আমি এমন ডরাইলাম যে কি কমু! দোয়া কালেমা পইড়া মাথায় হাত দিয়া চান্দের আলোতে দেহি হাত টকটকা লাল। আমি ডরে চিক্কুর দিয়া ডাইন বাম কিছু না দেইখা সাইকেলে প্যাডেল মারলাম। সামনে কোনকিছু না দেইখাই আমি ছুটা শুরু করলাম। আমার হিতাহিত কোন জ্ঞান ছিলোনা স্যার। আমার সাইকেলডা বেজায় ভারী লাগতাছিলো। টানতে পারতেছিলামনা। আমি অবাক হইয়া গেলাম খালি সাইকেল ক্যামনে এতো ভারী হইলো এই ভাইবা। আমি সর্বশক্তি দিয়া প্যাডেল মারতেছিলাম। আমাগো গেরামের আগে শেওড়া বনের কাছাকাছি আইসা আমার মনে হউলো কেউ জানি আমারে পিছন থেইকা জাপরাইয়া ধরলো। আমি সমানে পান জর্দার বাসনা পাইতে লাগলাম। শেওড়া বনের মাঝখানে আইসা আমার সাইকেল বেজায় ভারী হইয়া গেলো আমি যতই প্যাডেল মারি না ক্যান সাইকেল একচুলও আগায়না। সাইকেলের চাক্কা গুলান যেন পাথরের মতন হইয়া গেলো। আমি সাইকেল থেইকা নাইম্মা সাইকেল ফালাইয়া দৌড় দিলাম। বন পার হইয়া হবায় কবরস্থানের সামনে আইছি! তহন কবরস্থানের ভিতর থেইকা মানুষের আওয়াজ পাইলাম তার লগে আছিলো মাটি কোপাইনার শব্দ! আমি ভাবলাম কেউ মইরা গেছে তাই গোর খুড়তাছে। গেরামের মানুষ আছে ভাইবা আমার একটু সাহস আইলো। আমি একটু সামনে আগাইয়া গেলাম। কিন্তু দেখলাম কবরস্থানের গেট তালা দেওয়া! আমি আবার ভয় পাইয়া গেলাম। গেট তালা মারা থাকলে এরা ভিতরে ঢুকলো ক্যামনে! আমি গেটের ফূটা দিয়ে ভিতরে উঁকি মারতেই বেজায় বিদ্যুৎ চমকাইলো! ঝকঝকা দিনের লেহান আলোতে আমি যা দেখলাম স্যার তা আপনারে কইতেই আমার কলিজা কাঁইপা উঠতাছে। দেখলাম বিলকিস দাঁড়ায় রইছে আর বাকী চাইরজন লোকে দুইটা গোর খুড়তাছে! হেগো কাউরেই আমি চিনিনা। হঠাৎ মাথা সরাইতে গিয়া গেটের লগে জোরে বারি খাইলাম। সবাই একলগে আমার দিকে ঘুইরা তাকাইলো। ভয়ে আমার আত্মা বাইর হইয়া গেলো। আমি ওই অবস্থায় দৌড় দিলাম কিন্তু একটু সামনে গিয়াই ফাঁকা রাস্তার মইধ্যে কিসের লগে ধাক্কা খাইয়া রাস্তার উপরে পইরা গেলাম। এর পরে আমার আর কিছু মনে নাই স্যার। আমি অজ্ঞান হইয়া গেছিলাম। ফজরের নামাজের সময় লোকজন বাইর হইলে আমারে দেহে রাস্তায় পইরা আছি। লতিফ মিয়া আমারে তার বাসায় নিয়া মুখে পানি মারতেই আমি উইঠা বসি। হেইদিন রাইত থিকাই বিলকিস আমার লগে থাকে। পরথম পরথম হেরে না দেখলেও এহন দেখতে পাই। খালি কথা কয়না।
এই পর্যন্ত বলে ইদ্রিস আবার বিলকিসের মৃত্যুর দিনের কথায় ফিরে গেলো,
