ঘরের খুনি - পর্ব ১ - ভৌতিক গল্প / রহস্য

ঘরের খুনি
লেখিকা: জান্নাতুল ফেরদৌসী জেমি
পর্ব ১


গভীর রাতে ফার্মগেট অভার ব্রীজের মাঝখানে খুন হয়েছেন মিস্টার রফিক সাহেব। বেশ কয়েক জন মিলে ধস্তাধস্তির পরে খুন করা হয়েছে তাকে। এলাকার প্রভাবশালী বিজনেসম্যান হয়েও এত রাতে এখানে কেন গিয়েছিলেন রফিক সাহেব সে ব্যাপারেও পুলিশের অনেক কৌতূহল রয়েছে!
বুকে, পেটে এবং ঘাড়ের সহ দেহের বিভিন্ন স্থানে ছুরির আঘাতে আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক পাটি বুট জুতা এবং শার্টের একটি বোতাম ছাড়া কিছু উদ্ধার করতে পারিনি। খুনি ধরা তো দূরের কথা, খুনের মোটিভ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশের দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার জামান। এমত অবস্থায় উপর থেকে প্রচুর প্রেসারে আছে মিস্টার জামান সাহেব, যত দ্রুত সম্ভব তাকে কেস সলভ করে দিতে হবে এবং খুনিকে পুলিশ কাস্টে বন্দী করতে হবে। বাধ্য হয়ে তিনি প্রাইভেট গোয়েন্দার সাহায্য নেওয়ার উদ্যোগে হলেন!
জামান সাহেব ডিটেকটিভ মেঘান অ্যালেইসা'র সাহায্য নেওয়ার জন্য ওর বাসায় যায়।
দরজায় নক দিলে মেঘানের মা এসে দরজা খোলে। জামান সাহেব মেঘানকে ডেকে দিতে বললে, মেঘানের মা জানায় সে এখনো ভার্সিটি থেকে ফেরেনি।
এদিকে মেঘান তখনো ভার্সিটি থেকে ফেরেনি শুনে জামান সাহেব কিছুটা হতাশ হন। চলে যেতে চাইলে মায়ান পিছন থেকে ডাক দেয়।
মায়ান - আংকেল, আংকেল আপু তো এক্ষুনি চলে আসবে। আর জন ভাইয়া তো বাসায় আছে, ক্লার্ক ভাইয়াও আসছে আজ। আমি ভাইয়াদের ডেকে দিচ্ছি, আপনি বসুন।
জামান সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে, মায়ান দৌড়ে যায় জন আর ক্লার্ক কে ডাকতে।
একটু পরে জন আর ক্লার্ক সেখানে আসে, জামান সাহেবের সাথে পরিচয় সেরে নেয়। জামান সাহেব তখন ওদের বিস্তারিত বলে।
ঠিক তখনই মেঘান এসে হাজির।
মায়ান - (মেঘানের কাছে দৌড়ে গিয়ে।) আপু জানো, একটা আংকেল আসছে নতুন কেস নিয়ে। তুমি নেই শুনে চলে যেতে চাইছিলো, আমি যেতে দেইনি।
মেঘান - আচ্ছা বুঝলাম, এখন চুপ থাক। আমি কথা বলে দেখছি।
মেঘান একটু এগিয়ে গিয়ে জামান সাহেব কে সালাম দেয়। আর তার দেরি হওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে৷
জামান সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে, মেঘানের এই ভদ্র ও মার্জিত ব্যবহারে সন্তুষ্ট হন।
জামান সাহেব মেঘানকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললে মেঘান না সূচক সম্মতি দেয়। শুধু ঘাড় থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পাশের টেবিলে রাখে।
জামান সাহেব পুনরায় রফিক সাহেবের খুনের ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন। বলেন সেখানে পাওয়া দুটি সূত্রের কথা আর নিজেদের এই অপারগতার কথাও বিনা দ্বিধায় বলেন তিনি।
মেঘান যেন আনমনে খুনের মোটিভ কি হতে পারে সেটাই ভাবছে।
মেঘান বলে ওঠে - আমাদের একবার রফিক সাহেবের বাসায় যেতে হবে।
জামান সাহেব - হ্যাঁ, কখন যাবেন সেটা বলুন।
মেঘান -বিকেলের দিকে যাবো৷ আমি আর জন যাবো ওদিকে আর ক্লার্ক যাবে আপনার সাথে ওই একপাটি বুট জুতা আর বোতামের ব্যাপারে খোঁজ নিতে।
জামান সাহেব - ঠিক আছে, তাই হবে৷
মেঘান -আপনি রফিক সাহেবের বাসার এড্রেসটা দিয়ে দিন জনকে। আর আমি সময় মতো আপনাকে কল করে নিবো। (জামান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে।)
জামান সাহেব চলে যায়।
বিকেল চারটার দিকে মেঘান, জন আর ক্লার্ক একসাথে বেরিয়ে যায়। ক্লার্ক কে থানায় নামিয়ে দিয়ে মেঘান আর জন রফিক সাহেবের বাসার দিকে রওনা দেয়।
