সেই রাতে - (পর্ব ১, ২ ও ৩) - লোমহর্ষক ভয়ংকর ভূতের গল্প

সেই রাতে
লেখক: রাহিমা নিশাত নিঝুম
পর্ব: ১, ২ ও ৩



পর্ব

অন্ধকার রাতে ঝোপ ঝাড়ের ভেতর দিয়ে দৌড়াচ্ছে প্রমা।পেছনে এক দল নরখাদক।তাদের মুখে লেগে রয়েছে রক্ত আর মাংস।কিছুক্ষন আগেই তিনটি মেয়েকে খুবলিয়ে খুবলিয়ে নির্মম ভাবে খেতে দেখে ফেলেছিলো প্রমা।অত্যন্ত ভয়ংকর নিষ্ঠুর ভাবে মেয়ে তিনটির বুকে নখ ডাবিয়ে বুক চিরে কলিজা বের করে যখন মুখে নিয়েছিলো নরখাদকগুলো তখন প্রমা আড়াল থেকে এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠেছিলো।কোন মানুষ এর চিৎকার একটি সুচতুর নরখাদকের কানে গিয়ে পৌছে আর ভালো করে কান খাড়া করে শোনে এবং বাকীদের সতর্ক করে।অন্য নরখাদকগুলো সতর্ক চোখে ভালো করে তাকিয়ে একটি মেয়েকে দেখতে পায়।
অমনি সবাই মিলে হুংকার তুলে প্রমা'কে ধরার জন্য দৌড় লাগায়।প্রমা পাগলের মত দৌড়াচ্ছে।নাম না জানা জংলী কাটা প্রমা'র পায়ে লেগে পা ছিলে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে কিন্তু সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার।নিজের প্রাণের কাছে এই রক্ত যে অতি তুচ্ছ।
নরখাদক গুলো বুনো শয়ুরের মত লম্বা লম্বা পা ফেলে দৌড়ে আসছে।জংলী কাটা বা লতা পাতা নরখাদকদের মোটা চামড়া ভেদ করে রক্ত ঝরাতে অক্ষম।
প্রমা দৌড়াতে দৌড়াতে জঙ্গলের ভেতর একটি জায়গায় এসে দাড়ালো।এই জায়গাটির চারটে মোড়।কোন দিকে যাবে প্রমা তা ভাবার সময় নেই।পেছনে হিংস্র নরখাদকের দল।
প্রমা কিছু না ভেবেই উত্তর দিকের রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে লাগল।নরখাদক গুলো ষাড়ের মত গর্জন করতে করতে প্রমা'র পেছনে দৌড়াচ্ছে।
প্রমা দৌড়াতে দৌড়াতে একটি বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো।
বাড়িটি কাঠের তৈরী।নড়বড়ে কাঠ গুলো যেনো একটু জুরে বাতাস বইলে-ই উড়ে যাবে দূর দিগন্তে।প্রমা কোন উপায়ন্তর না দেখে বাড়িটির ভেতর ঢুকে গেলো।বাড়িটির ভেতর টা অদ্ভুত ভয়ংকর।দেয়াল গুলো তে রক্ত লেগে আছে।চারপাশ অতি নোংরা।কেমন যেনো ভোটকা গন্ধ।পচাঁ রক্তের দূর্গন্ধে প্রমা'র পেট ফোলে যাওয়ার উপক্রম।
প্রমা ভীরু চোখে চারপাশটা দেখতে লাগল।বাহিরে চাঁদের ক্ষীণ আলোয় দেয়ালে একটি ছেলের ছবি দেখতে পেলো।ছেলেটি মোহনীয় সুন্দর।গায়ের রং শ্যামলা কিন্তু দেখতে কেমন মোহনীয়।ছেলেটির হাসোজ্জ্বল চোখের দিকে তাকালো প্রমা।কেমন একটা ঘোরের মাঝে পড়ে যাচ্ছে।
এমন সময় পেছন থেকে একটু মোটা রাশভারী কন্ঠের আওয়াজ শোনা গেলো,
"কে তুমি?"
