জ্বীন প্রতিবেশী - পর্ব ১১ - ভৌতিক গল্প

জ্বীন প্রতিবেশী
লেখা: সুমাইয়া জান্নাতি
পর্ব


চারদিকে প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আহমাদকে কাঁচের ঘরটা তে এখনো বন্দী করে রেখেছে রাশিদ বেগ। কিন্তু এখন সে আশেপাশে নেই। ঝড় বৃষ্টি কে যমের মত ভয় পায় সে।
অাহমাদ বুঝতে পারছে এখন রাশিদ বেগ তার কাছাকাছি নেই। কারণ সে যতোক্ষণ এখানে ছিলো, ততোক্ষণ আহমাদ এর দৃষ্টি শক্তি কে সে তার বদশক্তির মাধ্যমে দুর্বল করে রেখেছিলো।যেনো সে এই কাঁচের দেয়ালের বাহিরে কিছু না দেখতে পারে। কিন্তু এখন সে দূরে থাকাতে আহমাদ বাহিরের সব কিছু স্পষ্ট ভাবেই দেখতে পাচ্ছে।
আহমাদ বুঝতে পারছে, তাকে কোনো এক গহীন জংগলে আটকে রাখা হয়েছে। তার চারপাশে অনেক বড় বড় গাছ দেখা যাচ্ছে। সূর্যের অালো খুব কম পৌছাতে পারে এইদিকে।
এখনি পালানোর মোক্ষম সময়! আহমাদ মনে মনে ভাবতে থাকে। যদিও এই ঝড় বৃষ্টি তার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
আহমাদ তার সমস্ত শক্তি দিয়ে কাঁচের দেয়াল ভেদ করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু তার চেষ্টা বার বার বিফল হতে থাকে। আহমাদ আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।
অনিলার কথা মনে পরে যায় আহমাদের। অনিলা না জানি এখন কেমন আছে!
আহমাদ বুঝতে পারছেনা যে চাঁদ উঠে গেছে কি না। এমন কি এটাও বুঝতে পারছেনা এখানে কয়দিন ধরে আছে।
সে ভাবে, যদি এমন হয় চাঁদ উঠে গেছে আর আফসানাও কোনো কারণে অনিলার সাথে না থাকতে পারে তাহলে অনিলার জন্য এটা মারাত্মক কষ্টকর তো হবেই, আবার সে যখন বুঝে ফেলবে যে মানব সমাজে সে আর থাকতে পারবেনা তখন হয়তো অন্য কোনো জ্বীনদের অঞ্চলে চলে যেতে পারে। আবার রাশিদ বেগ তাকে কয়েদ ও করে ফেলতে পারে!
অাহমাদ অার কিছুই ভাবতে পারেনা! সে কাঁচের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে পড়ে৷
#
আফসানা আর খাবরি আসাদ তাদের ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এদিক টায় ঝড় থেমে গেছে। কিন্তু আকাশ এখনও পরিস্কার হয়নি।
অাফসানা চিন্তা করছে, চাঁদ আসমানে দেখা দিতে আর মাত্র দুইদিন বাকি। আহমাদ ভাই কে রাশিদ বেগের কয়েদ থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে এই দু দিনের মধ্যেই। কিন্তু রাশিদ বেগ আহমাদ কে কোথায় কয়েদ করেছে আগে সেটা জানতে হবে। আফসানা ভাইকে উদ্ধার করার কৌশল আটছে মনে মনে।
-- "আপনি যদি অনুমতি দেন, তাহলে আমি কিছু বলতে চাই। "
খাবরি আসাদ আফসানার ঠিক পেছনে দাড়িয়ে আছে।
--"বলে ফেলো যা বলতে চাও।"
--"অামাদের আগে জানতে হবে রাশিদ বেগ ছোট হুজুর কে কোথায় কয়েদ করেছেন।সেটা জানা হয়ে গেলে তাকে উদ্ধারের জন্য আমরা অতি দ্রুত বের হতে পারবো।"
--" নিজেকে এতো হুশিয়ার ভেবোনা। তোমার কি মনে হয় এই কথা অামি ভেবে দেখিনি?" আফসানা খাবরি আসাদের কথা পুরোপুরি না শুনেই তাকে ধমক দেয়।
--" জ্বি, আমি বুঝতে পারছি আপনি অবশ্যই এ ব্যাপারে ভেবেছেন। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি যে রাশিদ বেগের অাস্তানা কোথায় এটা জানার জন্য কোনো জ্বীন কে পাঠাবো কিনা? অামি এ ব্যাপারে আপনার অনুমতি চাচ্ছিলাম।"
খাবরি আসাদ আফসানা কে বুঝিয়ে বলে।
আফসানা মনে মনে ভাবে এটা খাবরি ঠিক ই বলেছে। এভাবে চিন্তা করে করে শুধু সময় নষ্টই হচ্ছে। তার চেয়ে ভালো কিছু সাধারণ জ্বীন সেবক দের সে পাঠিয়ে দিক ভাইজান কোথায় বন্দী হয়ে আছে, সেটা খুজে বের করতে। হাতে একদমই সময় নেই।
--"ঠিক আছে। তুমি কিছু জ্বীন সেবক দের পাঠিয়ে দাও। কিন্তু তাদের সতর্ক করে দিবে, যেনো এসব ব্যাপার কোনো ভাবেই প্রাসাদে না পৌছায়। আর যতো দ্রুত সম্ভব তারা যেনো ভাইজানের খবর আমাকে এনে দেয়।!"