সেদিন আছিলো আষাঢ় মাসের সতেরো তারিখ, বুধবার! সকাল থিকা ঝুম বাদলা। আমি কামেও গেছিলাম না। ভরদুপুরে হারিকেন আর কুপি বাতি জ্বালাইয়া রাখছি। মাঝে মইধ্যে বাতাসের চোডে ঘরের পুবে যে ডাব গাছ হেন থেইকা বেজায় শব্দ কইরা ডাব পড়তাছিলো। আমার টিনের চালায় একটা কইরা ডাব পড়ে আর আমরা বেজায় চমকাইয়া উডি। আমাগো পোষা বিড়াল আছিলো ময়না, হেইডা পর্যন্ত ডরে চুপ কইরা আছিলো। বিলকিসরে কইলাম বউ আইজ চাইল ডাইলে খিচুড়ি বসায়া দে। দুইজনে গপসপ করতে করতে খিচুড়ি খামুনে। সে হেকিমপুরি জর্দা দিয়া পান বানাইয়া মুখে দিতে দিতে হাসি মুখে কইলো আমি নামাজে দাঁড়াইলেই সে রান্না করতে যাইবো। সেই সময়ে হঠাৎ ধুপ কইরা অনেক জোরে একটা শব্দ হইলো। মনে হইলো আমার গাছের সবডি ডাব একলগে চালে আছড়াইয়া পড়লো। আমি বেজায় অবাক হইলাম এই আওয়াজে। এমুন কইরা কিছু তো হওনের কথা না। আমাগো বিড়ালডা এমুন ছডফড শুরু করছিলো যে কি কমু! শান্ত বিড়ালডা কেমুন জানি করতে লাগলো। আমাগো দরজায় গিয়া আঁচড়াইতে লাগলো। বিলকিসও কেমুন জানি বারেবারে বাইরে তাকাইতে ছিলো আর ওর চক্ষু দুইডা রক্তের লাহান লাল হইয়া গেছিলো। বিলকিস হঠাৎ উইঠা দাঁড়ায় গেলো আর কেমুন কইরা জানি আমারে কইলো "ভাবছিলাম আপনের লাইগা খিচুরি পাক করমু কিন্তু উনি আইসা গেছে! আমারে নিতে আইছে। দেহেন না ময়না কেমুন করতাছে! আমি কিন্তুক আবার আসমু। আমি না থাকলে আপনে কিন্তুক ভুল কইরাও আবার বিয়া শাদি করবেনা। আপনের লাইগা আমার পরান কান্দে।" এই কইয়াই বিলকিস দরজা খুইলা দিলো। পরায় সাথে সাথেই ময়না গরগর আওয়াজ করতে করতে বাইরের দিকে এমুন দৌড় দিলো যে কি আর কমু স্যার! জীবনে কোনদিন হুনিনাই বিলাই বাদলার ভিতরে বাইরে যায়। এগুলান তো পানিরে ডরায় হেইডাই জানি। নিজের চক্ষে দেইখাও বিশ্বাস করতে পারতাছিলাম না। বিলকিস আমার দিকে ক্যামনে জানি তাকাইলো তারপর হে বাইর হইয়া গেলো। আমি ভাবছিলাম হেয় আমার সাথে মজা করনের জন্য এগুলান করলো তাই তেমুন একটা গুরুত্ব দেই নাই। আমি মনে মনে ভাবলাম বিলকিস ঠিকই রান্ধন সাইরাই আমারে ডাক দিবো।
ইদ্রিস হঠাৎ কথা থামিয়ে বললো,
-স্যার কি আমার গল্প মন দিয়া হুনতাছেন? মুর্খ মানুষ আমরা! রাইত কিন্তুক অনেক হইছে। বিলকিস ডাকতাছে বারেবারে! আমি আর মলয় দুজনেই কেঁপে উঠলাম! বলে কি ইদ্রিস!
আমি বললাম,
-ডাকছে মানে কি? সে কি তোমার সাথে এসেছে নাকি?
