ঘরের খুনি - পর্ব ২ - ভৌতিক গল্প / রহস্য

ঘরের খুনি
লেখিকা: জান্নাতুল ফেরদৌসী জেমি
পর্ব ২ (শেষ পর্ব )


সবকিছু জেনে নিয়ে ওরা রফিক সাহেবের ক্যাবিনে প্রবেশ করতেই ভূত দেখার মতো যেন চমকে ওঠে।
দেখে রফিক সাহেবের চেয়ারে বসে আছে, ওনারই ছোট ভাই শামীম চৌধুরী। রফিক সাহেবের বাসা থেকে থানায় আর তারপর আবার অফিসে আসা, এর মাঝে সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘন্টার মতো। মেঘান'রা যখন বের হয় তখন সবে শামীম সাহেব বাসায় ফেরে।
আর এতো তাড়াতাড়ি আবার অফিস জয়েন করা বিষয়টা যেন ভীষণ গোলমেলে।
মেঘান আর জামান সাহেব কে দেখে শামীম সাহেব এগিয়ে আসে ওদিকে দিকে।
মেঘান ঠিক তখই প্রশ্ন করে বসে - আপনার কোর্টের মিডল বাটনটি নেই যে? হারিয়েছেন কোথাও?
শামীম সাহেব আমতা আমতা বলেন, ঠিক জানি না। কোথাও পড়ে গেছে নিশ্চয়।
মেঘান - আচ্ছা, আপনি কোন ব্রান্ডের জুতা পড়েন? (শামীম সাহেব কে জিজ্ঞেস করেন।)
শামীম সাহেব একটু বিরক্তির সুরে বলে ওঠেন, আমায় এসব প্রশ্ন কেনো করছেন? আপনাদের কাজ তো খুনি ধরা, সেই কাজই করুন। অযথা আমায় বিরক্ত করছেন কেনো।
জামান সাহেব যেন মেঘানের পয়েন্ট বুঝতে পারে।
তিনি বলেন - উনি অযথা প্রশ্ন করছেন না, কেসের স্বার্থেই করছেন। আর ওনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনি বাধ্য।
শামীম সাহেবের চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে ওঠে।
এমন সময় মেঘানের ফোনে একটা টেক্সট আসে, যেটা করেছে ক্লার্ক।
টেক্সট থেকে মেঘান জানতে পারে, ১৫দিন আগে ওই একই ব্রান্ডের দুই জোড়া জুতা কিনে রোজা চৌধুরী।
মেঘান ক্লার্ক কে কল করে বলে, রোজা চৌধুরী কে নিয়ে রফিক সাহেবের অফিসে আসতে। ওরা তাই করে।
জন, ক্লার্ক আর রোজা চৌধুরী অফিসে এসে হাজির হয়।
জন আর ক্লার্ক জানায়, আহসান মল্লিকের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধিতা থাকলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাদের মাঝে কখনো কোনো ঝামেলা হয়নি। আহসান মল্লিকের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। আর ওই ব্রান্ডের জুতা তিনি কখনো পড়েন নি।
ওদের কথা শুনে মেঘান একটু হেসে নেয়৷ জন আর ক্লার্ক একে অপরের মুখের দিকে তাকায়, ওরা যেন কিছুই বুঝতে পারছে না।
মেঘান ওদের আস্বস্ত করে বলে, আসল কালপিট তো এখানে, তোমরা আহসান মল্লিকের পিছে ঘুরলে তো কোনো তথ্যই পাবে না।
কি খেলটাই না খেলছে ভাবতে পারছো। সম্পুর্ণ অন্যদিকে কেসটা মোর নিয়েছিলো।
জন একটু উৎসুকভাবে মেঘানকে জিজ্ঞেস করে, আপু কি হয়েছে ক্লিয়ারলি বলো, কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
মেঘান রোজা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করে - আচ্ছা, দেখুন তো এই জুতা টি আপনি চিনেন কিনা?
রোজা চৌধুরী - হ্যাঁ, এটা তো শামীমের জুতা। কিছুদিন আগে আমিই শামীম আর ওকে একই রকম জুতা কিনে দেই।
মেঘান - শামীমের সাথে যে রফিক সাহেবের একটা ঝামেলা ছিলো সেটা আপনি বলেন নি কেনো?
রোজা চৌধুরী - আসলে এটা বলার প্রয়োজন মনে করি নি।
মেঘান - আপনি তাহলে বুঝতে পারেন, কোনটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা নয়?