প্রমা পেছনে ঘুরে তাকালো।এতো এই ছবির ছেলেটি, কালো চাদর গায়ে জড়িয়ে হারিকেন হাতে নিয়ে বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
প্রমা'র নিরব চাহনীতে ছেলেটি একটু বিরক্ত হলো যেনো।
প্রমা এটা বোঝতে পেরে বলল,
"আমার নাম প্রমা, প্রমা বিশ্বাস! আমার পেছনে কিছু নরখাদক তাড়া করেছে তাদের থেকে নিজের প্রাণ রক্ষা করতে দৌড়াতে দৌড়াতে এই বাড়িতে উঠে এসেছি।"
প্রমা একটু থামল, ছেলেটি তাকিয়েই আছে।খুব অবাক হয়েছে বটে এই নির্জন জঙ্গলে কোন মেয়েকে একা দেখে।প্রমা গলা খাকারী দিয়ে বলল,
"মনে হচ্ছে এটা আপনার বাড়ি।আমাকে কি দয়া করে একটু আশ্রয় দিবেন আজকের রাতটা থাকার জন্য?"
ছেলেটি আবারো বেশ অবাক হলো।প্রমা অনুনয় ভরা কন্ঠে বলল,
"প্লীজ না করবেন না।আমি আজকের রাতটাই শুধু আশ্রয় চাচ্ছি।খাবার দাবার কিচ্ছু দিতে হবে না।শুধু আজকের রাতটাই।"
প্রমা'র চিন্তাযুক্ত ঘর্মাক্ত চেহেরা দেখে
ছেলেটি কিছু একটা ভাবলো তারপর বলল,
"ঠিক আছে থাকবেন কিন্তু খবরদার এই ঘরের কোন জিনিসে হাত লাগাবেন না।আমরা আমাদের ঘরের কোন জিনিসে অপরিচিত কাউকে হাত লাগাতে দেই না।এতে এগুলো অপবিত্র হওয়ার ভয় থাকে।"
প্রমা ঘরের নোংরা অবস্থায় আরেক বার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ছেলেটির কথাতে যেনো বিষম খেলো।এতো এমনিতেই অপবিত্র আর কি অপবিত্র হবে।যাইহোক এসব না ভেবে ছেলেটির শর্ত মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।তাই প্রমা রাজী হয়ে গেলো।
ছেলেটি বাহিরে গিয়ে নরখাদক গুলোর সামনে দাড়ালো।প্রমা দূর থেকে দেখছিলো এসব।
ছেলেটি নরখাদক দের উদ্দেশ্যে বলল,
"এই মেয়েটি আমার অতিথী।"
এতোটুকু বলতেই নরখাদকগুলো মাথা নীচু করে কুর্নিশ জানিয়ে চলে গেলো।প্রমা বেশ অবাক হলো এবং সেই সাথে এটাও ভাবলো ছেলেটি কি তবে এই নরখাদকগুলোর মহারাজ! প্রমা কি প্রান রক্ষা করতে এসে প্রান সংকটে ফেলল?
প্রমা'র ভাবনার মাঝে ছেলেটি প্রমা'র কাছে গিয়ে বলল,
"ওরা চলে গেছে।আপনি এবার থাকতে পারেন নিশ্চিন্তে।"
প্রমা ভয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।মৃদু স্বরে হ্যা বলে দিলো।ছেলেটি ফিরে আসতে গিয়ে আবার পেছনে ঘুরল।প্রমা'র কাছে এগিয়ে গিয়ে বসে পড়ল মাটিতে তারপর প্রমা'র পায়ে বুলিয়ে বলল,
"এতো অনেক খানি কেটে গেছে।"
প্রমা বলল,
"এতে কিছু হবে না।সেড়ে যাবে,"
প্রমা'র কথা'কে পাত্তা না দিয়ে রক্তে হাত লাগালো, মুছে নিলো পায়ের রক্ত।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে কিঞ্চিত রহস্যময় হাসি টেনে বলল,
"আমি কাপড় নিয়ে আসছি বেধে দেয়ার জন্য।"
প্রমা হা করে তাকিয়ে রইলো।ছেলেটি চলে গেলো ভেতরের ঘরে।রক্ত মাখা হাত নিয়ে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।যেনো বহুদিনের সেই অভ্যাস কেউ জাগিয়ে দিয়েছে.....

