মানুষ খেকো পিশাচিনী - পর্ব ১ - ভৌতিক গল্প/গোয়েন্দা কাহিনী/রহস্য

মানুষ খেকো পিশাচিনী
মাসুদ রানা
পর্ব : ১



আচ্ছা বাবা ! মানুষের মাংস খেতে কেমন লাগে??
৬ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের মুখে এই ধরণের প্রশ্ন শুনে যেকোন বাবারই চমকে উঠার কথা! কিন্তু আবির সাহেব বিন্দুমাত্রও চমকালেন না! আবির সাহেব মিষ্টি করে হেসে তার ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে শম্মীকে উত্তর দিলেন:
-খুব খারাপ লাগে মা। অনেক গন্ধঁ আসে মানুষের শরীর থেকে। মানুষের শরীর একে বাড়েই খাবার উপযুক্ত না। এদের মাংস অনেকটা নিম পাতার রসের মতো তিতা লাগে !
-কিন্তু তুমি কী করে জানলে? তুমি কী কখনো মানুষের মাংস খেয়েছো? (শম্মী)
-হ্যাঁ মা! যখন আমি তোমার সমান ছোট ছিলাম তখন খেয়েছিলাম। খুব বাজে স্বাদ মানুষের মাংসের।
-হোক বাজে! তাও আমি মানুষের মাংস খাবো। তুমি প্লিজ এনে দাও না বাবা! প্লিজ প্লিজ প্লিজ বাবা! লক্ষী বাবা!
-আচ্ছা বাবা! কিন্তু এখনতো অনেক রাত হয়ে গেছে! এখনতো আর কোন মানুষ ঘর থেকে বের হবে না! আমার লক্ষী মেয়েটা! তুমি এখন ঘুমায়! আমি তোমায় কাল সকালে মানুষের মাংস এনে দিবো!
-প্রমিজ?
-ঠিক আছে লক্ষী বাবা! প্রমিজ।
.
বাবার সাথে এতটুকু কথা বলেই শম্মী বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। শম্মীর এই ধরণের ব্যবহার আগে আবির সাহেবের কাছে অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক লাগলেও এখন তার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে! কারণ আবির সাহেব জানেন শম্মী আর ৮-১০ টা স্বাভাবিক মেয়ের মতো নয়। শম্মী জন্মের পর থেকেই বেশ অদ্ভুত রকমের আচরণ করতে শুরু করে। শম্মীর জন্মের সাথে সাথেই তার মা মারা যায়। এরপরে বাড়িতে একটা আয়া রাখা হয় শম্মীর জন্য। কিন্তু আয়াটা বেশিদিন টিকেনি ১৩ দিন শম্মীর দেখাশোনা করার পর আয়াটা পালিয়ে যায়। এরপর আবির সাহেব শম্মীর দেখাশোনার জন্য আরো ৪-৫টা আয়া রাখেন। কিন্তু কোন আয়াই তাদের বাড়িতে টিকেনা। সবাই ৩-৪ দিন শম্মীর দেখাশোনা করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আবির সাহেব তখন বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। তিনি কিছুই বুঝতে পারেন না! ভাবেন, রহস্যটা কি?! সব আয়ারা এইভাবে কিছু না বলেই পালিয়ে যাচ্ছে কেন? এরপর তিনি শেষ যে আয়াটাকে রাখেন তার দিকে ভালো করে লক্ষ রাখতে থাকেন। এরপর তিনি যা দেখলেন তা দেখে তিনি পুরোই অবাক হয়ে গেলেন। শম্মীকে যখন ল্যাকটোজেন বা এই ধরণের খাবার দেওয়া হয় তখন সে খাবার খায় না! এরপর আয়ার হাতকে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে রাখে। ঘটনাটা দেখতে স্বাভাবিক লাগলেও ঘটনাটা মোটেও স্বাভাবিক ছিলো না! আসলে শম্মী অনেকটা জোকের মতো করেই ঠোঁট দিয়ে চেপে আয়াদের শরীরের রক্ত খেতো। আয়ারা প্রথমে কিছু বূঝতে পারতো না। