না।পালানোর সব রাস্তা আমি বন্ধ করে দিয়েছি।পালানোর চেষ্টা করলেও ধরা পড়ে যাবে।"
রানী জোলাইখা বলল,
"খুবই ভালো কাজ করেছো।আজ রাতেই ওর ২২বছর পূর্ন হবে।এরপর ও আর পালানোর চেষ্টা করবে না।"
কথাটি বলে রানী জোলাইখা চলে যাচ্ছিলো।
এমন সময় প্রমা এসে রানী জোলাইখার চাদর টেনে ধরল।
রানী জোলাইখা অত্যন্ত বিস্ময়ের সহিত পেছনে ঘুরে তাকালো।শুভ্র ভয়ানক ক্রোধে প্রমা'র দিকে হাত তুলে বলল,
"মেহের! তোমার এতো বড় সাহস হলো কি করে তুমি আম্মিজানের চাদর টেনে ধরেছো।"
রানী জোলাইখা বলল,
"মেহের তোমাকে এত বড় সাহস কে দিলো যার জন্য এত বড় দুঃসাহস দেখালে?"
প্রমা চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
"সাহস কখনো কেউ দেয় না মালেকায়ে আলম।সাহস অর্জন করে নিতে হয়।"
প্রমা সবার রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে বলল,
"আপনারা আমাকে জোর করে অন্যায় ভাবে আটকে রেখেছেন।মিথ্যা রুপ কথার গল্প সাজিয়ে আমাকে প্রমা থেকে মেহের বানাতে চান।এটা খুবই হাস্যকর মালেকায়ে আলম।"
রানী জুলাইখা বলল,
"আজ রাতেই সব প্রমান হয়ে যাবে তুমি মেহের নাকি প্রমা বিশ্বাস।"
কথাটি বলে রানী জুলাইখা চলে গেলো।শুভ্র কোষ মুক্ত তলোয়ার টি আবার কোষ বদ্ধ করল।প্রমা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
"আমাকে কি তলোয়ার দিয়ে কাটার জন্য কোষ মুক্ত করেছিলেন?"
শুভ্র কিছু বলল না।প্রমা বলল,
"এসবে আমি কিছুতেই দমে যাবো না।আপনাদের ছলচাতুরী আমি বেশ বোঝতে পেরেছি।"
শুভ্র ক্রোধে ফেটে পড়ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।প্রমা চলে গেলো।
প্রমা'র কিছু ভালো লাগছে না।খুব তার বাবার কথা মনে পড়ছে।কেমন আছে ওর বাবা কে জানে!
প্রমা'র ভাবনাতে বাধা ফেলল রুমে এক দাসীর পদার্পন।দাসিটি এসে বলল,
"শেহজাদি আপনি তৈরী হয়ে নিন, শাহজাদা শুভ্র আপনাকে নিয়ে ভ্রমনে বেরোবে।"
প্রমা বলল,
"আমাকে শেহজাদি বলে ডাকবে না।আমি তোমাদের শেহজাদি নই।"
দাসিটি চুপ করে রইলো।প্রমা বোঝতে পারলো এদের বলে লাভ নাই।এরা তো সামান্য দাসী।এই রাজ্যের রানী যা বলবে তাই শোনবে।প্রমা আর কিছু না বলে বলল,
"তুমি যাও আমি আসছি।"
দাসী চলে গেলো।প্রমা আর কিছু না বলে তৈরী হয়ে নিলো।তারপর বের হলো।শুভ্র রাজকীয় টমটম গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রমা আসলো শুভ্র'র সামনে।শুভ্র প্রমার দিকে তাকালো, প্রমা'র সাজ সজ্জা দেখে শুভ্র'র চক্ষু ছানাবড়া।প্রমা কে দেখেই যাচ্ছে চুপচাপ।মাটির তৈরী কোন মানুষ এতো সুন্দর হয় শুভ্র'র মনে হয় জানা ছিলো না।প্রমা কে দেখে চোখ সরাতেই পারছে না।
প্রমা বলল,
"এইযে আপনি কি দেখছেন এভাবে হা করে তাকিয়ে থেকে?"