--"আপনি একদম পেরেশান হবেন না। আমি কিছু শক্তিধর জ্বীন সেবক দের পাঠাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, ওরা ভোরের সূর্য উঠার আগেই ছোট হুজুরের খবর জানাবে।"
একথা বলে আসাদ উড়ে চলে যায়।
আফসানা ছাদে দাঁড়িয়ে অনিলার কথা ভাবে। অনিলার শরীরের হাল এখন নিশ্চয়ই বেশি ভালো না। সে উড়ে এসে অনিলার রুমের বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায়। আফসানা দেখে অনিলা ভীষন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বিছানার এপাশ ওপাশ করছে আর আল্লাহ কে ডাকছে।
আফসানার ভীষণ মায়া হয় অনিলাকে দেখে। সে চিন্তা করে অনিলার পাশে যেয়ে কিছুক্ষণ বসবে।কারন তার ভাইজান যদি পরে কখনো জিজ্ঞেস করে তার অনুপুস্থিতি তে সে অনিলার পাশে ছিলো কিনা, তখন অাফসানা কি জবাব দেবে?
আফসানা অনিলাদের বারান্দার কাঠের দরজা ভেদ করে তার পাশে যেয়ে বসলো। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আর সাথে সাথেই অনিলার গোঙানির শব্দ থেমে যায়।
অনিলার মনে হচ্ছে তার পাশে কেউ বসে আছে। তার কাছ থেকে খুব সুঘ্রাণ ভেসে অাসছে অনিলার নাকে। তার শরীরের তীব্র যন্ত্রণাও অনেক টা কম লাগছে। সে চোখ খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু হঠাৎ যন্ত্রনা কমে আসাতে তার দু'চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে। অনিলা সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরে।
আফসানা এখনো অনিলার পাশেই বসে আছে।সে অনিলার দিকে তাকিয়ে ভাবে, তার প্রিয় ফুফুজান সাবরিনের সাথে তার মেয়ে বিলকিসের চেহারার হুবহু মিল আছে। বরং সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, বিলকিস আরো বেশি রূপবতী হয়ে উঠছে তার মায়ের থেকে।
কিন্তু সে যে শুধু রূপবতীই হবেনা! সে হবে তাদের জ্বীন সমাজের মধ্যে অন্যতম ক্ষমতাধর জ্বীন কন্যা। কেননা তার মধ্যে জ্বীন এবং ইনসান এই দুই জাতির সমস্ত সত্তার গুণাগুণ রয়েছে।
কিন্তু বিলকিস তখনি পুরোপুরি ভাবে এইসব ক্ষমতার অধিকারী হবে যখন সে তাদের জ্বিন অঞ্চলের কোনো ক্ষমতাধর জ্বীন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
আফসানার মাথায় হঠাৎ চিন্তা আসে, তার ভাইজান যে বিলকিস কে চল্লিশ দিনের শিশু অবস্থায় দেখে এতোটা বছর তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে, একথা তাদের দাদাজান, আব্বুজান বা আম্মি কেউই জানেন না। শুধু মাত্র আফসানা আর ওই রাশিদ বেগ ই জানে! একথা আফসানার মাথায় আসতেই সে এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে যায়।
দাদাজান ব্যাপার টাকে কিভাবে নিবেন?এতোদিন এটা তার দেমাগে কেনো আসেনি?
