জ্বীন প্রতিবেশী - পর্ব ৯ - ভৌতিক গল্প

জ্বীন প্রতিবেশী
লেখা: সুমাইয়া জান্নাতি
পর্ব ০৯


অাহমাদ ভাবছে কিভাবে তার আব্বুর কাছে রাশিদ বেগের গায়েব হওয়ার খবর পৌছানো যায়। সে এখানে আফসানা কে একা রেখে যেতে পারবেনা। অাবার তারা দু'জনও এক সাথে এখান থেকে যেতে পারবেনা, কারণ অনিলার এখন খুব গুরুত্বপূর্ন সময় যাচ্ছে। যে কোনো সময় তাদের কারো সাহায্য লাগবে। অার অাহমাদ বা অাফসানার এখনও সেই সময় আসেনি যে তারা চোখের পলকে স্থান পরিবর্তন করতে পারবে। অাহমাদ চিন্তায় পরে যায়।
--"ভাইজান, কি ভাবছেন? আফসানা ভাইয়ের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
--" ভাবছি কিভাবে আব্বুর কাছে খবর পৌছাবো।আমিতো তোকে এখানে একা রেখে যেতে পারবো না।"
--"আরেহ ভাইজান। আপনি এই পেরেশানি তে আছেন?আপনি নিশ্চিন্তে রওয়ানা হয়ে যান। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে একাই থাকতে পারবো। আর কয়েকটা দিনেরই তো ব্যাপার। কোনো সমস্যা হবেনা।"
আফসানা ভাইকে সাহস দেয়। কারণ এই মুহূর্তে আব্বুজানের কাছে খবরটা পৌছে দেয়া বেশি দরকার।আহমাদ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা!
--"তুই থাকতে পারবিতো বোন? কোনো সমস্যা দেখলে তুই চলে যাবি প্রাসাদে।দেরি করবিনা একদম। "
আহমাদ বোনকে বলে। যদিও তার মন সায় দিচ্ছে না বোনকে একা রেখে যাওয়ার জন্য।
--”অাপনি নিশ্চিন্তে যেতে পারেন ভাইজান।"
অাফসানা হাসি দিয়ে ভাইয়ের পেরেশানি দূর করার চেষ্টা করে।
অাহমাদ তৈরী হয়ে বোনকে বিদায় জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরে। যাওয়ার অাগে অনিলাকে দেখে যেতে হবে।অনিলার কথা ভাবতেই অাহমাদের সব চিন্তা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। সে অনিলার রুমে প্রবেশ করে। অনিলা কিছুক্ষণ অাগেই শাওয়ার থেকে বের হয়েছে।
অনিলার তার শ্যাম্পু করা চুল টাওয়াল দিয়ে মুছতে থাকে। অাহমাদ অনিলার একদম কাছে এসে দাড়ায়।অনিলার চুল ঝাড়ার পানি আহমাদের মুখে এসে লাগে।
আহমাদের মনে হয় সে যদি এভাবে সারা জীবন অনিলার পাশে দাড়িয়ে তার চুল মোছা দেখতে পারতো তাহলে কতই না ভালো হতো! কিন্ত আহমাদ কে এখন যেতে হবে।সে অনিলা কে মনে মনে বিদায় জানিয়ে বের হয়ে যায়।আহমাদ যখন বের হয় তখন অনিলার মনটা যেন কেমন করে উঠে। হূট করেই তার মন ভার ভার লাগা শুরু হয়।
অাহমাদ গিয়েছে অনেক দিন হয়ে গেলো।
কিন্তু এখনো ফেরেনি। আফসানা খুব চিন্তায় পরে গেছে।এতো দিন তো লাগার কথা নয়। তার ভীষণ ভয় লাগা শুরু হয়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। এদিক দিয়ে অনিলার আঠারো বছরে পা দিতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এখন কোনো ভাবেই আফসানার এখান থেকে যাওয়া যাবেনা। কিন্তু ভাইয়ের চিন্তায় আফসানার অবস্থা খারাপ।
আফসানা বাসাতেই থাকে। এর মাঝে অনিলা কয়েক বার এসেছে তাদের বাসায়। আফসানা ভালো করেই যানে অনিলা কেনো এতো বার তাদের বাসায় অাসছে।আজকে দুপুরে আবারও অনিলার আসার কথা। সে নিজেই বলেছিলো আসবে। আফসানা অনিলার জন্য অপেক্ষা করে।
বেশ কয়েকদিন থেকে অনিলার শরীর মন কিছুই ভালো নেই। অনিলার মনে হচ্ছে সে বড় কোনো অসুখ বাধিয়েছে শরীরে। কিন্তু অসুখটার লক্ষণ গুলি বড়ই অদ্ভুত। যেমন হঠাৎ করে উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া, গায়ের রং দুধে আলতার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে যাওয়া, রাতের বেলা একা একা ছাদে যেতে ইচ্ছা করা, এমন আরও অনেক কিছু।