-হ স্যার। হেয় তো সবসময় আমার লগেই থাকে।
কথাটা বলার সময় ইদ্রিসের চোখে কেমন যেন একটা ক্রুর হাসি খেলে গেলো! আমি কি ভুল দেখলাম নাকি আলো আঁধারীর এই হেয়ালিতে আমার চোখে স্বাভাবিক জিনিস অন্যভাবে ধরা দিচ্ছে। আমার হারিকেনের আলো এই মহাকালের গহ্বরের মতো অন্ধকারকে দুর করতে অক্ষম বরং সেটা অন্ধকারের হেয়ালিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুনে!
চেয়ার সরানোর ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে চমকে তাকালাম মলয়ের দিকে। সে আমার একেবারে কাছে এসে বসেছে! আমিও যে ভয় পাইনি তা নয়। কিন্তু যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।
আমি মোহিত হয়ে শুনছিলাম। ইদ্রিসের কথায় যেন সম্বিত ফিরে পেলাম। একজন অশিক্ষিত গ্রাম্য মানুষ কিন্তু কি সাবলীলভাবেই না সে বলে যাচ্ছে! আমার সাথে মলয়ও তন্ময় হয়ে শুনছিলো। আমি বললাম,
-তুমি তোমার মতো করে বলে যাও ইদ্রিস। তবে একটা কথা মনে করিয়ে দেই তুমি ভয় পেয়েছিলে সতেরো তারিখ বুধবার আবার বিলকিস মারাও গিয়েছিল বুধবার আর সেদিনও ছিলো সতেরো তারিখ। এমনকি এটাও কিন্তু আষাঢ় মাস!
আমার কথায় ওরা দুজনেই অবাক হলো।
ইদ্রিস আবার শুরু করলো,
-বিলকিস খিচুড়ি পাকাইতে চইলা গেলে আমি জোহরের নামাজ পড়তে দাঁড়াইলাম। আমার নামাজ পরায় শেষের পথে সেই সময় কেমন জানি পোড়া বাসনা পাইলাম। আমি ভাবলাম বিলকিস রান্না করতাছে ঠিকই হুদাই আমারে ডর দেহাইলো। আমাগো পাকঘর থাকনের ঘর থিকা একটু দুরে। উঠানের পশ্চিম দিকে। তহনই মনে হইলো এই বাদলার ভিতরে বৌডারে খামোখা রানতে পাঠাইলাম। দরজা খুইলা অনেকবার বিলকিসরে ডাকলাম কিন্তু কোন উত্তর পাইলাম না। চিল্লাইয়া কইলাম চইলা আইতে। ঘরে যা আছে তাই দিয়া খাওয়া শেষ করমু কিন্তু রান্নাঘর থিকা কোন আওয়াজ আইলো না। আমার মনে কূ ডাক দিলো। হাসনা বানুরে বিয়া করার পর থিকা বিলকিসের মুখে হাসি ছিলোনা। তার উপর হেই পরা পানি উল্টাপাল্টা নিয়মে খাইয়া সে আমারে মাঝে মইধ্যে কেমুন কেমুন কথা জানি কইতো। মাঝে সাঝেই একা একা কথা কইতো। আমি দরজার খিলানে তাকাইয়া দেখলাম ছাতাটাও রাইখা গেছে। আমি সত্যি সত্যি ভয় পাইলাম। যে বাদলা, ছাতা ছাড়া কেমনে গেলো! যাওনের সময় আমি খেয়াল করছিলাম না। আমি ছাতাটা নিয়া পাকঘরে গেলাম। ওইহানে বিলকিসরে দেখলাম না। রান্না করনের কোন লক্ষন সেইহানে ছিলোনা। আমি চিক্কুর দিয়া তারে ডাকতে লাগলাম কিন্তু কোন সারা শব্দ পাইলাম না। তাইলে পোড়া গন্ধ আইলো কই থিকা। আমার বাড়ি থিকা সবচাইতে আছে রমজানের বাড়ি হেইডাও কম কইরা দুইশো গজ দুরে হইবো। এই বাদলার ভিতরে এতো দুরে বাসনা আইবো না। আমি পাগলের মতো চিৎকার কইরা বিলকিসরে ডাকতেছিলাম