"কিরে, তনুর ধর্ষণ মামলার কী খবর ?” মদের গ্লাসে একচুমুক দিল জীবন ।
"কী আর হবে ? থানার ওসিকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছি । তিনিই সব ব্যবস্থা করেছেন । ওই মামলা চাপা পড়ে গেছে ।",হাসতে হাসতে বলল বদরুল ।
"কিন্তু প্রথম যা ভয় পেয়েছিলাম । মানুষ যেভাবে আন্দোলন করেছিল ! ভাবছিলাম এবার বুঝি শেষ । কারণ ধর্ষণটা শুধু আমরা দুজনেই করেছিলাম,"বলল জীবন ।
"আরে বাদ দে তো । বাঙালীরা এরকমই । প্রথম প্রথম এমনই করে । কিছুদিন গেলে সব হাওয়া । ওই চিন্তা বাদ দিয়ে এখন নতুন কোন মাল খোঁজ । অনেকদিন কাঁচা মাংসের স্বাদ পাই না ।", কামনার নেশা ফুটে উঠলো বদরুলের চোখে ।
"ঠিক আছে দেখবো নে । এখন যা,অনেক রাত হয়ে গেছে । বাড়ি যা ," হাই তুলে বলল জীবন ।
নেশায় বুঁদ হয়ে জীবনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো বদরুল ।
২.
রাত দুইটা ।
চাঁদের আলো গ্রাম্য পথটাকে আলোকিত করে রেখেছে ।
বদরুল গান গেয়ে গেয়ে ওর বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটছিল । হঠাৎ মনে হল কে যেন ওর পিছনে হাঁটছে । বদরুল পিছনে তাকিয়ে দেখলো কেউ নাই । ও আবার হাঁটতে লাগলো । আবারও পিছনে কারও পদশব্দ । ও আবারও পিছনে তাকালো । "না, কেউ তো নেই । তাহলে কি আমি ভূল শুনেছি ?"ভাবলো বদরুল।
ও আবার হাঁটতে লাগলো ।
হঠাৎ দেখলো একটু দূরে সাদা কাপড় পড়ে কোন একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে । মেয়েটার মুখ ঢাকা ।
বদরুল কাছে আসতেই মেয়েটা মিষ্টিকন্ঠে বলল,"ভাইয়া,আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিবেন ।"
পৈশাচিক দৃষ্টিতে মেয়েটার পা হতে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলালো বদরুল । নেশায় বুদ হওয়া বদরুল মনে মনে মেয়েটার নগ্ন দেহটাই কল্পনা করলো । "আপনার বাড়ি কোথায় ?" ভ্দ্র সাজলো মনুষ্যরূপধারী পিচাশ বদরুল ।
"এই তো সামনেই । বটতলা থেকে একটু সামনে," স্বাভাবিক কন্ঠে বলল মুখঢাকা মেয়েটা ।
"ঠিক আছে",বলে মেয়েটাকে হাঁটতে বলল বদরুল ।
মেয়েটা হাঁটতে লাগলো । পিছনে বদরুল । ফোনটা বের করে জীবনকে মেসেজ দিল ও,"তাড়াতাড়ি বটতলা চলে চলে আয় ।একটা পাখি পেয়েছি । ভূনা করে খাবো ।"
মেসেজটা পাঠিয়েই প্ল্যান করলো বদরুল । আর ৪-৫ মিনিট পরই বটতলা । সবচেয়ে নির্জন আর নিরাপদ জায়গা । জঙ্গলও আছে । ওখানেই যা করার করবে ।
বিশ মিনিট হয়ে গেল । কিন্তু বদরুলের কোন বটতলাই চোখে পড়লো না । মেয়েটা হাঁটছে,ও হাঁটছে । আর ভাবছে ,"পথ ভূল করলাম নাকি ? কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব ? ছোট থেকে বড় হয়েছে ও এই জায়গায় । ভুল হবে কী করে ?"
তখনই হঠাৎ সামনে একটা কালভার্ট চোখে পড়লো ওর ।
"আরে, এটা তো ময়নামতি সেনানিবাসের অলিপুর এলাকার কালভার্ট ; যেটা আমার গ্রাম থেকে ১৫০ কি.মি. দূরে । এতো তাড়াতাড়ি এখানে আসলাম কী করে !" আতঙ্কে জমে গেল বদরুল,"মদ আজ একটু বেশিই গিলেছি নাকি ?"