আফসানা আবারো ভীষণ পেরেশানিতে পরে যায়।
#
খাবরি আসাদ তিনজন শক্তিশালী জ্বীন কে আদেশ করে আহমাদ বেগ কে খুজে বের করে আনার জন্য। এই তিন জন জ্বীনের তিনটি বিশেষ ক্ষমতা অাছে। এদের একজন তার বিকট আওয়াজের প্রতিধ্বনির মাধ্যমে সামনে থাকা যেকোনো অদৃশ্য বস্তুর অস্তিত্ব টের পায়।
তাদের অপর জন মাটি, সমুদ্র এবং বাতাসে লুকিয়ে থাকা যে কোনো বস্তুকে খুজে এনে দিতে পারে। আর আরেক জন যে কোনো কঠিন, তরল, বায়বীয় বস্তুর সাথে মিশে তার গুণাগুণ নষ্ট করে দিতে পারে।
খাবরি আসাদ ভেবে দেখলো এই তিনজন জ্বীন এর নজর থেকে আহমাদ বেগ কে কোথাও লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ভোরের অালো ফোটার অাগেই তারা অাহমাদ বেগের খবর এনে দিতে পারবে। আসাদ তাদের কে জ্বীন অঞ্চল থেকে উত্তর পূর্ব দিকে যাওয়ার হুকুম দেয়। কারণ ওদিক টায় জ্বীন এবং ইনসান উভয়েরই আনাগোনা খুব কম হয়। ওদিকেই কোনো ভাবে লুকিয়ে রাখা হতে পারে আহমাদকে।
#
আহমাদ অনেক্ষণ থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে কাঁচের দেয়াল ভেদ করার। এখনো রাশিদ বেগ কাছাকাছি আসেনি। বিদ্যূৎ চমকানো দেখে হয়তো কোনো গর্তের ভিতর লুকিয়ে আছে।আহমেদ চিন্তা করে, ঠিক এখনি যদি সে এখান থেকে বের হতে পারতো!
হঠাৎ আহমেদ দূর থেকে কেমন বিকট চিৎকার এর আওয়াজ শুনতে পায়। সে আওয়াজের উৎসের দিকে ভালো ভাবে তাকায়। সে দেখতে পায় তিনটি আগুনের হুল্কা আহমাদের কাচের ঘর দিকে ছুটে আসছে। সেই আগুন কাচের দেয়ালের সাথে খুব জোরে ধাক্কা খায়। আহমাদ চমকে গিয়ে পিছিয়ে যায়। সে তার চার পাশে তাকিয়ে দেখে কাঁচের দেয়াল আর নেই।
তার সামনে তিনজন জ্বীন দাঁড়িয়ে আছে। তারা আহমাদ কে সালাম দিয়ে জানায় তাকে উদ্ধার করার জন্য তার বোন আফসানার আদেশে খাবরি আসাদ এখানে পাঠিয়েছে।
আহমাদ আল্লাহর কাছে হাজার কোটি শুকরিয়া জানায়। সে আর একমুহুর্ত সময় নষ্ট না করে অনিলার কাছে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।
যদি রাশিদ বেগ কোনো ভাবে টের পায় আহমাদ তার কবজা থেকে ছুটে গেছে তাহলে খুব ঝামেলা হয়ে যাবে। আহমাদ মনে মনে আফসোস করে রাশিদ বেগ কে এখান থেকে পাকড়াও না করতে পারার কারনণ। কিন্তু আহমাদ তাকে কোনো ভাবেই ছেড়ে দিবেনা!
খাবরি আসাদ কে খুব ভোরে ওই তিনজন জ্বীন এসে আহমাদ কে খুজে পাওয়ার সুখবর জানায়।
খাবরি আসাদ এই সুখবর আফসানাকে জানাতে যায়। সে যেয়ে দেখে আফসানা তার ঘরে চিন্তিতে মুখে বসে আছে।
(চলবে)

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.