পর্ব ২

রাত আরো গভীর হয়েছে।জঙ্গলের চারপাশ থেকে ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।বাহিরে পাতায় পাতায় ছন্দ তুলে হিমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।প্রমা'র দু'চোখে ঘুম নেই।শুধু নিজের কপাল চাপড়াচ্ছে।
কেনো যে এই জঙ্গলে এলো এভাবে একা একা।বাবা মা বার বার না করেছিলো আসতে তবুও এসেছে বন্ধুদের কাছে বাজি ধরে।এবার বোঝছে মজা।গুরুজনকে অবজ্ঞা করা উচিৎ না।প্রমা চুপচাপ শোয়ে আছে।কিন্তু কান খাড়া করে আছে।যেকোন সময় যেকোন বিপদ আসতে পারে।তাই সতর্ক থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রমা ভাবছে এসব এমন সময় প্রমা'র গায়ের কাথাঁটা ধরে কে যেনো টানছে ভয় পেয়ে গেলো প্রমা।অন্ধকার পুরা ঘর শুধু টেবিলে একটি অল্প তেলে জ্বলা কুপি জ্বলছে।প্রমা বার বার কাথাঁটা টেনে উপরে তুলছে আবার কে যেনো নামিয়ে দিচ্ছে।প্রমা উঠে বসল।ভয়ের একটি শীতল স্রোত ভয়ে গেলো প্রমা'র শীড়দাড়া বেয়ে।
কাথাঁটা টেনে আনতেই প্রমা'র চোখের সামনে একটি বিভৎস মুখ ভেসে উঠলো।একটি কুৎসিত প্রানী যার সারা শরীরের চামড়া ছিলে ফেলা হয়েছে।লাল টকটকে শরীর থেকে রক্ত জড়িয়ে পড়ছে।মাথার উপর ব্রাক্ষ্মনের টিকির মতো কয়েক গোছা চুল।প্রমা'র চোখ ঐ প্রানীটির চোখে পড়তেই প্রানীটি হাসলো দাতঁ বের করে।প্রমা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
প্রমা'র লাগাতার চিৎকারে এই বাড়ির ছেলেটি ছোটে এলো।হাতে সেই হারিকেন।
ছেলেটি এসে দেখলো প্রমা কাথাঁ বুকে জড়িয়ে ধরে কাপছে ঠকঠক করে।ছেলেটি প্রমা'র কাছে এসে বলল,
"কি হয়েছে আপনার আপনি চিৎকার করছেন কেনো?"
প্রমা ভয়ে কাপতে কাপঁতে বলল,
"ঐ যে ওখানে একটা বিভৎস প্রানী বসে আছে।আমার কাথাঁ ধরে টানছিলো।"
ছেলেটির প্রমা'র কথায় চারপাশ টা খোজল।কিন্তু কেউ নেই।
প্রমা'কে শান্তনা দিয়ে চলে গেলো।প্রমা আশ্চর্যান্বিত হলো।এই মাত্র তো প্রমা কাউকে দেখতে পেলো।তাহলে ছেলেটি আসতেই এভাবে উধাও হয়ে গেলো কেনো?
এমন হাজার প্রশ্ন প্রমা'র মনে।ঘুমহীন দুটি চোখ ঘুমাতে পারছে না।চিন্তায় প্রমা'র কপালে ভাজ পড়ে গেলো।
"জানিস না মেয়েটি আমার অতিথি তবুও কেনো গেলি ভয় দেখাতে?
চামড়া ছিলে যাওয়া ভয়ংকর প্রানীটির টুটি টিপে ধরে দাতেঁ দাতঁ চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা গুলো বলল ছেলেটি।
ভয়ংকর প্রানীটি বাচার জন্য ছটফট করছে।
ছেলেটি প্রানীটির গলা ছেড়ে দিয়ে বলল,
"ফের যদি কখনো দেখেছি এমন বেয়াদবী করতে তাহলে পস্তাতে হবে তোদের!"
