প্রাপ্তি - পর্ব ৫ - ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প

প্রাপ্তি
লেখা: রোজ চৌধুরী
পর্ব ৫


সন্ধ্যায় সাগর অফিসের বাইরে এসে কল দিল। আমি কাজ শেষ করে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
- কী এত ব্যস্ততা ছিল যে সারাদিন কল দিতে নিষেধ করলে।
- আজ খবর দেখেছ?
- হুমম আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে নতুন কোন একটা ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা দিচ্ছে। সরকার এই নিয়ে কাজ শুরু করেছে যেন ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়। আজ সারাদিন ধরেই তো এই খবর প্রচার হচ্ছে। তুমি হঠাৎ জানতে চাইছ কেন?
- স্পটে থেকে লাইভ নিউজ আপডেট বার্তাকক্ষে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে আমার উপর। পরশু সকালে টিমের সাথে আমাকে কক্সবাজার চলে যেতে হবে।
সাগর গাড়ি ব্রেক করে আমার দিকে ঘুরে তাকাল।
- মানে কী এনি তোমার বস কী পাগল হয়ে গেছে যেখানে একজন ছেলেকে পাঠানোর কথা সেখানে তোমাকে পাঠাচ্ছে।
- আসলে সবাই লাইভে সংবাদ উপস্থাপন করতে পারেনা তাই বস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
- দেখ তুমি বসকে কল দিয়ে বল তুমি যেতে পারবেনা।
- তা হয়না। এরকম করলে বসকে অপমান করা হবে আর আমার চাকরিটাও থাকবেনা।
- চাকরির কী দরকার তোমার যা যা প্রয়োজন সব পেয়ে যাবে তবুও প্লিজ এই দুর্যোগের মধ্যে ওখানে যেও না।
- আমাকে কী তোমার দয়া নিতে বলছ। দেখ আমি অনেক কষ্ট করেছি জীবনে কিন্তু কারো দয়া গ্রহণ করিনি আর সেটা কোনদিন করবও না। আমার কাজে উৎসাহ যদি দিতে না পার তবে বাঁধা দিওনা প্লিজ।
- তুমি তাহলে যাবেই।
- হুমম।
- ওকে এজ ইউর উইশ।
সাগর অনেক রাগ করেছে। আমার কাজ কে আমি সম্মান করি। আমি কোন কিছুতেই ভয় পাবার মতো মেয়ে নই সেটা সাগর জানে। আর আমি যে যাবই সেটাও সে বুঝে গেছে। আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ও চলে গেল।
পরদিন সকালে আমি সময়মতো অফিসে গেলাম সব কাজ শেষ করলাম। কাল সকালে রওনা করতে হবে সেই অনুযায়ী প্রিপারেশন নিতে হবে। রাতে বাসায় ফিরে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিলাম। কাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত সাগর একবারও কল দেয়নি। আমিও দেইনি, আমার কাজে কেউ বাঁধা দিলে সেটা আমার পছন্দ না।
পরদিন সকালে উঠে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার পরেই সাগর কল দিল। সে আগে থেকেই বাসার নিচে অপেক্ষা করছিল। আমি ব্যাগ গাড়িতে রেখে ওর পাশে বসলাম।
- তুমি এখানে?
- তোমাকে অফিসে পৌঁছে দিতে আসলাম।
- ওহ আচ্ছা। আমিতো একাই যেতে পারতাম।
- কেন আমার সাথে গেলে কোন সমস্যা।
- নাহ্। তুমি কী রাগ করেছ আমার উপর।
- নাহ্ তবে ভয় পাচ্ছি খুব সাবধানে থাকবে। সবসময় কল দিয়ে খোঁজখবর জানাবে ওকে।
- ওকে।
- তুমি ফিরে আসলে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
- কী সেটা?
