প্রাপ্তি - পর্ব ৪ - ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প

প্রাপ্তি
লেখা: রোজ চৌধুরী
পর্ব ৪


আমি কে আমার বাবা মা কে আমার বাসা কোথায় এটা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা। সেখানে সাগর সাহেব আমার পুরো বায়োডাটা এক মুহূর্তের মধ্যেই বলে দিলেন।
- আপনি কে বলুনতো আর এতো কিছু জানলেন কীভাবে?
এনি ও এনি
মাথায় দুটো বেনী
বসে থাকে একা
খায় শুধু বকা
এনি খুব পচা
এই নাও মজা।
সাগরের কবিতা শুনে আমার চোখের কোণে জল জমলো কারণ এই সাগর আর কেউ না আমারি ছোট বেলার খেলার সাথী বাবাই।
-আপনি কী বাবাই?
-তোর এতো সময় লাগলো চিনতে।
-লাগবেনা কত বড় হয়ে গেছ দেখেতো চেনার উপায় নেই যে তুমি বাবাই।
- তুই ও তো বড় হয়ে গেছিস তবুও তো আমি তোকে চিনে ফেলেছি।
- এত বছর বিদেশে থেকে এসেছ আমার কথা মনে পড়েছে তোমার।
- না মনে পড়লে কী আর তোকে চিনতে পারতাম এত সহজে।
- ভেঙাইছ এবার চকলেট দাও।
- এই যা ভুলেই গেছি। আচ্ছা তুই এখানে ওয়েট কর আমি আসছি।
- ওকে।
বাবাই হেটে সামনের দোকানে গেল। ছোটবেলায় মা প্রায়ই আমাকে পার্কে নিয়ে যেত খেলতে। সেখানেই আমার আর বাবাইয়ের দেখা। কত মজা করেছি ছোট বেলায়। আমার মাথায় লম্বা চুল ছিল বলে মা সবসময় মাথায় বেনী করে দিত। বাবাই আমার থেকে দুই- তিন বছরের বড়। আমার প্রায়ই মন খারাপ থাকত তাই একা একা বসে থাকতাম। বাবাই প্রতিদিন এসে আমাকে এই ছড়া বলে খেপাত এরপর আমার দিকে চকলেট বাড়িয়ে দিত। দুজনে চকলেট খেতাম আর খেলতাম। আজ এই বাবাই কে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি সেই বাবাই।
বাবাইয়ের ভালো নাম আমি জানতামনা। সোনিয়া আন্টির একমাত্র ছেলে ছিল বাবাই। আমাদের বাসার ঠিক উল্টোদিকের বাসাটাই বাবাইদের ছিল। ওর বাবা কানাডায় থাকত। আমি যখন নাইনে পড়ি তখন হুট করে একদিন বাবাইরা কানাডা চলে গেল। ওর পড়াশোনার জন্য আন্টি আঙ্কেল সবাই কানাডা চলে গিয়েছিল। এরপর বাবাইয়ের সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ ছিলনা। আমি বাবাইকে ভীষণ মিস করতাম। ওই ছিল আমার একমাত্র সাথী। এজন্যই সাগরকে দেখার পর আমার ভীষণ চেনাচেনা লাগত।
সাগর সামনের একটা দোকান থেকে দুটো আইসক্রিম আর দুই টাকার দুটো চকলেট কিনে আনলো। একটা আইসক্রিম আর চকলেট আমার হাতে দিল। সাগরকে চোখের সামনে দেখে আমার আবার বাচ্চা হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। ছোট বেলার মতো আবার সেই খুনসুটি করতে ইচ্ছে করছে।
- তুই নিজেকে আর কখনো এতিম বলবিনা আমি সব সময় তোর সাথে আছি।
- আন্টি আঙ্কেল কেমন আছে?
- আম্মা ভালো আছে। তবে আব্বা গতবছর স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
- আল্লাহ উনাকে বেহেশত দান করুক।
- আমীন। চল একদিন বাসায় আম্মার সাথে দেখা করে আসবি।
- নাহ্ ওদিকে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তা তুমি দেশে আসলে কবে?
- আব্বা মারা যাওয়ার পরেই চলে এসেছি।
- সত্যিই তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। তা বিয়ে করেছ নাকি এখনো সিঙ্গেল?
- এখনো করিনি। তোর কী খবর?
- বিয়ে করিনি বলেই তো আমার হিটলার বাবা আমাকে মৃত ঘোষণা করে দিয়েছে।
- ধুর বাদ দে। আঙ্কেল তো শুরু থেকেই একটু রাগী মানুষ। ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নে দেখবি সবাই মেনে নেবে।