প্রানীটি ভীতিগ্রস্ত হয়ে মেনে নিলো সব।এটাও বলল আর কোনদিন এমন ভুল করবে না।
প্রভাতের সূর্য জঙ্গলের সবুজ পাতার ফাক দিকে ছোট্ট কুটিরের জানালা দিয়ে প্রবেশ করে প্রমা'র মুখে লেগেছে।প্রমা'র চোখে মুখে সকালের সূর্যের মিষ্টি আলো লাগতেই উঠে বসলো।আড়মোড়া ভেঙ্গে স্বভাবগত অভ্যাস অনুযায়ী চা চাইলো হাক ছেড়ে।
ছেলেটি প্রমা'র চিৎকার শোনে প্রমা'র কাছে এলো।রেগে গিয়ে বলল,
"শুধু এক রাতের জন্যই আশ্রয় চেয়েছিলেন কথা দিয়েছিলেন এর বেশি কিছু না চাওয়ার।"
প্রমা'র এবার মনে পড়ে গেলো সব।বাবা মা'র অবাধ্য হয়ে এসেছিলো এই জঙ্গলে তারপর নরখাদকদের ধাওয়া খেয়ে এই কুটিরে আশ্রয় নেয়া।
প্রমা লজ্জা পেয়ে বলল,
"দুঃখিত আমার মনে ছিলো না।"
ছেলেটি বলল,
"আচ্ছা এবার আপনি আসতে পারেন।"
প্রমা কিছু না বলে উঠে গেলো।কি ছেলে একটা একটুও ভদ্রতা নেই।খালি পেটে অতিথীকে তাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রমা ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হতেই ছেলেটি প্রমা'কে ডাক দিয়ে দাড় করালো।ভেতরের রুমে গিয়ে মিনিট দু'এক পর ফিরে এসে প্রমা'র হাতে একটি পাতায় মোড়ানো গরম কিছু ধরিয়ে দিয়ে বলল,
"এটা খেয়ে যান।"
প্রমা বলল,
"কি আছে এতে?
ছেলেটি বলল,
"একটি মাছ ভাজা আছে।"
ছেলেটি মাটির পান পাত্রে পানি ঢেলে প্রমা'র কাছে রেখে চলে গেলো।প্রমা অবাক হলো কিছুটা তবুও ক্ষুধার তাড়নায় খেয়ে নিলো গপাগপ।কি মাছ কে জানে কিন্তু দারুন সুস্বাধু।
প্রমা কাঠের এই ছোট্ট কুটিরের গেইট ঠেলে বাহিরে বেরোলে।দিনের আলোয় সব কিছু ঝকমল করছে।সতর্ক চোখে পা ফেলে বনের ভেতর দিয়ে হাটছে।মনে অজানা ভয় যদি আবার কোন নরখাদকের পাল্লায় পড়ে।
প্রমা রাস্তা হাড়িয়ে ফেলেছে তার উপর।একা একা কি করে যে এই বিশাল বন পাড়ি দিবে তাই ভেবে পাচ্ছে না।তবু ঈশ্বরের নাম স্মরণ করে পথ চলতে লাগল।
প্রমা তাড়াতাড়ি করে পথ চলছে।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ভয়ংকর বন পাড়ি দিতে হবে দিনের আলো নিভে যাওয়ার আগেই।
প্রমা আপন মনে পথ চলছে।হঠাৎ বন অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।আকাশ কালো মেঘ জমেছে।মনে হচ্ছে প্রলংকরী ঝড় সেই সাথে মুষল ধারে বৃষ্টি নামে।
দিনের বেলায় যদি এমন অন্ধকার নামে তাহলে কেমন ভয়ংকর হয়!