কালভার্টের কাছাকাছি আসতেই দাঁড়িয়ে গেল মেয়েটি । ঘুরে তাকালো বদরুলের দিকে । সাদা কাপড়টা মুখ ও শরীর থেকে সরিয়ে ফেলল ও । মেয়েটাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য ভূমিকম্প অনুভব করলো বদরুল ।
"এই যে তনু ! যেভাবে ছিন্ন কাপড়ে ক্ষতবিক্ষত ভাবে পড়েছিল এই কালভার্টের কাছে ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে ও । কাটা জায়গাগুলো থেকে টকটকে লাল রক্ত পড়ছে । লাল কোটরবিহীন চোখ দুটো থেকে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে । দৌঁড় দেওয়ার জন্য পা নাড়াতে চাইলো বদরুল । কিন্তু একচুলও নড়তে পাড়লো না । তনুর ইশারায় কালভার্টের পাশে ঝোঁপের উপর গিয়ে পড়লো বদরুল । যেখানে তনুকে মেরে ফেলে রাখা হয়েছিল । অদ্ভূতভাবে হাত পা মাটিতে আটকে গেল বদরুলের । ওর কাছে এসে দাঁড়ালো তনু ।
ওর বীভৎস চেহারা আর অগ্নি ঝরা চোখদুটো দেখে বদরুল কাঁপতে কাঁপতে বলল,"আমাকে ছেড়ে দাও মা, তোমার পায়ে ধরি 1"
তখনই বদরুলের কানে বাজতে লাগলো তনুর সেই অসহায় কন্ঠ,"আমি কী অপরাধ করেছি ভাইয়া ? কেন আমাকে এভাবে মারছো ? আমি তো তোমাদের ছোট বোনের মত । অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার,ভাইয়া । আমাকে আম্মুর কাছে যেতে দাও",চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি ঝরলো তনুর ।
তনুর চোখের ইশারায় বদরুলের শরীর থেকে শার্ট আর প্যান্ট উড়ে চলে গেল । হাতদুটো থেকে মাংস খসে পড়তে লাগলো । যন্ত্রণায় চেঁচাতে লাগলো বদরুল কিন্তু একটু শব্দও বের হল না । মাঝখান থেকে দুই খন্ড হয়ে গেল বদরুলের শরীর । একখন্ড কালভার্টের উপর আর একখন্ড ঝোঁপের উপর এসে পড়লো ।
তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো তনুর বীভৎস ঠোঁটে ।
৩.
"কই যে গেল বদরুল ?" দশ মিনিট ধরে বটতলায় অপেক্ষা করছে জীবন ।
হঠাৎ দেখলো কালো চাদর মুড়ি দিয়ে বদরুল আসছে ।
কাছে আসতেই জীবন বলল,"কিরে,চাদর মুড়ি দিয়েছিস কেন ?
"কেউ যাতে না দেখে তাই,"ধীর কন্ঠে বলল বদরুল ।
"মালটা কেমন রে ? বলিউডের মত নাকি হলিউডের মত ?" চিকন হাসি দিল জীবন ।
"গেলেই দেখবি,"একটু নাকি সুরে বলল বদরুল ।
হাঁটতে লাগলো ওরা ।
কিছুক্ষণবাদেই কালভার্টের কাছে চলে আসলো ।
অবাক হল জীবন ,"এই বদরুল ! কোথায় নিয়ে আসলি ?" বলেই পিছনে ফিরে তাকালো জীবন ।
কিন্তু কেউ নাই । কালভার্টের উপর ও একা দাঁড়িয়ে আছে । ভয়ে বুক শুকিয়ে গেল ওর ।তখনই কোন এক মেয়ের বীভৎস হাসি শুনে ঝোঁপের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছিন্নভিন্ন কাপড়ে শুয়ে আছে তনু । উঠে ওর দিকে আসতে লাগলো তনু । এক পা দু পা করে পিছাতে লাগলো জীবন । হঠাৎ কিছুর সাথে পা আটকে গেল ওর । নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো বদরুলের শরীরের অর্ধখন্ড পড়ে আছে । চিৎকার দিয়ে উঠলো জীবন । কিন্তু কোন শব্দই বের হল না মুখ থেকে । আর নড়তে পারলো না ও । স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো । বদরুলের ছিন্ন দেহাংশ হাতে তুলে নিল তনু । সেটা দিয়ে মাথায় জোরে আঘাত করলো জীবনের । উড়ে গিয়ে ঝোঁপে পড়লো ও । তনু তখন ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো । ধারালো নখ দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিল জীবনের শরীরটা ।
হাসি ফুটলো তনুর মুখে ।
সকাল হল ।
রাতের আঁধার মিলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পূর্ণিমার চাঁদের মত হারিয়ে গেল তনু । যাওয়ার আগে ধিক্কার দিয়ে গেল মনুষ্য জাতিকে ।
আর বলে গেল-
"আমার মত যারা ধর্ষণের শিকার, পাশবিক নির্যাতনের শিকার । আসো আমার দলে । আমরাই আমাদের বিচার করবো । শাস্তি দিবো নরপিচাশদের । মানুষের দিকে আর তাকিয়ে থেকো না । ওরা স্বার্থপর ।"
সকালে উদ্ধার করা হল বদরুল আর জীবনের ক্ষতবিক্ষত খন্ড খন্ড লাশ ।
পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হল খবরটা । ফেইসবুকে লাশের ছবি দেওয়া হল । অনেকে কমেন্ট করলো "যে মেরেছে সে মানুষ নয়, পশু । আমরা এই হত্যার ন্যায্য বিচার চাই ।"
হয়তো এই কমেন্ট দেখে আত্মাদের জগতে বিচরণ করা ধর্ষণের শিকার তনুরা বীভৎস হাসি হেসেছে !!
© bnbooks.blogspot.com