কিন্তু বাদলার শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ আছিলো না। একটু পরে দেহি রমজান দৌড়াইয়া আমার দিকে আইতাছে। বাদলা কইমা আইছে ততক্ষণে। রমজান কইলো হেয় নাকি খুব জোরে একটা আওয়াজ হুনছে আমার বাড়ির দিক থিকা। আমি ওরে সব খুইলা কইলাম। দুইজন মিল্লা বিলকিসরে খুঁজতে লাগলাম। অনেক্ষন পরে আমার বাড়ির পিছনের ডাব গাছের তলে বিলকিসরে পইড়া থাকতে দেখলাম। আমি চিৎকার দিয়া উঠলাম। রমজান দৌড়াইয়া আইলো আমার দিকে। বিলকিসের পুরা শরীর কাদায় মাখামাখি। সারা শরীর বরফের লাহান ঠান্ডা। মুখটা দুধের মতন সাদা হইয়া আছে। আমি অবাক হইয়া গেলাম কালা মানুষ এমুন সাদা ক্যামনে হইলো! মনে হইল কেউ ওর শরীরের সব রক্ত চুইশা নিছে। আমি ওরে ধইরাই বুঝছিলাম আর বাইচ্চা নাই। বুকের উডানামা বন্ধ! রমজান ভয়ে দৌড় দিলো। ও মনে করছিলো বিলকিস আত্মহত্যা করছে। আমি অনেক বুঝাইলাম কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলোনা। তহন বেজায় শব্দ কইরা আমার চালে কি পড়ছিলো সেইডা অনেকরে জিগাইছিলাম কিন্তু কেউ কিছু কইতে পারে নাই। হেই পীর বাবারে আমি অনেক বছর ধইরা খুঁজছি কিন্তু আর কোনদিন কোন হদিস পাইনাই। ভর বাদলার দিন হইলেও গেরামে ছড়াইতে বেশি সময় লাগলোনা যে বিলকিস আত্মহত্যা করছে। আমি ইমাম সাহেব আর গেরামের হগল মুরুব্বিগো পায়ে ধরলাম কিন্তু কেউ জানাজা পড়াইতে দিলোনা। আমি বিলকিসের ভাইগো খবর দিতে চাইলাম কিন্তু সবাই কইলো হেই লাশ বেশিক্ষণ রাখতে পারবোনা। গেরামে নাকি খারাপ জ্বীনের আছর পরবো। গেরামের কবরখানায় আমার বিলকিসরে দাফন করতে দেয়নাই কেউ। পরে আমার উপর মায়া কইরা ইমাম সাহেব গেরামের ধারে বাঁশঝাড়ের পাশে কবর দিতে অনুমতি দিলো। সেইহানেই ওরে পানির ভিতরে কোন রকম মাডিচাপা দিয়া দিলাম। সেইবার এমুন বন্যা হইছিলো যে বাঁশঝাড় সহ বেবাক ঘরবাড়ি ভাসাইয়া মাডি সহ ভাইঙ্গা নিয়া যায়। বন্যা শেষে গিয়া আর কোন কিছুই পাইনাই!
এটুকু বলেই ইদ্রিস থামলো। রাত তখন অনেক বৃষ্টি একদমই থেমে গেছে। ইদ্রিস উঠে দাঁড়ালো। সে তার পাশেও একটা চেয়ার নিয়ে এসেছিলো তা আগে খেয়াল করিনি! সেটাও ক্যাচ শব্দ করে একটু পিছিয়ে গেলো। হঠাৎ পান জর্দার তীব্র ঘ্রান এসে লাগলো নাকে। আমি আর মলয় দুজনেই দুজনের দিকে তাকালাম। কথা না বলেও বুঝে গেলাম দুজনেই ঘ্রানটা পেয়েছি! কই ইদ্রিসকে তো পান খেতে দেখিনি একবারের জন্যেও! আমি হারিকেন নিয়ে ইদ্রিসকে এগিয়ে দিয়ে এলাম। আমার টানা বারান্দায় বিভিন্ন জায়গায় পানের পিক দেখতে পেলাম! মলয় বলে উঠলো,
-সবই ভগবানের খেলা স্যার। উনার সৃষ্টির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রহস্যের কিনারা করাও আমাদের কম্ন নয়!