প্রমা ভয় পেলো, একটু আগেই তো দিনের আলো ঝকমক করছিলো।এরি মাঝে কি এমন হলো এমন মেঘ কালো হয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো।
প্রমা এখন কি করবে।কোথায় যাবে, এ কোন বিপদে পড়ল সে।
প্রমা ঈশ্বরের নাম স্মরণ করে একদিকে চলতে শুরু করল।যা আছে কপালে।
প্রমা দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছে।ঝড়ো হাওয়ার সাথে শুকনো পাতা গুলো উড়ছে।বাতাসের শো-শো শব্দে তোলপাড় অবস্থা।
প্রমা বনের ভেতর থেকে ঘন্টার শব্দ পেলো।মন্দিরের ঘন্টার শব্দের মত।প্রমা আশার আলো দেখতে পেলো।
ঘন্টার আওয়াজ কে অনুসরণ করে একটি জায়গায় এসে উপস্থিত হলো।ছোট একটি মন্দির, কোন মানুষ নেই শুধু একজন
বৃদ্ধ পুরোহিত মঙ্গলদ্বীপ হাতে নিয়ে পূজা করছে।বাতাসে ঘন্টা গুলো বেজে যাচ্ছে অনবরত।প্রমা দৌড়ে এসে পুরোহিত মশাই এর পাশে দাড়ালো।আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, সেই আলো তে দেখা যাচ্ছে পুরোহিত মশাই এর মুখ ভার।তার পাশে যে একজন মেয়ে এসে দাড়িয়েছে তার কিছুই সে বোঝেনি।প্রমা বলল,
"ঠাকুর মশাই একটু শোনবেন?
বৃদ্ধ পুরোহিত এই কথাটি কানেই নিলো না যেনো।প্রমা আবার ডাকলো।
"ঠাকুর মশাই আমাকে সাহায্য করবেন প্লীজ? আমি রাস্তা হাড়িয়ে ফেলেছি।"
বৃদ্ধ পুরোহিতটি এবার প্রমা'র দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর ভাবে হেসে বলল,
"আজ থেকে কুড়ি বছর আগে আমি মারা গেছি।"
প্রমা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলো কথাটা শোনা মাত্র।
বৃদ্ধ পুরোহিত প্রমা'র দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
"এসো আমার কাছে তোমাকে আমি রাস্তা দেখাবো।"
ভয়ে যেনো প্রমা'র চোখ গুলো ঠিকরে বের হচ্ছে।প্রমা চিৎকার দিয়ে দৌড়াতে লাগল।পুরোহিত হাসতে লাগল উচ্চস্বরে আর বাতাসের ঝাপটায় মন্দিরের ঘন্টা গুলো বেজে যাচ্ছে অনবরত।
প্রমা দৌড়াতে দৌড়াতে কত দূর এসেছে জানা নেই।হাপিয়ে গেছে অনেক।একটা বড় গাছের নীচে বসে হাপাচ্ছে।পা দিয়ে রক্ত পড়ছে।
চারদিকে রাতের মতো অন্ধকার।একটু আগেই সকাল ছিলো আর এখন রাত কি অদ্ভুত বন এটা।এটা কি আসকেই জঙ্গল নাকি পুরাটাই মায়া।
প্রমা এসব ভাবছে, খুব কান্না পাচ্ছে ওর।কি করে বের হবে এখান থেকে?