শুভ্র থতমত খেয়ে গেলো।প্রমা বলল,
"জীবনে মেয়ে দেখেন নাই? আর দেখবেন ই বা কি করে এই রাক্ষসপুরী তে পিশাচ ছাড়া আর কি বা আছে।"
কথাটা শোনে শুভ্র'র রাগ উঠে গেলো।গাড়িতে উঠে ঘোড়ার লাগাম টেনে বলল,
"গাড়িতে উঠে বসুন।"
প্রমা গাড়িতে উঠার জন্য এগোলো।উঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না।গাড়ি বেশ উঁচু, প্রমা উঠতে গেলে পড়নে পড়া মুক্তোখচিত রাজকীয় জামা পায়ে লেগে পড়ে যেতে পারে।
শুভ্র বিরক্তি নিয়ে নেমে আসতে আসতে বলল,
"শুধু কথাই বলতে পারেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই না।সামান্য একটা গাড়িতে উঠা শিখেনি অথচ সব সময় মুখে খই ফুটতেই থাকে।"
প্রমা মনে মনে বলল,
"সুযোগ পেয়ে রাক্ষস টা খোঁচা দিতে ছাড়ল না।"
শুভ্র নেমে এসে বসে পড়ল, হাটু গেড়ে বসল।প্রমা কে বলল,
"মেহের আমার উরু তে পা রেখে গাড়িতে উঠে বসো।"
প্রমা শুভ্র'র এমন কাজ দেখে হতবাক হয়ে গেলো।প্রমা উঠতে পারছে না।উরু তে পা দিতে কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে।শুভ্র বলল,
"এতো কিছু পারেন শেহজাদি মেহের, আম্মিজানের চাদর টেনে ধরতে পারে অথচ আমার উরু তে পা দিয়ে গাড়িতে উঠতে পারছে না অদ্ভুত!"
প্রমা'র এই টিটকারী আর সহ্য হচ্ছে না।রেগে গিয়ে পা রাখলো শুভ্র'র উরু তে।উঠে বসলো গাড়িতে।
শুভ্র ঘোড়ার লাগাম ধরে টান দিলো।ঘোড়া ছুটতে লাগল।ঘোড়া ছুটে চলছে বন জঙ্গল পেছনে ফেলে।প্রমা এসব দেখে শান্তি পাচ্ছে না।প্রকৃতির এই রুক্ষতা দেখে প্রমা'র বুকে বিষাদের সুর বেজে গেলো।প্রমা বলল,
"শুভ্র এই জঙ্গল এমন কেনো? দেখে শান্তি পাচ্ছি না।প্রকৃতি হবে প্রানবন্ত সজীব।যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে কিন্তু এই রুক্ষতা দেখে ভালো লাগছে না।"
শুভ্র বলল,
"সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে আবার।"
প্রমা আর কথা বাড়ালো না।শুভ্র গাড়িটি একটি জায়গায় থামালো।প্রমা'কে আবার আগের মতো করে গাড়ি থেকে নামালো।প্রমা সামনে তাকিয়ে দেখলো বিশাল এক ঝর্না।সুবিশাল পাহাড়ের বুক চিরে কল কল করে বয়ে চলছে অবিরত।
প্রমা ঝর্না দেখে খুব খুশি হলো।ছুটে গেলো ঝর্নার জলে পা ভেজাতে।কিন্তু পানি কেমন যেনো নীল বর্নের।প্রমা অবাক হলো।পানি এমন কেনো।
শুভ্র পাথরের উপর বসেছে এসে।প্রমা পানিতে স্পর্শ করবে এমন সময় শুভ্র বলল,
"সাবধান মেহের পানিতে হাত লাগিও না!"
প্রমা থমকে গেলো।খানিক টা অবাক হয়ে বলল,
"হাত লাগাবো না কেনো?