রফিক সাহেবের স্ত্রী মিসেস রোজা চৌধুরীর কাছ থেকে সমস্ত ডিটেইলস জেনে নেয় মেঘান আর জন। জেনে নেয় রফিক সাহেবের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে তোলা কারখানা আর তার মালিক আহসান মল্লিক সম্পর্কে। এছাড়া রফিক সাহেবের আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রুতা ছিলো না। রফিক সাহেব নিতান্তই একজন ভালো মানুষ, সৎ ও নিষ্ঠাবান।
প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিয়ে ওরা বেরিয়ে যেতে চাইলে দেখা হয় রফিক সাহেবের ছোট ভাই শামীম চৌধুরীর সাথে।
বাসায় রোজা চৌধুরী ছাড়াও আছে শামীম চৌধুরী, আর তাদের দুই ছেলেমেয়ে।
শামীম সাহেব তখন সবে রাজশাহী থেকে ফিরছিলেন বাসায়। খুনের দুদিন আগে তিনি নিজের কোনো কাজে রাজশাহী যান। আর ভাইয়ের খুনের কথা শুনে চলে আসে বাসায়।
শামীম সাহেবের হাবভাব খুব একটা সুবিধার মনে হয় না মেঘান আর জনের কাছে। মনে হয় কিছু একটা আড়াল করায় চেষ্টা করছে উনি। আর তাছাড়া ভাইয়ের খুনের কথা শুনেও যে উনি এতো বিলম্ব করে ঢাকায় ফিরলেন এটাই বেশ সন্দেহজনক।
ওরা শামীম সাহেব কে কিছু প্রশ্ন করে থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
থানায় পৌঁছে সবার আগে মেঘান ঘটনাস্থান থেকে সংগ্রহ করা একপাটি বুট জুতা আর বোতাম দেখতে থাকে।
ক্লার্ক তখন মেঘান কে জানায়, এগুলো খুব দামী ব্রান্ডের জুতা আর বোতাম। যে সে লোক এসব পড়ে না, খুব কম সংখ্যক মানুষ আছে যারা এগুলো ব্যবহার করে।
মেঘান ক্লার্কের স্বরে স্বর মিলিয়ে বলে, হুম আমিও সেটাই দেখছি। তবে এরকম জুতা আমি কোথায় যেন দেখেছি, ঠিক মনে করতে পারছি না।
ক্লার্ক - আমি জুতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েছি৷ শহরে হাতেগোনা কয়েকটা জুতার দোকান ছাড়া এগুলো আর কোথাও পাওয়া যায় না। তবে যেসব দোকানে এই জুতা পাওয়া যায় সেখানকার সব তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছি, কে কবে কোথা থেকে জুতাগুলো কিনেছে তাদের ঠিকানা আর মোবাইল নাম্বার ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই পেয়ে যাবো। আর তাছাড়া জুতার নাম্বারিং আছে, কোন দোকান থেকে এই একই নাম্বারের কয়টা জুতা বিক্রি হয়েছে শুধু তাদের সম্পর্কে জালনেই হয়ে যাবে।
মেঘান যেন কি ভাবছে, সমস্ত ঘটনা তার কাছে বেশ এলোমেলো লাগছে। খানিকসময় নিজ মনে ভেবে তারপর,
মেঘান - (জন আর ক্লার্ক কে বলে) তোমরা দুজন আহসান মল্লিকের অফিসে যাও আর সেখানকার সব তথ্য আমায় জানাও।
আর সুযোগ পেলে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবে, উনি এই একই ব্রান্ডের জুতা পড়ে কিনা।
আমি আর জামান সাহেব একবার রফিক সাহেবের অফিসে যাবো।
ঠিক আছে বলে জন আর ক্লার্ক বেরিয়ে যায়।
কিছুসময় জন আর মেঘান যেন নিজেদের মধ্যে কিসব কথা বলে।
তারপর রফিক সাহেবের অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়।
রফিক সাহেবের অফিসে পৌঁছে ওরা সবার প্রথমে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে। জানতে চায় আহসান মল্লিকের কথা আর এছাড়া রফিক সাহেবের ব্যাপারে।
তবে ম্যানেজার যা বলে, রোজ রাত ১০টায় রফিক সাহেব বাসায় যায়, সেদিনও তাই হয়েছিলো কিন্তু ওনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিলো। আর কাকে যেন কল করতে করতে বেরিয়ে যায়।
সবকিছু জেনে নিয়ে ওরা রফিক সাহেবের ক্যাবিনে প্রবেশ করতেই ভূত দেখার মতো যেন চমকে ওঠে।
চলবে...

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.