প্রমা এসব ভাবছে ঠিক তখনি ওর পাশে কেউ এসে বসল এরকম মনে হলো।পাশ ফিরে দেখেই চিৎকার মেরে দৌড় লাগাবে এমন সময় সেই জন্তুর মতো মানুষ টি প্রমার রক্ত পড়তে থাকা পায়ে মুখ লাগালো।চুষে নিলো রক্ত গুলো।প্রমা মানুষটির শরীরে ইচ্ছে মতো কিল ঘুষি দিচ্ছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না।
রক্ত শোষে নিয়ে ছেড়ে দিলো প্রমা'কে।প্রমা'র পায়ে লোকটির দাতেঁর দাগ বসে আছে।
প্রমা কাপঁছে, রক্তক্ষরনের কারণে প্রমা'র শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলো।ঘুমে ঢলে পড়ল প্রমা।

পর্ব ৩

ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নার শব্দে প্রমা'র ঘুম ভেঙ্গে গেলো।চোখ দুটো খোলতে গিয়ে চোখের পাপড়িতে ব্যাথা অনুভব করছে।মাথাটা ঝিম ঝিম করছে, শরীর অধিক দুর্বল।প্রমা বিছানা ছেড়ে উঠার চেষ্টা করলো, কিন্তু শরীরে খুব ব্যাথা
জ্বর হয়েছে এমন।তবুও নিজের শরীরটাকে কোন রকমে টলতে টলতে উঠে দাড়ালো।তারপর কান্নার শব্দ অনুসরণ করে এগোতে লাগল ধীরে ধীরে।সেই কাঠের বাড়িটির পুরোনো একটি কক্ষ থেকে কান্নার শব্দ আসছে।একজন মৃত মানুষ কে সামনে নিয়ে কয়েকজন কালো কাপড় পরিহিতা মহিলা কান্না কাটি করছে।
প্রমা এসব দেখে ভয় পেয়ে যায়।এই গভীর জঙ্গলে এত রাতে এখানে এরা কারা! প্রমা এক পা দুই পা করে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে।মহিলাগুলোর পাশে গিয়ে একজন কে আস্তে করে ডাকলো,
"এই যে শোনুন!
মহিলাগুলো পাশ ফিরে তাকালো।প্রমা বলল,
"আপনারা কারা? এখানে কিভাবে এসেছেন? আর কে মারা গেছে?"
একটি মহিলা কর্কশ গলায় গজগজ করে বলল,
"তুই এখানে আছিস কেনো? চলে যা চলে যা তাড়াতাড়ি!"
প্রমা বেশ অবাক হয়ে যায়, আবার প্রশ্ন করে,
"চলে যাবো? কিন্তু চলে যাবো কেনো?
আরেকটি মহিলা একটু বেশী রাগীস্বরে বলল,
"যেতে বলেছি তাই যাবি নাহলে এই ভাবে মরবি!
কথাটি বলেই সামনে থাকা লাশটির হাতটি মুখের ভেতর নিয়ে মাংশ চিবিয়ে খেতে লাগল।লাশটির হাত থেকে টুপটুপ করে কালো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
প্রমা এই দৃশ্য দেখে ভয়ে দৌড়ে চলে আসলো।
রুমে এসে চুপচাপ শোয়ে পড়ল।ভয়ে কম্পিত শরীরে কাথাঁ জড়িয়ে ধরল।এমন সময় একটি শীতল হাত প্রমা'র কাধ স্পর্শ করল।প্রমা ছিটকে পড়ল দূরে।বাড়ির সেই ছেলেটি বলল,
"আরে আমি এখানে।আপনি ভয় পাচ্ছেন তাই আমি আপনার কাছে আসলাম।"
প্রমা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে শান্ত হলো একটু।ছেলেটি বলল,
"আমার নাম কাব্য।আপনি তো আমার নাম জানেন না, যদি কখনো আমাকে প্রয়োজন হয় ডাকবেন কি করে? তাই নাম টি বললাম।"
প্রমা ভ্রু কুঁচকে বলল,
"আপনাকে ডাকব মানে? আমি তো কালকেই চলে যাচ্ছি।"
ছেলেটি হাসল।
প্রমা অবাক হয়ে বলল,
"কাব্য! আপনি হাসছেন কেনো?"
কাব্য হাসি থামিয়ে বলল,
"আপনি দেখি বোকার স্বর্গে বাস করেন, এখান থেকে যাবেন কিভাবে? রাস্তা চিনেন?"
প্রমা ক্ষানিক ভেবে বলল,
"অতো শত বুঝি না।আমি শুধু জানি এখান থেকে কাল চলে যাবো।সামনেই একটা মন্দির আছে।সেই খানে নিশ্চই অনেকেই পূজা দিতে আসে।তাদের থেকে বের হওয়ার রাস্তা জেনে নেবো।"
কথাটি শোনে কাব্য আবার হাসতে লাগল জোরে জোরে।প্রমা আশ্চর্যরকম ভাবে তাকিয়ে রয়েছে।কাব্য হাসি থামিয়ে প্রমা'র দিকে তাকালো।তারপর গলা নামিয়ে বলল,
"মিস প্রমা এইখানে কোন মন্দির নেই।সব ভ্রম।
প্রমা হোচট খেলো যেনো জিজ্ঞেস করল,
"সব ভ্রম!"