- আমাকে কে বিয়ে করবে?
- করবে করবে যার করার সেই করবে।
- তাই বুঝি।
- হুমম।
- এখন চল রাত হয়ে যাচ্ছে বাসায় ফিরতে অনেক দেরী হয়ে যাবে।
- হুমম চল।
সাগর সেই একমাত্র মানুষ যে আমাকে হাসাতে পারত। আমার জীবনে আমার চোখের জল মোছার মানুষের বড় অভাব।
সাগরের সাথে গল্প করতে করতে বাসার সামনে চলে আসলাম। আমাকে নামিয়ে দিয়ে সে চলে গেল।
পরদিন দুপুরে পিয়া আপুর বৌভাত। দুপুরে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সাগর আমাকে বলেছিল আমাকে নিয়ে যাবে। ২ টার দিকে সে ফোন দিয়ে বলল বাসার নিচে অপেক্ষা করছে। আমি নিচে নেমে গাড়িতে উঠে বসলাম। আমাকে দেখে সাগর হা করে তাকিয়ে ছিল। গাড়িতে উঠে ওর ঠোঁট দুটো চাপ দিয়ে ওর হা মুখ বন্ধ করলাম।
মুখ বন্ধ করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ও ড্রাইভ করা শুরু করলো।
পিয়া আপু আমাদের দুজনকে দেখে খুব খুশি হল। আমরা সবাই মিলে নানারকম গল্প করলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে অনেক ছবি তুললাম পিয়া আপু আর আদিল ভাইয়ের সাথে। অনুষ্ঠান শেষ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম।
পরদিন থেকে কাজে যোগ দিলাম। আমার আর এখন একা একা লাগেনা। সাগর এক দু ঘন্টা পরপর ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেয়। অফ ডে তে আমরা ঘুরতে বের হই সারাদিন টা একসাথে কাটাই। সাগরের প্রতি আমার অদ্ভুত এক ভালোলাগা তৈরি হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি। নিজেকে শত চেষ্টা করেও বাধা দিতে পারছিনা। আমরা দুজনেই মনের সাথে যুদ্ধ করছি কিন্তু মুখ ফুটে কেউ কাউকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না।
১ মাস পর।
হঠাৎ আমার ডাক পড়লো বসের রুমে। আমি বসের দরজায় টোকা দিলাম।
- স্যার আসতে পারি?
- আরে এনি এসো। বসো এখানে। ( আমি চেয়ার টেনে বসলাম)
- আবহাওয়া অধিদপ্তরের থেকে ম্যাসেজ পেয়েছি ৩ দিন পর বাংলাদেশের উপর দিয়ে একটা বড় ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। আমি চাই তুমি একটা টিম নিয়ে পরশু কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে চলে যাও। সেখানে থেকে তুমি সরাসরি বার্তাকক্ষের সাথে যুক্ত হয়ে সকল খবর পৌঁছে দিবে।
- ওকে স্যার আপনি যেমন বলবেন।
- টিম মেম্বার হিসেবে কাদের নিতে চাও সিলেক্ট করে ফেল। সব প্রস্তুতি কালকের মধ্যে শেষ করে পরশু রওনা হয়ে যাও।
- ওকে স্যার।
স্যার হুট করে এত বড় একটা কাজ মাথার উপর চাপিয়ে দিবে বুঝতে পারিনি। ডেস্ক এসে দেখলাম কল বাজছে। সাগর কল দিয়েছে। ফোনটা রিসিভ করে ওকে সন্ধ্যায় দেখা করতে বললাম। এখন ব্যস্ত থাকব তাই ওকে সন্ধ্যার আগে কল করতে নিষিধ করলাম। ফোনটা রেখে কাজে মনযোগ দিলাম। এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ সো সেভাবেই প্রিপারেশন নিতে হবে। ৮ জনের একটা টিম সিলেক্ট করে স্যারকে পেপার সাবমিট করলাম। স্যার সেটাতে সিগনেচার করে দিলেন। সবাইকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে কালকের মধ্যে প্রিপারেশন শেষ করতে বললাম। মিটিং শেষ করে ডেস্কে বসে বসে ভাবছিলাম কী করা যায় কারণ সাগর জানলে কিছুতেই যেতে দিতে চাইবেনা।
চলবে,,,,

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.