লাশ - পর্ব ০২ (শেষ) - ভৌতিক গল্প

লাশ
সাকিব ফারহান
পর্বঃ ০২ (শেষ)


এত রাতে আফসার উদ্দিনের ফোন? নিশ্চয় কোন খবর আছে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ঠেকালো রাফিন। "হ্যালো।"
"লাশ পাওয়া গেছে ভাই। অল্পবয়সী একটা মেয়ের। আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। লাশ নিতে চাইলে এখনই আসতে হবে।"
"আচ্ছা ঠিকাছে। আমরা এখনই আসছি।"
"কে ফোন করেছিলো?" জানতে চাইল লাবিব।
"আফসার ভাই। লাশের ব্যবস্থা করেছে। এখনই যেতে বলছে।"
"এত রাতে?"
"তো কী হয়েছে? তাছাড়া লাশটা নাকি অল্পবয়সী একটা মেয়ের। এখন না গেলে ওটা আর পাবো না।"
অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেল লাবিব।
মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল ওরা। বাসা থেকে মেডিকেলের দূরত্ব বেশি নয়। মেঘলা রাতে এটুকু রাস্তা চোখের পলকেই পাড়ি দিতে পারবে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিটাও কমে গেছে।
মেডিকেলে গিয়ে আফসার উদ্দিনের দেখা পেল ওরা। সে ওদেরকে মর্গে নিয়ে গেল। কফিন আর ভ্যান আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিলো।
লাশটা ওদের দেখিয়ে দিল আফসার উদ্দিন। সাদা কাপড় দিয়ে লাশটা মুড়িয়ে বেধে দিল।
রাফিন জিজ্ঞেস করল, "লাশের গায়ে কাপড় ছিল না?"
"জ্বে, ছিল।"
"খুলে নিয়েছ?"
উপর নীচ মাথা ঝাঁকাল আফসার উদ্দিন।
তারপর ওরা তিনজনে মিলে আপাদমস্তক মোড়ানো লাশটা বারান্দায় রাখা কফিনে ঢোকালো। কফিন নিয়ে ভ্যানে তুলতে তুলতে টিপটিপ বৃষ্টিটা আবার পড়তে শুরু করল। বৃষ্টির জোর আরও বাড়ার আগে এই মধ্যরাতে বাসায় পৌঁছাতে হবে ওদের।
বাসার কাছে এসে দেখলো গোটা এলাকায় ইলেকট্রিসিটি নেই। শহরের একটু বাইরে এই এলাকায় গ্রাম্য ভাব প্রবল। আর সে কারনেই একটু বৃষ্টিবাদলা হলেই লাইন অফ করে রাখে। ঝড় বৃষ্টি থেমে গেলেও সে লাইন আর আসে না। সেজন্য ডজনখানেক মোমবাতি কিনে রাখে ওরা।
অন্ধকারের মধ্যে ভ্যানওয়ালা সহ কফিন নিয়ে দোতলায় তুললো। মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে প্লাস্টার না করা সিড়ি ভাঙলো। আর কোন ভাড়াটে না থাকায় অহেতুক কোন ঝামেলা হলো না। তাছাড়া বাড়িওয়ালাদের ঘরটাও বেশ খানিকটা দূরে। এতক্ষণে ওরা বোধহয় ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে।
ভ্যানওয়ালা এত ধরাধরি করায় চুক্তির চেয়েও আরও একশ টাকা বেশি দিল রাফিন। লোকটা খুশি হয়ে বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়ল।
রুমে ঢুকে রাফিন মোমবাতি ধরাতে ধরাতে বলল, "বৃষ্টির যে বেগ সাথে ঝড় বাড়ছে। আজ রাতে আর কারেন্ট আসবে না বোধহয়। কোথাও ট্রান্সফরমারটা গেছে হয়তো।"
বারান্দায় রাখা কাঠের ভারী কফিনটা একপাশে সরিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার পথটা বের করতে করতে লাবিব বলল, "মোমের আলোয় শুটিং করবি নাকি?"
রাফিন উত্তেজিত গলায় বলল, "সেইটাই দারুন হবে বলে মনে হচ্ছে। মোমের স্বল্প আলো আঁধারিতে লাশকাটার পরিবেশটা আরও ভয়ের হবে। হরর সীনে ভয়ের পরিবেশটাই আসল।
"ঠিক আছে।" মাথা ঝাঁকাল লাবিব। "কাজে যখন হাত দিয়েছি, তখন সেটা শেষ করাই ভালো।"
"আগে খেয়ে নিই, না কী বলিস?"
"তুই খেতে চাইলে খা। কোনও খাবার এখন আর মুখে উঠবে না। খিদে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।"
"আমারও খেতে ইচ্ছে করছে না। নতুন কিছু করার উত্তেজনায় খিদে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। উত্তেজনা খিদে নষ্ট করে।"
"তাহলে তুই তোর ক্যামেরার লেন্স-টেন্স ঠিক কর। আমি হাতমুখ ধুয়ে আসি।"