কি সমস্যা?"
শুভ্র বলল,
"তোমার ঘাড়েও কিন্তু নীল রঙের লাভ চিহ্ন আছে।যার সাথে মিলে গেছে ঝর্নার পানি।যদি তুমি হাত লাগাও অনেক কিছু হতে পারে।"
প্রমা বলল,
"এসব কিছু হবে না।আপনাদের মাথায় প্রব্লেম আছে।তাই এমন রুপ কথা রচনা করে যাচ্ছেন অবিরত।"
শুভ্র বলল,
"রুপ কথা নয় আমার মনে কু ডাকছে খুব।"
প্রমা শুভ্র'র কথায় পাত্তা না দিয়ে পানিয়ে পা ডুবিয়ে জল ছিটাতে লাগল শুভ্র'র দিকে।শুভ্র অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারল না প্রমা'কে।প্রমা'র জল ছুড়াছুড়ি তে খানিক জল এসে পড়ল প্রমা'র ঘাড়ের নীল রঙের লাভ চিহ্নে।সাথে সাথে প্রমা'র শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে গেলো।প্রমা নিরব হয়ে গেলো।চুপ চাপ উঠে এলো শুভ্র'র কাছে।শুভ্র উঠে দাড়ালো।প্রমা'র দিকে তাকিয়ে আছে কি হলো ওর বোঝার চেষ্টা করছে।প্রমা শুভ্র'র কাছে এসে শুভ্র'র শার্টের কলার টেনে ধরে নেশা জড়ানো কন্ঠে বলল,
"এই শেহজাদা কাব্য আমি রক্ত খাবো।"
শুভ্র ঘাবড়ে গেলো।কি বলছে মেহের।কি হয়ে গেলো ওর।শুভ্র বলল,
"রক্ত! রক্ত কোথায় পাবে তুমি?"
প্রমা বলল,
"জানি না আমার রক্ত চাই।"
শুভ্র কিছু বোঝে উঠার আগের শুভ্র'র শার্টের বোতাম খোলে বুকের বাম পাশে কামড় লাগালো প্রমা।শুভ্র হাত শক্ত করে চোখ বন্ধ করে দাতেঁ দাতঁ চেপে ব্যাথা সহ্য করছে নিরবে।

পর্ব ৭

রানী জোলাইখা শুভ্র'র উপর বেশ রেগে রয়েছে।কি জন্য শুভ্র প্রমা কে ঐ নীল পানি ওয়ালা ঝর্নায় নিয়ে গেলো।রানী জোলাইখা বলল,"শুভ্র তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে কেনো গেলে ঐ নীল পানির ঝর্নায়? তুমি জানো ওটা একটা অভিশপ্ত ঝর্না?"
শুভ্র অবাক হয়ে তাকালো।
রানী জোলাইখা বলল,
"শেহজাদি মেহেরের আজ ২২ বছর পূর্ন হতে চলেছে।আর রাত ১২ টা বাজলেই মেহেরের ২২ বছর পূর্ন হয়ে যাবে কিন্তু তার আগেই তুমি ওর অঘটন ঘটিয়ে দিলে।"
শুভ্র বলল,
"আম্মি জান কি এমন রহস্য ঐ নীল পানির ঝর্নায়?"
রানী জোলাইখা বলতে যাবে তখনি একজন রাজ ভৃত্য হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল,
"মালেকায়ে আলম শেহজাদী পাগল হয়ে গেছেন।একটি দাসী কে মেরে ফেলেছেন।"
শুভ্র এবং রানী জোলাইখা আতংকিত চোখে তাকালো ভৃত্যের দিকে।
ভৃত্যের কথা অনুযায়ী এক প্রকার দৌড়ে গেলো প্রমা'র রুমে।প্রমা বিছানায় শুয়ে আছে।একটি দাসীর নিথর দেহে পড়ে আছে।
প্রমা'র মুখে রক্ত লেগে আছে।রানী জোলাইখা হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্র বলল,
"এটা কি করেছো মেহের? একটা নিরপরাধ ভৃত্যকে মেরে ফেললে?"