রোজা চৌধুরী - না মানে তা নয়।
(বাকি সবাই মেঘানের কথা শুনে হতভম্ব, খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে ওদের দুজনার কথা।)
মেঘান - (জামান সাহেব কে বলে) আংকেল শামীম সাহেব কে গ্রেফতার করুন, উনিই আসল খুনি।
জামান সাহেব একটু অবাক হয়ে জানতে চায়,
জামান সাহেব - কিন্তু কিছুই বুঝলাম না, কি হয়েছে বলেন তো। (মেঘান কে বলে)
তাহলে শুনুন,
মেঘান - শামীম সাহেব সেদিন রাজশাহী যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে গেলেও, তিনি রাজশাহী যায় না।
এদিকে সবাই জানে উনি রাজশাহী চলে গেছেন। ঠিক তার কয়েকদিন আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর ফ্লাট নিয়ে ঝামেলা হয় রফিক সাহেব আর শামীম সাহেবের মাঝে। এর কোনো কথায় আমাদের রোজা চৌধুরী বলে না। তবে আংকেল (জামান সাহেবকে) আপনার মনে আছে, রফিক সাহেবের বাসা থেকে ফেরার পথে আমি আপনাকে আগে গাড়িতে গিয়ে বসতে বলি?
জামান সাহেব - হ্যাঁ, মনে আছে৷
মেঘান - হ্যাঁ, আপনাকে বসতে বলে আমি দাঁরোয়ানের সাথে কথা বলি৷ আর ওনার কাছেই এসব জানতে পারি। কারণ তার আগেই শামীম সাহেবের ব্যবহারে আমার খটকা লেগেছিলো।
আবার এখানে এসে জানতে পারি, রফিক সাহেব চিন্তিত হয়ে কাউকে কল করতে করতে বেরিয়ে যায়।
আমি আগেই রফিক সাহেবের কল লিস্ট চেক করে নিয়েছিলাম। লাস্ট কল এসেছিলো একটা অচেনা নাম্বার থেকে আর তারপরই তিনি বেশ কয়েকবার শামীম সাহেবকে কল করলেও উনি কল রিসিভ করে না।
ক্লার্ক - তবে কি সবটা শামীম সাহেবের চক্রান্ত?
মেঘান - হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো।
শামীম সাহেব অপরিচিত নাম্বার থেকে কল করে নিজের কিডন্যাপ হওয়ার নাটক করে, আসতে বলে ফার্মগেট অভার ব্রিজের উপরে। আর একারণেই রফিক সাহেবকে চিন্তিত দেখে ম্যানেজার সাহেব৷
কি শামীম সাহেব, ঠিক এগোচ্ছি তো?
শামীম সাহেব চুপ করে থাকে।
মেঘান আবার বলতে চাইলে ক্লার্ক বলে, 'বাকিটা আমি বলি?'
(মেঘান) 'হুম বলো'।
রফিক সাহেব ফার্মগেট অভার ব্রিজে গিয়ে দেখে কয়েকজন লোকের সাথে শামীম দাঁড়িয়ে।
রফিক সাহেব রেগে যায়। জানতে চায় তাকে কেনো এভাবে এখানে ডাকা হলো। আর শামীমই বা এখানে কি করছে, ওর তো রাজশাহী থাকার কথা।
এরপর শামীম সাহেব ওনার ভাগের সম্পত্তি বুঝিয়ে চাইলে ওনাদের মাঝে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এগিয়ে আসে শামীম সাহেবের সাথে থাকা লোকগুলোও। সবাই মিলে ওনাকে আটকাতে চাইলে, উনি শামীম সাহেবকে তখনো ধরেছিলেন আর সেই সময়ই শামীম সাহেবের কোর্ট থেকে একটা বোতাম পড়ে যায়।
'হুম ঠিক বলেছো'। (- মেঘান)
এবার মেঘান বলে,
এভাবে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করার পর শামীম সাহেব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কাছে থাকা ছুরি দিয়ে বারবার আঘাত করতে থাকেন রফিক সাহেব কে।
একসময় অতিরিক্ত ব্লিডিং হয়ে তিনি মারা যান৷
অথচ শামীম সাহেব তখনও খেয়াল করে নি, ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে পায়ের পারা লেগে একটা জুতা ওখানে খুলে গেছে।
মেঘানের সব ঘটনা বলা হলে জন বলে উঠে, এমা! এ দেখছি ঘরের শত্রু বিভীষণকেও হার মানাবে।
ক্লার্ক বলে ওঠে - বিভীষণ তো ছিলো ঘরের শত্রু আর ইনি হলেন ঘরের খুনি৷
যে সম্পত্তির জন্য নিজের ভাইকেও মেরে ফেলতে দুবার ভাবেনি।
স্বামীর এভাবে নিজের ভাইয়ের দাঁড়া খুন হওয়ার কথা শুনে রোজা চৌধুরী কাঁদতে থাকে। আর শামীম সাহেব মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যেন একটু হলেও অনুশোচনা কাজ করছে তার মাঝে।
জামান সাহেব তখন শামীম সাহেবকে গ্রেফতার করে।
মেঘান জামান সাহেবকে বলে, আংকেল এখন খুনির মুখ থেকে এর সাথে জড়িত আর বাকি সদস্যদের বের করার দায়িত্ব আপনার। আমাদের এখানেই ছুটি।
জামান সাহেব একটা প্রশান্তির হাসি হাসে।
সমাপ্ত
© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.