- ফিরে এসো তারপর বলব।
- ওকে।
সাগর আমাকে অফিসের সামনে নামিয়ে দিল। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি যাবার পর ওরা গাড়িতে উঠে বসলো। সাগর মন খারাপ করে আমাকে বিদায় দিল। ওর থেকে বিদায় নিয়ে আমি গাড়িতে উঠে বসলাম।
কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের রাত ১০ টা বেজে গেল। এখানকার একটা হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোটেলে পৌঁছে সাগরকে কল দিয়ে জানিয়ে দিলাম আমি ভালোভাবে পৌঁছে গেছি।
এখানকার আবহাওয়া খুব খারাপ। ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেওয়া হয়েছে। ঝড়ো হাওয়া বইছে, সাগর ভীষণ উত্তাল। কাল সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে এখানকার সর্বশেষ অবস্থা সরাসরি জানাতে হবে। আমি সেভাবেই সব প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।
সকাল থেকে বাতাসের গতি আরও বেড়ে গেল। এখানে ৫ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারী করা হয়েছে। সহকর্মীদের নিয়ে এই হোটেলের ছাদে উঠে গেলাম। ছাদ থেকে সাগরের উত্তাল ঢেউ স্পষ্ট চোখে পড়ে। কিন্তু বাতাসের কারণে ছাদে দাড়িয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। আমরা ছাদের উপর একটা রেস্টুরেন্টে ছিল সেখানে দাড়িয়ে প্রতি ঘন্টায় ঘূর্ণিঝড়ের আপডেট জানাতে থাকলাম। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। সমুদ্রের পানি লোকালয়ে ঢুকে হোটেলের নিচতলা পুরো পানিতে তলিয়ে গেল। এই তান্ডব সারাদিন চলল। রাতে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব কমে গেল। রাত ১২ টায় সর্বশেষ নিউজ আপডেট জানিয়ে আমি কাজ শেষ করলাম।
হোটেলে ফিরে দেখতে পেলাম সাগর অনেকগুলো কল দিয়েছে। হাতমুখ ধুয়ে ওকে কল দিয়ে কিছুসময় কথা বললাম। সকালে আবার ঢাকা ফিরতে হবে সেই অনুযায়ী প্রিপারেশন নিলাম। এই ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিতে কাজ করে আমার প্রচন্ড জ্বর আর ঠান্ডা লেগে গেল। অনেক কষ্টে পরদিন ঢাকা ফিরলাম। রাস্তাঘাটে হাটু সমান পানি জমেছে। অনেক কষ্ট হল আমাদের ফিরতে।
বাসায় ফিরে আমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো। সকালে সাগর ফোন দিল কয়েকবার। ফোনটা রিসিভ করার পর সাগরকে কী বলেছি কী করেছি আমার কিছুই মনে নেই।
চোখ মেলে বুঝতে পারলাম সাগর আমার মাথায় পানি ঢালছে। ওকে দেখে আমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম। উঠে বসতে চাইলাম কিন্তু ও দিলনা। বাড়িওয়ালি আন্টিও আছে এখানে। আন্টি আমাকে একটা ধমক দিল।
- এই মেয়ে তোমার এত শরীর খারাপ আমাকে একবার জানাবেনা। সাগর সাহেব যদি না আসত আল্লাহ জানে কী অঘটন টাই না ঘটত।
- সরি আন্টি আমি আসলে বুঝতে পারিনি।
- সাগর সাহেব আপনি একটু থাকুন ওর কাছে আমি ওর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
- ওকে আন্টি।
আন্টি চলে গেল। সাগর রেগে লাল হয়ে আছে তবে কিছুই বলছেনা। আমার টাওয়েলটা নিয়ে সে আমার চুলগুলো মুছে টাওয়েলটা চুলে পেঁচিয়ে দিল। আমি উঠে বসলাম। সাগর আমার দিকে না তাকিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। বুঝতে পারলাম অনেক রেগে আছে। আমি ওর হাতটা ধরলাম। ও ঘুরে আমার দিকে তাকাল।
- হাত ধরেছ কেন ছাড়।
- না ছাড়বনা। রাগ করেছ? সরি।
- আমি কে যে রাগ করব। তোমাকে কিছু বললে তুমি শোন। নিষেধ করার পরেও শুনলেনা চলে গেল এখন দেখেছ শরীরের কী অবস্থা করেছ।
- সরি।
- আর সরি। জ্বর ছিল ১০২ ফোনে কী সব কথা বলছিলে জান। ভয়ে আমি তাড়াহুড়ো করে এসে আন্টিকে নিয়ে বাসায় আসি এসে দেখি সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছ। জান কতটা ভয় পেয়েছিলাম।
- সরি রাগ করোনা এখন থেকে তোমার সব কথা শুনবো এবার তো হাস।
- হুমম। ঔষধ দিয়ে যাচ্ছি সময়মতো খেয়ে নিবে। আমার আজকে ইমারজেন্সিতে ডিউটি আছে যেতে হবে। সকালে এসে আবার দেখা করে যাব।
- তোমাকে আর আসতে হবেনা কাল বিকেলে আমিই যাব তোমার সাথে দেখা করতে। এই বাসায় মেয়েরা থাকি তুমি আসলে বিষয়টা খারাপ দেখায় বুঝইতো।
- ওকে তাহলে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে সুস্থ হয়ে উঠ। বিকেলে যখন ভালোলাগে কল দিও আমি চলে আসব।
- ওকে।
আন্টি খাবার নিয়ে আসার পর সাগর আন্টির সাথে টুকটাক কথা বলে চলে গেল। আন্টি খাবার মেখে আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন। আমার দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগল। হায়রে জীবন আমি অসুস্থ হলেও আমাকে দেখার কেউ নেই। তবুও এটা ভাবতে ভীষণ খারাপ লাগছে আজ আমার আপন কেউ আমার পাশে নেই। আন্টি আর সাগর তো আমার আপন কেউ না তবুও কত আদরে আগলে রেখেছে আমাকে।
আন্টি আমাকে বাচ্চাদের মতো জোর করে করে খাওয়ালো। খাওয়ানো শেষে হাত ধুয়ে আন্টি এসে আমার পাশে বসলো। আমি খাটের সাথে একটা বালিশ রেখে তাতে হেলান দিয়ে বসলাম। সাগর দারোয়ান চাচার কাছে ঔষধ কিনে দিয়ে গেছে। দারোয়ান সেই ঔষধ আন্টির কাছে দিয়ে গেল। আন্টি দেখে দেখে আমাকে ঔষধ দিলেন আমি খেয়ে নিলাম।
- এনি আমাকে তো তুমি আন্টি বল কিন্তু আমি তোমাকে কিন্তু আমার একটা মেয়ে মনে করি বুঝলে।
- জানি আন্টি।
- তাহলে আমাকে একটা সত্যি কথা বলবে?