প্রমা কটমট করে তাকিয়ে বলল,
"আমার রক্ত চাই রক্ত, অনেক রক্ত চাই।আমার পিপাসা মেটানোর জন্য রক্তের ব্যাবস্থা করো।নাহলে মরবে সবাই।"
রানী জোলাইখা প্রমা'র কাছে গিয়ে মাথায় হাত বোলালো, প্রমা শান্ত হলো কিছুটা তারপর বলল,
"মেহের তুমি অবুঝ হইও না।আমি তোমার জন্য অবশ্যই রক্তের ব্যাবস্থা করব তার আগে তুমি শান্ত হও।"
প্রমা আক্রোশ ভরে তাকালো রানী জোলাইখার দিকে।রানী জোলাইখা অভয় দিলো মাথা নেড়ে।
শুভ্র কে নিয়ে বেরিয়ে এলো রানী জোলাইখা।শুভ্র বলল,
"আম্মিজান এবার কি হবে? কি হলো ওর?"
রানী জোলাইখা চিন্তিত মুখে বলল,
"আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র গুরুদেব শমসের-ই দিতে পারবে।"
শুভ্র মাথা তুলে তাকালো।
গুরুদেব কে ডেকে আনা হয়েছে রাজ দরবারে।রানী জোলাইখা সব খোলে বলল।কিভাবে কি হয়েছে সব।গুরুদেব শমসের কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,
"শেহজাদি মেহের অভিশপ্ত হয়েছে।"
কথাটি শোনামাত্রই তড়িৎ গতিতে গুরুদেবের দিকে তাকালো রানি জোলাইখা এবং শুভ্র।
রানী জোলাইখা বলল,
"কি বলছেন আপনি গুরুদেব?"
গুরুদেব শমসের মাথা দুলিয়ে বলল,
"হ্যা মালেকায়ে আলম আমি ঠিকই বলছি।রাজ্যের ঐ নীল ঝর্নাটি রাক্ষসী কুরুম্ভা'র শাপে অভিশপ্ত হয়েছিল।"
রানী জোলাইখা অবাক হচ্ছে রীতিমত।যেনো নতুন কিছু শোনছে।গুরুদেব বলল,
"মালেকায়ে আলম আপনি কি ভুলে গেছেন সেই রাতের কথা?"
রানী জোলাইখা বলল,
"আমি ভুলিনি গুরুদেব।আমি কিচ্ছু ভুলি নাই।সেই রাত আমার জীবনের কালো রাত।সেই রাতের কথা আমি কোন দিন ভুলতে পারব না।"
সেই রাতে ড্রাকুলাদের রাজা যে অন্যায় করেছিলো এই রাজ্যের উপর তা কখনো ভুলবার গুরুদেব।"
গুরুদেব বলল,
"শেহজাদি মেহেরের ২২বছর আজ পূর্ন হবে এই সময়ে এই বিপদ ঘটে গেছে এবার বুঝি শেষ রক্ষাটাও হবে না।"
রানী জোলাইখা অজানা ভয়ে শিউরে উঠলো।উঠে দাড়ালো সিংহাসন ছেড়ে, তরবারি কোষমুক্ত করে বলল,
"না না এ হতে পারে না গুরুদেব।আপনি যে কোন একটা উপায় বের করুন যার বিনিময়ে আমি মেহেরকে ভালো করতে পারব।"
গুরুদেব কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল,
"উপায় একটা আছে মালেকায়ে আলম।"
রানী জোলাইখা ঝটপট বলল,
"কি উপায় গুরুদেব?"