অনিলা এসব ব্যাপারে মায়ের সাথে আলোচনা করেও তেমন কোনো ফল পায়নি। লাবনি ইসলাম যেন গায়েই লাগাচ্ছেন না। বরংঅনিলা তার মায়ের কিছু কর্মকান্ডে ভালোই অবাক হচ্ছে। তার মা তাকে ”জ্বীন জাতি”বিষয়ক কিছু বই কিনে দিয়েছেন।
অথচ অনিলার এতো টুকু বয়সে তার মা কখনো এই সব ভুত জ্বীনের গল্পের বই কিনে দেননি।আর এখন কিনা এই বুড়ো বয়সে এসে এসব কিনে দিচ্ছেন!
আবার প্রতিদিন জিজ্ঞেসও করছেন সে পড়েছে কিনা!
অনিলা তার মায়ের এসব কর্ম কান্ডে বেজায় বিরক্ত।এমনিতেই সে সারা দিন রাত আহমাদের কথা ভাবতেই ব্যস্ত থাকে। সেই যে একদিন তাকে স্বপ্নে দেখেছিলো, এর পর আর কোনো খবর নেই আহমাদের। না অনিলার সাথে বাস্তবে দেখা হয়, না স্বপ্নে সে আসে। এটা নিয়ে অনিলার খুবই কষ্টে দিন কাটছে।
সে আজও আহমাদদের বাসায় যায়। যদি একবার দেখা পেয়ে যায় এই আশায়।
--"দরজা খুলে রেখেছেন যে?"
আহমাদদের ফ্লাটের দরজা খোলা দেখে অনিলা আফসানা কে জিজ্ঞেস করে।
--“খুলে রেখেছি কারন আমি জানতাম আপনি আসবেন।" আফসানা অনিলাকে হেসে উত্তর দেয়।
--"ও হ্যা। কালই তো বলেছিলাম আজ এই সময় অাসবো।"
অনিলা উদাস ভংগিতে জবাব দেয়।
আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। কালও খেয়াল করেছিলাম।” অনিলা আফসানাকে ভালো ভাবে দেখে।৷ আহমাদের ব্যাপারে কৌশলে জিজ্ঞেস করবে নাকি?
--"আপনার ভাই, চাচা কাউকেই দেখছিনা যে? কোথাও গেছে নাকি? অনিলা আর কৌতহুল ধরে রাখতে পারলোনা আহমাদের ব্যপারে। শুধুতো তার ভাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করা যায়না। তাই ভদ্রতা দেখিয়ে তাদের চাচার কথাও জিজ্ঞেস করলো।
--"অামাদের অাব্বুজান একটা দরকারি কাজে ভাইজান আর চাচাজান কে ডেকে পাঠিয়েছেন।
আমাকেও যেতে বলেছিলেন। আমি বলেছি তারা ফিরে আসলেই আমি যাবো।"
অনিলার প্রশ্ন শোনার সাথেই সাথেই আফসানা উত্তর দিয়ে দেয়। কারণ সে আগে থেকেই জানতো। অনিলা কি জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু আর কয় দিন পর থেকে অনিলার মনের ভাবনা পরে ফেলার সুযোগ আর থাকবেনা।
আফসানা আর অনিলার আরও কিছুক্ষণ কথাহয়। কিন্তু তাদের আলাপ আজ আর জমে উঠে না।
###
আহমাদ মাথা নিচু করে বসে আছে। তার চার পাশে কাঁচের দেয়াল। আর সারা শরীরে আগুনের ছেঁকা দেওয়া। তীব্র যন্ত্রণাতে সে চোখ মেলতে পারছেনা। আজ কয়দিন ধরে সে এভাবে আছে, বলতে পারবেনা। আহমাদ মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছিলো তার সাথে।
আহমাদ যেদিন তার চাচা রাশিদ বেগের গায়েব হয়ে যাওয়ার ব্যপারটা তার আব্বুজান আর দাদা জানের কাছে জানাতে বের হয় বাসা থেকে, সেদিন সে তাদের প্রাসাদের প্রায় কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো। কিন্তু যখনি সে প্রাসাদের সিমানায় পৌছায় তখন অনেক কালো ধোয়া এসে তাকে ঘিরে ফেলে। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই অচেতন হয়ে যায়। কিন্তু তার মনে আছে, চেতনা হারানোর ঠিক আগ মুহুর্তে সে খুব পরিচিত কারো কন্ঠ শুনতে পায়।
আহমাদ কাচের দেয়াল ভেদ করে বাহির টা দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু সে কিছুই দেখতে পায়না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় তার।
রাশিদ বেগ আহমাদের দিকে জ্বল জ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আহমাদ তাকে দেখতে পাচ্ছেনা, সে ঠিকই দেখতে পাচ্ছে তাকে।
রাশিদ বেগের নয়'শ বছরের ইচ্ছা পূর্ণ হতে যাচ্ছে। সে আজ মহা খুশি। এবার তাকে "জ্বীন প্রধান" হওয়া থেকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবেনা।
রাশিদ বেগ অট্ট হাসিতে ফেটে পরে। এই হাসি যদি কোনো মানুষ শুনতে পেতো তাহলে সে ভয়েই অজ্ঞান হয়ে যেতো।
চলবে

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.