- জ্বী বলুন।
- তোমার আর সাগরের মধ্যে কী কিছু চলছে?
- জানিনা।
- মিথ্যা বলোনা। আজ সাগরের চোখে আমি তোমার জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা দেখেছি। কেউ কাউকে ভালো না বাসলে এভাবে ছুটে আসেনা আর এভাবে সেবাযত্ন করেনা। ওর মনে তোমার জন্য অনেক ভালোবাসা আছে সেটা আমি বুঝে গেছি। তুমিও কী ওকে পছন্দ কর।
- জানিনা আন্টি তবে আজ পর্যন্ত ও আমাকে মুখ ফুটে কিছু বলেনি।
- পাগলি মেয়ে সব কথা কী বলতে হয়। মাঝে মাঝে কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। তোমাদের যদি একে অপরকে ভালো লেগে থাকে তাহলে বলে দাও। মনের কথা মনে পুষে রেখে লাভ কী।
- ভয় হয় আন্টি।
- ভয় পাবার কিছু নেই মনের কথা বলে দেওয়াই ভালো। প্রয়োজনে আমি দাড়িয়ে থেকে তোমাদের বিয়ে দেব। মেয়ে যখন ডেকেছি তখন প্রয়োজন হলে মায়ের সব দায়িত্ব পালন করে দিব।
- আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরলাম, আল্লাহ আপনাকে অনেক খুশি রাখুক আন্টি। সত্যিই আপনার মতো মানুষ হয়না।
- পাগলি মেয়ে আমার এখন ঘুমিয়ে পড়। সকালে আমি আবার এসব ওকে।
- ওকে আন্টি গুড নাইট।
- গুড নাইট।
আন্টি আমাকে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি শুয়ে শুয়ে আন্টির কথাগুলো ভাবছিলাম। আমার জীবনে সাগরের মতো একটা মানুষের ভীষণ প্রয়োজন ছিল ওকে যখন পেয়েছি তখন আর হারাতে দিব না। মনে মনে ঠিক করলাম কাল ওকে মনের কথা জানিয়ে দিব যা হয় হোক। ঘুমানোর আগে সাগরকে কল দিয়ে পৌছেছে কিনা জেনে নিলাম। কথা শেষ করে ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে, দুপুরে আন্টি এসে আমাকে খাবার আর ঔষধ খাইয়ে গেলেন। জ্বর অনেকটাই কমে গেছে। সাগরকে কল দিয়ে বললাম ৫ টায় চলে আসতে। আমি তৈরি হয়ে নিলাম। যথাসময়ে সাগর চলে আসল। আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। ওকে বললাম আমাকে নিয়ে মুক্ত হাওয়ায় কোন এক নদীর পাড়ে যেতে। সাগর আমার কথামতো পূর্বের সেই নদীর পাড়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে আমি গিয়ে নদীর পাড়ে ঘাসের উপর বসলাম। সাগরও এসে আমার পাশে বসলো। আমি খোলা হাওয়ায় চুলগুলো খুলে দিলাম। সাগর আমার হাতের উপর তার হাত রেখে বসলো। আমি সাগরের দিকে ঘুরে তাকালাম।
- আমি ফিরে আসলে না বলেছিলে আমার জন্য সারপ্রাইজ আছে কই দাও।
- একটু ওয়েট করো সূর্যটা পশ্চিমে ঢলে পড়ুক চারপাশে হালকা আলো হালকা আঁধার হয়ে যাক তখন বলব।
- ওকে।
কিছুসময় পর সূর্য প্রায় অস্ত চলে গেছে চারপাশে হালকা আলো হালকা আঁধার হয়ে এসেছে। সাগর আমাকে বলল চোখ বন্ধ করতে। আমি নিজের চোখদুটো বন্ধ করলাম। কিছুসময় পর সাগর আমাকে বলল চোখ খুলতে। চোখ মেলে আমি পুরো শকড। সাগর একটা রিং আর এক গুচ্ছ গোলাপ আমার দিকে বাড়িয়ে রেখেছে
- এনি i love u. Will u marry me plz.
এক মুহূর্ত নিরব থেকে আমি সাগরের কথায় সম্মতি জানালাম। সাগর রিং টা আমার হাতে পরিয়ে দিল।
- সাগর আন্টি কখনোই আমাকে মেনে নিবেনা।
- আম্মা সবকিছু জানে। এই বিষয়ে আম্মার কোন আপত্তি নেই আর তোমারও যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আগামী সপ্তাহেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতে চাই।
- এত জলদি।
- কেন?
চলবে,,

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.