গুরদেব বলল,
"যদি আজ রাত ১২ টার আগে শেহজাদি মেহের'এর সাথে কোন শেহজাদার বিয়ে দিতে পারেন যে কিনা পুরোপুরি কুমার, কোন মেয়েকে স্পর্শ করেনি এমন শেহজাদার সাথে তবে দুই পবিত্র দেহের মিলনের ফলে সৃষ্টি হবে এক মহাশক্তি! যে শক্তি দিয়ে ধ্বংষ করতে পারবেন সকল অশুভ শক্তিকে।"
রানী জোলাইখা বলল,
"আমি আমার ভ্রাতুষ্পুত্র শুভ্র আহমেদ কাব্য'র সাথে শেহজাদী মেহেরের বিবাহ এখনি সম্পন্ন করতে চাই।"
গুরুদেব বলল,
"বেশ ভালো প্রস্তাব কিন্তু সাবধান শেহজাদা কে একেবারে পবিত্র হতে হবে।কোন মেয়েকে যদি কোন দিন অন্যভাবে স্পর্শ করে থাকে তবে হীতে-বিপরীত হতে পারে।"
রানী জোলাইখা বলল,
"কি রকম বিপদ?
"শেহজাদী মেহের চির দিনের জন্য রাক্ষসী হয়ে যেতে পারে।"
রানী জোলাইখা চাপা আর্তনাদ করে উঠলো।গুরুদেব বলল,
"রাক্ষসী কুরুম্ভা'কে একটি রাক্ষস মিথ্যা প্ররোচনায় ফাসিয়ে তার সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে ঐ ঝর্নার তলদেশে পুতে দিয়েছিলো।মরার আগে রাক্ষসী কুরুম্ভা এই অভিশাপ দিয়ে গেছে যে মানুষ ঐ ঝরনার পানি স্পর্শ করবে সে-ই অভিশপ্ত ড্রাকুলায় পরিনত হবে।তবে যদি কোন পবিত্র মানুষ এর সাথে বিবাহ হয় তবেই এই অভিশাপ কাটবে।"
রানী জোলাইখা বলল,
"আমি এক্ষনি বিবাহের ব্যাবস্থা করছি।"
প্রমা রক্তের তৃষ্ণায় চিৎকার চেচামেচি করছে।ভয়ে কেউ সামনে যাচ্ছে না।রানী জোলাইখা পান পাত্র ভরে রক্ত নিয়ে প্রমা'র রুমে প্রবেশ করল।প্রমা রুমের সমস্ত কিছু লন্ডভন্ড করে ফেলছে।রানী জোলাইখা কে দেখে রেগে গেলো প্রমা।তেড়ে আসলো রানী জোলাইখার দিকে।রানী জোলাইখাকে কামড় দ
দেওয়ার আগেই রক্ত ভর্তি পেয়ালা তুলে ধরল প্রমার সামনে।রক্ত দেখে প্রমা অস্থির হয়ে গেলো।খপ করে হাতে তুলে নিলো গ্লাসটি।তারপর ঢক ঢক করে গিলতে লাগল তরতাজা রক্ত।রানী জোলাইখা সব দেখলো খুব ভালো করে।প্রমা রক্ত পান শেষে একটু শান্ত হলো।রানী জোলাইখা একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
"মেহের একটি কথা বলার ছিলো।"
প্রমা তাকালো কথাটি শোনার জন্য।রানী জোলাইখা বলল,
"আমি তোমার বিবাহের ব্যাবস্থা করেছি।শেহজাদা শুভ্র'র সাথে আজ এবং এক্ষনি তোমার বিবাহ দেবো।"
প্রমা মুখের রক্ত মোছে বলল,
"আমি বিয়ে করব না।"
রানী জোকাইখা বলল,
"যদি তুমি বিয়ে না করো তাহলে আজ থেকে তুমি কোন রক্ত পাবে না এমনকি তোমার কক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখা হবে।কেউ আসবে না তোমার কক্ষে।রক্তের অভাবে ক্ষুধা তৃষ্ণায় তুমি ছটফট করতে করতে মারা যাবে।"
প্রমা কিছু একটা ভেবে বলল,
"আর যদি বিয়ে করি?