"হাতমুখ ধোয়ার আগে লাশটা কফিন থেকে বের করে নিই। ডিসেকশান টেবিলে তুলে দে। টেবিলে লাশ থাকলে ক্যামেরার এঙ্গেল ঠিক করতে সুবিধা হবে। আর হাতমুখ ধুয়ে করবিটা কী? এখনই তো ছুরিকাঁচি নিয়ে লাশ কাটতে হবে।"
"ঠিক আছে লাশ ধরছি। শোন, তুই ড্রয়ার থেকে লাশ কাটার যন্ত্রপাতি যা আছে সব বের কর।"
"করছি করছি। আর দেখ ড্রয়ারে জিনিস আছে। সাবধানে নিস। নতুন জিনিস।"
ড্রয়ার খুললো লাবিব। মোমের আলোয় নতুন চাপাতিটা চকচক করে উঠলো। সেটা দেখে অবাক হলো লাবিব। ভ্রু কুচকে তাকাল রাফিনের দিকে। "এটা দিয়ে তুই কী করবি?"
ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করল রাফিন। "এটা যেহেতু একটা হরর সীন হবে, সুতরাং ভয়ের মাত্রাটা একটু বেশি রাখাই শ্রেয়। তাই লাশটা চামড়া ছাড়ানোর পরে চাপাতি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটতে হবে।"
রাফিনের কথা শুনে একমুহুর্ত ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো লাবিব। বলল না কিছু। ওয়াশরুমে গেল। হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখলো, রুম আলো আলো। ক্যামেরার নির্দিষ্টমুখী আলো পড়ে আছে সাদা চাদরের ফাঁক থেকে বের হওয়া ফ্যাকাসে দুটো পায়ের উপর। মেয়েটা বোধহয় ফর্সাই ছিল। মরে গিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে।
টেবিলের উপর লাল মোমবাতি জ্বলছে। বাইরে ঝড় বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমক। চমৎকার আলোআঁধারি পরিবেশ।
হঠাৎ রাফিন বলল, "বাইরের বিদ্যুৎ চমকটা ধরতে পারলে আরও বেশি এক্সাইটিং হতো। অবশ্য ল্যাবেও করা যাবে। ভাবছি ঝড়বৃষ্টির দৃশ্য আর ফাঁকে ফাঁকে বিদ্যুৎ চমকানি দিয়ে দিব।"
লাবিব ফ্যাকাসে পা দুটোর দিকে তাকিয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল, "শুধু পায়ের কাছে খুললি কেন? পুরো চাদরটাই সরিয়ে ফেল।" বলেই চাদরটা ধরে সে টান দিতে গেল। রাফিন তৎক্ষনাৎ ক্যামেরার পেছন থেকে লাফ দিয়ে এসে লাবিবের হাত থেকে চাদরটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, "কী করছিস কী? আমার পুরো প্ল্যানটাই ভেস্তে যাবে। শোন, আমি এখন ক্যামেরাম্যান কাম পরিচালক। তুই আমার অভিনেতা।"
লাবিব একটু রাগী গলায় বলল, "কী করতে হবে বল?"
"পুরো লাশেরই ছাল আমরা ছাড়াব, কিন্তু আস্তে আস্তে। পা থেকে ছিলতে ছিলতে মাথা পর্যন্ত উঠবে। তা হলে গোটা চামড়া ছাড়ানো শরীর দেখলে দর্শক ভিমরি খাবে। ভিডিওটার দামও বেশি পাব আমরা।"
লাবিব শক্ত হয়ে যাওয়া খোলা ফ্যাকাসে পায়ে হাত দিয়ে বলল, "ঠিক আছে, তুই যেভাবে বলিস। এখন স্কালপোলটা দে। আর টুইজার।"
"দাঁড়া..দাঁড়া। এখনই না। আরেকটু কাজ আছে।"
"আবার কী করতে হবে? মেকাপ করতে হবে নাকি?"
"তা না। তবে এই পোষাকে হবে না। আমি তোর জন্য কালো আলখেল্লার ব্যবস্থা করেছি। দাঁড়া ওটা নিয়ে আসি।" বলেই আলখেল্লাটা আনতে চলে গেল রাফিন।
লাবিব বিড়বিড় করে বলল, "এই গরমে এখন আমাকে আলখেল্লা পরতে হবে?"
"গরম দেখলি কোথায়? বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশটা বেশ ঠাণ্ডা। নে এটা পরে নে।" কালো আলখেল্লাটা লাবিবের হাতে দিল রাফিন।
আলখেল্লাটা পরে নিল লাবিব। কালো মাস্কটাও লাগিয়ে নিল। এখন শুধু ওর চোখদুটো দেখা যাচ্ছে। পুরো শরীরটাই কালো কাপড়ে ঢাকা। কেমন ভ্যাম্পায়ারের মত লাগছে।
ছুরি, চিমটে নিয়ে কাজে লেগে পড়ল লাবিব। সহজ কাজ না। প্রথমদিকে হাত কাঁপতে লাগল। সেটা দেখে রাফিন বলল, "সমস্যা নেই, তুই কাজ করে যা।

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.