অন্য সময় হলে বলতাম বিজ্ঞান আর যুক্তির বাইরে কিছুই নেই। অন্তত আমি তা বিশ্বাস করিনা। কিন্তু কিছু আর বললাম না। কিভাবেই বা বলবো? আমি পরেরদিন আমার বন্ধু বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ রাহাত কে চিঠি দিলাম। চিঠিতে ইদ্রিসের সব কিছুই লিখলাম। আমাদের নিজের দেখা ও অনুভব করা অভিজ্ঞতা বিস্তারিত বর্ননা করলাম। ওর কাছে কোন ব্যাখ্যা থাকলে জানাতে অনুরোধ করলাম। পুরো এক সপ্তাহ পরে উত্তর পেলাম, সেটা এমন
'আমাদের সবার মাঝেই অল্পবিস্তর সম্মোহনী শক্তি আছে। তোমাদের ওই ইদ্রিসের মাঝে একটু বেশী আছে বলেই মনে হচ্ছে। আমার ধারনা সে তার সেই শক্তি কাজে লাগিয়ে তোমাদের রীতিমতো বোকা বানাচ্ছে। সে কোনভাবে তোমার মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ে পান জর্দার ব্যাপারটা গেথে দিয়েছে। অনেকসময় একিউট সিজোফ্রেনিয়ার কেসও হতে পারে। ইদ্রিসের মনের অপরাধ বোধ থেকে সে হয়তো এক অদৃশ্য সত্বা বানিয়ে নিয়েছে। আর বিলকিস যে খুন হয়নি তার প্রমানটাই বা কি? সামনের বছর তোমার ওখানে যাওয়ার ইচ্ছা আছে'।
আমার জ্ঞানী বন্ধু না মানলেও আমি এখন জানি এমন অনেক কিছুই আমাদের চারিপাশে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। আর উপরে থাকা ইশ্বর এটা সযত্নে আড়াল করে চলেছেন আমাদের কাছ থেকে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইদ্রিস আর বিয়ে-শাদি করেনি। তার তৃতীয় আর চতুর্থ বউ প্রায়ই ভয় পেতো তাই তারা দুজনেই ইদ্রিসকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। ইদ্রিসের দ্বিতীয় বউ হাসনা বানু বিলকিস মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তার তিনদিন পরে তার বাপের বাড়ি থেকে মহিষের গাড়িতে আসার পথে গাড়ি থেকে পড়ে বাম পাশের চাকার নীচে একদম পিষ্ট হয়ে মারা যায়। মরার আগে নাকি বুবু বলে কয়েকবার আর্তচিৎকার করেছিলো হাসনা বানু! প্রসংগত সে বিলকিসকে বুবু ডাকতো! মলয়ের কাছে শুনলাম ইদ্রিসের বিয়ে করার বাতিক নাকি পুরোপুরি গায়েব হয়ে গেছে। ব্যাবসায়ে পুরোদস্তুর মনোনিবেশ করেছে। ধর্মে কর্মে খুব উৎসাহ। গত সপ্তাহেই নাকি দোকার বড় করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। দুপুরের দিকে যখন কাস্টমার থাকেনা তখন ইদ্রিস বিলকিসের সাথে গল্পগুজব করে। তীব্র পান জর্দার গন্ধে আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারপাশ। ইমাম সাহেবের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক এখন। নিয়মিত মসজিদে দেখা হয় তাই। আমি আমার আগের অবস্থান থেকে একটু সরে এসেছি। বিজ্ঞান দিয়ে যেহেতু সব কিছুর সমাধান করাই যায়না তাই বিশ্বাসের ভিতটা শক্তপোক্ত করাই ভালো। আর ইদ্রিসের বৌয়ের ব্যাপারটা নিয়ে এখন আর ঘাটাইনা। থাকনা কিছু রহস্য অমীমাংসিত! নিজে থেকে এসবে জড়ানোর দরকারটাই বা কি!!
সমাপ্ত।
© bnbooks.blogspot.com