"বিয়ে করলে তুমি অনেক অনেক রক্ত পাবে, যার ব্যাবস্থা আমি তোমাকে করে দেবো।"
প্রমা কিছু একটা চিন্তা করে বলল,
"ঠিক আছে বিয়ের ব্যাবস্থা করুন"।
রানী জোলাইখা যেনো স্বস্থি পেলো।
শুভ্র' তার কক্ষে পায়চারী করছে।কিছু একটা চিন্তা করছে।এমন সময় একজন ভৃত্য এসে বলল,
"শেহজাদা মালেকায়ে আলম আপনাকে জরুরী তলব করেছেন"।
ভৃত্যটি চলে গেলো।শুভ্র রানী জোলাইখার কক্ষে হাজির হলো।রানী জোকাইখা বলল,
"শুভ্র তোমাকে একটি প্রশ্ন করার ছিলো আশা করি সরাসরি সঠিক জবাব দেবে।"
শুভ্র বলল,
"আম্মিজান প্রশ্ন করুন।"
রানী জোকাইখা বলল,
"গুরুদেব কি বলল সব শোনেছো নিশ্চই।"
শুভ্র হ্যা বোধক উত্তর দিলো।রানী জোলাইখা বলল,
"তোমার সাথে শেহজাদি মেহেরের বিয়ের আয়োজন করেছি ইহাও তোমার অজানা নয় অতএব তুমি সঠিক ভাবে একটি প্রশ্নের জবাব দাও।"
শুভ্র রানী জোলাইখার জবাবের অপেক্ষাতে রয়েছে।রানী জোলাইখা বলল,
"তুমি কি সত্যি কুমার?"
শুভ্র থতমত খেলো।রানী জোলাইখা বলল,
"সকল সংকোচ ফেলে প্রশ্নটি করেছে তোমাদের ভালোর জন্যই।আশা করি নিরাশ করবে না"
শুভ্র বলল,
"আম্মিজান আমি এখনো কুমার, আমি কোন মেয়ের সাথে কখনো শাররীক সম্পর্কে লিপ্ত হয়নি।"
রানী জোলাইখা হাসল বলল,
"সাবাস! এবার তবে বিবাহের জন্য প্রস্তুত হও।"
শুভ্র বলল,
"যথা আজ্ঞা আম্মিজান।"
শুভ্র বেরিয়ে এলো।
ইব্রাহিম মুসা সীমান্তে পাহারারত রয়েছে।ঘাটিতে বসে মদ খাচ্ছে বেহুশের মত।সীমান্তে পাহাড়া দিচ্ছে অন্যান্য প্রহরীরা।ইব্রাহিম মুসা নেশার ঘুরে ঘাটি থেকে বেরিয়ে গেলো।বাহিরে এসে প্রহরী কে বলল,
"ভালো করে পাহাড়া দে।মালেকায়ে আলম যেনো ভুল ধরতে না পারে।"
ইব্রাহিম মুসা চলে এলো ওখান থেকে।ঘোড়ায় চেপে ছুটে গেলো লোকালয়ে।একটি সুন্দরি মেয়ে নদী থেকে কলস ভরে পানি নিচ্ছিলো তাকে দেখে ইব্রাহিম মুসা ঘোড়া থামালো।মেয়েটি ইব্রাহিম মুসার চোখের ভাষা বোঝতে পেরে তাড়াতাড়ি পা চালাতে লাগল কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না।ইব্রাহিম মুসা ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নেমে মেয়েটিকে কাধে তুলে নিলো।মেয়েটির হাত থেকে কলস পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।ঘোড়ায় বসিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে চলল ঘাটিতে।মেয়েটির চিৎকার চেচামেচি চার দেয়ালের মাঝে বদ্ধ হয়ে গেলো।
শুভ্র এবং প্রমা'র বিয়ে হয়ে গেছে ইগিমধ্যে।এমিন সময় একজন বৃদ্ধ এসে রানী জোলাইখার পায়ে পড়ে গেলো।কেঁদে কেদে বলল ইব্রাহিম মুসা'র কু-কীর্তির কথা।উল্লেখ্য মেয়েটির পিতা হচ্ছে উক্ত বৃদ্ধ মহাশয়।