কাব্য বলল,
"হ্যা সব ভ্রম।এটা একটা মায়া বন, এইখানে একবার যে প্রবেশ করে সে কোন দিন বের হতে পারে না।বের হলেও সে হয় রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার নাহলে মানুষ খেকো নরখাদক।"
প্রমা ভয় পেলো বেশ।
প্রমা বলল,
"কি বলছেন আপনি? এসব কি করে? আমি কিছু বোঝতে পারছি না।আমি বেরোতে চাই এখান থেকে।"
কথাটি বলেই প্রমা নেমে গেলো বিছানা থেকে।চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো দরজার দিকে।কাব্য পেছন থেকে প্রমা'র হাত টেনে ধরে দাড় করিয়ে বলল,
"আপনি যেতে পারেন না।আপনাকে এখানেই থাকতে হবে! সারা জীবন তাও আমার সাথে।"
প্রমা হাত ঝাকি মেরে ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,
"অসম্ভব এখানে এক মুহুর্ত থাকতে পারব না আমি।"
প্রমা চলে যাচ্ছে দ্রুত পায়ে।কাব্য'র চোখ গুলো জ্বলে উঠলো প্রচন্ড ক্রোধে।হাতের মুষ্টি শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো।
প্রমা দ্রুত পা চালাচ্ছে।অন্ধকার রাত আকাশের অবস্থাও ভালো না।যেকোন সময় বৃষ্টি আসতে পারে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
প্রমা ঘামছে প্রচুর, কপালের ঘাম ওড়নার কোণা দিয়ে মুছে নিয়ে ফের পথ চলতে শুরু করল।নীচের দিকে তাকিয়ে পথ চলছিলো প্রমা।হঠাৎ সামনে কিছু একটার সাথে ধাক্কা লেগে দাঁড়িয়ে গেলো।প্রমা সামনে তাকিয়ে দেখলো কেউ একজন প্রথ অবরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে।প্রমা অন্ধকারে তেমন ঠাউর করতে পারলো না কে হতে পারে।প্রমা জিজ্ঞেস করল,
"কে আপনি? পথ আগলে দাড়িয়েছেন কেনো?
মানুষটি প্রমা'র দিকে ঘুরে তাকালো।বিজলীর ঝলকে মুখ খানা দেখে প্রমা'র চক্ষু ছানা ভরা হয়ে গেলো।চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,
"কাব্য আপনি?
কাব্য প্রমা'কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রমা'কে চেপে ধরে প্রমা'র ঘাড়ে মুখ নিয়ে গেলো।দুটো দাতঁ বেরিয়েছে কাব্য'র মুখে।দাবিয়ে দেবে এখনি প্রমা'র ঘাড়ে।প্রমা কাব্য'র হাত থেকে ছোটার জন্য চেষ্টা চালিয়েও ব্যার্থ।কাব্য'র শরীরের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।কাব্য প্রমা'র ঘাড়ে কামড় দিতে গিয়ে হঠাৎ বিজলীর চমকে প্রমা'র ঘাড়ে চোখ পড়তেই থেমে গেলো।গলায় একটি ছোট লাভ ( ) চিহ্ন রয়েছে।নীল রঙ্গা লাভ চিহ্ন।কাব্য'র লম্বা সুচালো দাতঁ গুলো মিলিয়ে গেলো।প্রমা ভয়ে ঢোক গিলল।
কাব্য প্রমা'র ঘাড়ে ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে সরে দাড়ালো।
প্রমা খুব অবাক হলো কাব্য'র এই কাজে।প্রমা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই কাব্য প্রমা'কে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো জঙ্গলের গভিরে।
© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.