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিতো। পরে যখন ব্যাপারটা ভালোমতো বুঝতে পারে, তখনি তারা বেশ ভয় পেয়ে যায় এবং কাউকে কিছু না বলেই এই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়! আবির সাহেব ঘটনাটা বুঝতে পারে এবং বেশ অবাকও হন। তিনি নিজেও একজন ডাক্তার। কিন্তু তিনি তার পুরো জীবনে এইরকম অদ্ভুত বাচ্চা দেখেনি ! এরপর আবির সাহেব এটা ভেবে ভয় পায় যে, হয়তো ঐ আয়া গুলোর মাধ্যমে এই বিষয়টা সবার মধ্যে জানাজানি হয়ে যাবে! কিন্তু অদ্ভুতভাবে আবির সাহেব যখন সেই আয়াগুলোর খোঁজ নিতে যায় তখন জানতে পারে যে ঐ আয়াগুলো যারা শম্মীকে কয়েকদিন করে দেখাশোনা করেছিলো! তারা এই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরেই যার যার বাড়িতে আত্মহত্যা করে মারা যায়। আবির সাহেব কিছুই বুঝতে পারে না তখন! তাই ভয়ে ঐ শহর ছেড়ে এই নতুন শহরে চলে আসেন এবং এরপর থেকে বাড়িতে আর কোন আয়া বা কাজের লোক রাখেনা আবির সাহেব। তিনি নিজেই শম্মীকে লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যদিও এরপর থেকে শম্মীর ঐ অদ্ভুত রক্ত চুষে খাওয়ার ব্যাপারটা তিনি আর লক্ষ করেননি। এরপর শম্মীর যখন বয়স ১ বছর। একদিন শম্মীকে সারা বাড়ি খুঁজে পেলেন না আবির সাহেব! এরপর খুঁজতে খুঁজতে দেখলেন শম্মী খাটের নিচে লুকিয়ে একটা জীবন্ত টিকটিকিকে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। সেদিন আবির সাহেব শম্মীর এই হিংস্র রুপ দেখে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো! এরপর আবির সাহেব প্রায়ই লক্ষ করতেন শম্মী সাধারণ খাবার মোটেও পছন্দ করতো না! সে বিভিন্ন সময় লুকিয়ে লুকিয়ে জীবন্ত টিকটিকি বা
ইদুঁরকে ছিড়েছিড়ে খেতো। এরপর যখন শম্মীর ৩ বছর বয়স তখন একদিন আবির সাহেব লক্ষ করলেন যে শম্মীর এক ধরণের অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে! যার মাধ্যমে সে যেকোন প্রাণিকে বশ করে তার কাছে আহ্বান করতে পারে। এরপর বেশ নিষ্ঠুর হয়ে ছুরি দিয়ে সেই প্রাণিগুলোকে মেরে তাদের রক্ত আর মাংস খায় সে। প্রথম কয়দিন বিভিন্ন পাখি, এরপর বেড়াল এইভাবে নানান ছোট প্রাণিদের বশ করে তাদের কাঁচা মাংস খেতো শম্মী! প্রথমে কয়েকবার আবির সাহেবকে লুকিয়ে এসব করলেও এরপর আবির সাহেবের সামনেই এই পৈশাচিক কাজ শুরু করে শম্মী। আবির সাহেব নির্বাক দর্শকের মতো শুধু তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে দেখে সে দৃশ্য ! আবির সাহেব বুঝতে পারে না যে তার কী করা উচিত। শম্মী তার একমাত্র মেয়ে । তাই তাকেতো আর ফেলে দেওয়া যায় না। এইদিকে তার এই সমস্যাটা এতটাই অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক যে এইগুলো আবির সাহেব কাউকে বলতেও পারছে না। শম্মীর এই অদ্ভুত আচরণ যদি সবার মাঝে জানাজানি হয়ে যায় তাহলে হয়তো তাদের বাঁচাটাই মুশকিল হয়ে যাবে শম্মী!! তাই এই অদ্ভুত ঘটনাটা একান্তই গোপন রাখেন আবির সাহেব। পুরো সমাজ থেকে লুকিয়ে রাখেন তার মেয়ে শম্মীকে । যদিও শম্মী এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তার বয়স যতো বাড়ছে ততোই সে আরো হিংস্র আর ভয়ানক হয়ে উঠছে ! এখন শম্মীর বয়স প্রায় ৬ বছর।
.