রানী জোলাইখা শুভ্র কে ডাকল।শুভ্র বলল,
"আদেশ করুন আম্মিজান।"
রানী জোলাইখা বলল,
"এই বৃদ্ধের মেয়ে সহ ইব্রাহিম মুসা কে হাজির করো আমার দরবারে।"
শুভ্র রানী জোলাইখার কথা শোনে তিল পরিমান দেরী না করে ঘোড়া ছুটিয়ে চলল।
ইব্রাহীম মুসা গ্লাসে মদ ঢেলে মুখে চালান করছে।সামনেই বসে আছে অর্ধ নগ্ন হয়ে মেয়েটি।চোখে জল, সম্মান হাড়ানোর ব্যাথায় কুকড়ে যাচ্ছে ওর মন।ইব্রাহিম মুসা হেসে বলল,
"আমি তোকে আমার নাচনেওয়ালী বানাবো একদম চিন্তা করিস না।তোর পরিবার সুখে থাকবে।"
মেয়েটির কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।ইব্রাহিম মুসা এতে বেশ বিরক্ত হলো।কাছে এসে বলল,
"কাঁদিস। না তো।চল আরেকবার হয়ে যাক।"
কথাটি বলেই অটঠাসিতে ফেটে পড়লো।এমন সময় ঘোড়া ছুটে আসার আওয়াজ শোনে ঘাটি থেকে বেরিয়ে এলো শুভ্র।শুভ্র ছুটে এসে ইব্রাহিম মুসাকে টেনে বের করে এনে শেকল দিয়ে বেধে ফেলল পা।তারপর ঘোড়ার সাথে বেধে ছুটে চলল রাজ দরবারে।
রানী জোলাইকখার সামনে বসে আছে নির্যাতিতা মেয়েটি।সে কাদঁছে।
রানী জোলাইখা ইব্রাহিম মুসার দিকে তাকিয়ে বলল,
"আমার সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলে তুমি।আমার রাজ্যে থেকে একাজ করলে কি করে?
ইব্রাহিম মুসা মাথা নীচু করে আছে।রানী জোলাইখা বলল,
"তুমি এই মুহুর্তে পদ্ম কে বিবাহ করবে।"
ইব্রাহিম মুসা বলল,
"কিন্তু মালেকায়ে আলম...
রানী জোলাইখা বলল,
"আমার কথাই শেষ কথা।"
রানী জোলাইখা চলে গেলো।ইব্রাহিম মুসা রোষানল এ ফেটে পড়ল মনে মনে।
প্রমা বসে আছে ফুল শয্যার পালঙ্কে।শুভ্র ভেতরে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।প্রমা কে আজ দারুন সুন্দর লাগছে।শেহজাদীর রুপ যেনো ঠিকরে পড়ছে।শেহজাদীর এই রুপ দেখে যেনো আকাশের চাঁদ ও লজ্জায় মুখ লুকাবে।শুভ্র প্রমা'র কাছে এসে বলল,
"মাশা'আল্লাহ! সুবহানআল্লাহ
আমি একি রুপ হেরিলাম মেহের।তুমি তো পরীদের মহারানী।"
প্রমার হাতটি শুভ্র নিজের দু হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রমার হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেলো।শিউরে উঠলো প্রমা।
শুভ্র বলল,
"তুমক এতোটাই সুন্দর যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম।তোমার রুপের বর্ননা করার মতো ভাষা জ্ঞান আমার নেই মেহের।"
প্রমা তাকালো শুভ্র'র চোখের দিকে।শুভ্র নেশার ঘোরে চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।এক অন্যরকম ভালো লাগার আবেশ জড়িয়ে ধরল শুভ্রকে।
প্রমার সাথে মিশে গেলো...
চলবে,
© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.