এখনো শম্মীর স্বভাবের বিন্দুমাত্রও কোন পরিবর্তন ঘটেনি। সে এখনো টিকটিকি, ইদুঁর , গাছের পাখি, বেড়াল ইত্যাদি ছোটছোট প্রাণিকে হত্যা করে কাঁচাই ছিড়েছিড়ে খায়। সে বর্তমানে আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠছে! তার এখন বর্তমানে মানুষের মাংস খাওয়ার নেশা উঠেছে ! আবির সাহেব জানেন যে, শম্মীর একবার যেটার নেশা উঠে সেটা সে করেই ছাড়ে। বড্ড জেদ তার! তাও মানুষের মাংস নিয়ে মিথ্যা কথা বলে শম্মীর মনযোগ নষ্ট করতে চাইছিলো আবির সাহেব! কিন্তু কোন লাভ হলো না! শম্মী মাংসের আশা করেই রাতে ঘুমিয়ে পড়লো! আবির সাহেব নিজেও জানেন না যে সকালে কী হতে চলেছে?! আবির সাহেব শম্মীকে বুঝতে মাজেমধ্যে শম্মীর সাথে শম্মীর মতোই পৈশাচিক কথা-বার্তা বলতে থাকেন। কিন্তু তাও তিনি শম্মীকে বুঝতে পারেন না। আবির সাহেব ভাবতে থাকেন ৬ বছর বয়সের একটা মেয়ে যদি এতটা হিংস্র আর ভয়ানক হয়, তাহলে সে আরো বড় হলে কতটা ভয়ংকর হতে পারে!! এটা ভাবতেই ভয়ে তার গাঁ শিহরিয়ে উঠলো!
.
রাত এখন প্রায় ১১ টা বাজে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আবির সাহেব জানালার পাশে বসে বসে বৃষ্টি দেখছেন। আর কাঁদতে কাঁদতে ভাবছিলেন যে, কী দোষ ছিলো তার?! কেনো ইবা তার ঘরেই এমন একটা অদ্ভূত ধরণের মেয়ের জন্ম হলো? কী পাপের সাজা এটা?! একটা বাচ্চা মেয়ের ভেতর এতটা হিংস্রতা আর নিষ্ঠুরতা আসলো কিভাবে? শম্মী কী আর কখনো সুস্হ্য হয়ে উঠবে না? সে কী আর ৮-১০ টা মেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করবে না?
শম্মী কেন এই রকম পিশাচিনী হলো? আর তাকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করার কী কোনই উপায় নেই? সৃষ্টিকর্তা কী কাউকে পাঠাবে না তাদের এই রকম অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি দিতে? কেউ কী তাদের সাহায্য করতে পারে না?
.
জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে এইসবই ভাবছিলেন আবির সাহেব। এরপর হঠাৎ কারো জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেলেন আবির সাহেব । আবির সাহেব বেশ চমকে উঠলেন! এতরাতে বাড়ির ভেতর কে এসেছে? এরপর দ্রুত গিয়ে দরজাটা খুললেন। দরজাটা খুলতেই আবির সাহেব দেখলেন একজন ভদ্রলোক পুরো বৃষ্টিতে ভিজে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে! আবির সাহেব কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে লোকটাকে প্রশ্ন করলেন:
-কে আপনি? কী চান এতোরাত্রে?
.
লোকটা কিছুটা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে উত্তর দিলো:
-হ্যালো। আমি মিসির আলী। আমি একজন ডিটেক্টিভ । আমার গাড়িটা হঠাৎ আপনার বাড়ির সামনে এসে নষ্ট হয়ে গেছে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখছি না! আমি কী আজকের রাতটা আপনার বাড়িতে থাকতে পারি? . . . . . . . . . . .. . .
.
.
. . . . . চলবে . . . .

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.