ভৌতিক গল্প - অদ্ভুত আংটি
পর্ব: ৩
এবার ক্রোকোম্যাক্স বলল," হ্যা তিনি মারা গেছেন। আর তিনি যে অদ্ভুত আংটি বইটা লিখেছিলেন তাও এই আংটিটা সম্পর্কে। "
এবার ইরিনা বলতে লাগল, "সুন্দরবনের বাড়িতে থাকা অবস্হায় অনুষ্ঠানের দুইদিন আগে আমরা তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাকে এটা জানানোর জন্য যে' জিলঝিলা '
পুরষ্কারের ন্যায়পরায়নতা ক্যাট্যাগরিতে তাকে সিলেক্ট করা হয়েছে।
মিম বলল,"তবে নাসার দেখা ওই আলোর,,,,,
কথাটা শেষ হবার আগেই
ক্রোকোম্যাক্স বলল," হ্যা তারা যে ছয় বার এলিয়েনদের যানবাহন তোমাদের দেশে আসতে দেখেছেন তা ঐ কারনেই। আসলে আমাদের গ্রহ পৃথিবীর থেকেও অনেক উন্নত। পৃথিবীতে অনেক দ্রুতগতির যানবাহন আছে। কিন্তু পৃথিবীবাসী এখনো আলোর গতির সমান গতিবিশিষ্ট্য যানবাহন আবিষ্কার করতে পারেন নি।
এবার মিম জিজ্ঞাসা করল, "তবে ৬ বার আসা যাওয়ার কারন কি?"
এবার ইরিনা বলল," আমরা দুদিন আগে তাকে খবরটা দিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর অনুষ্ঠানের দিন এসে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর পরে এসে দিয়ে গিয়েছিলাম। এই মোট ৬ বার।
মিমের মাথা থেকে যেন জটটা আস্তে আস্তে খুলছে। কিন্তু পুরো বিষয়টা এখনো ক্লিয়ার নয়।
মিম ওদেরকে জিজ্ঞাসা করল," তবে আংটিটা ওই জঙ্গলের মধ্য এল কি করে? "
ক্রোকোম্যাক্স বলল," এম এ মুহিত শুধু একজন লেখকই ছিলেন না। শেষ বয়সে এসে তিনি গোয়েন্দাগিরিও করতেন। নানা রহস্যের জট তিনি খুলেছিলেন গোয়েন্দাদেরকে নানা তথ্য দিয়ে। অবশ্য তিনি একজন সৎ লোক হলেও ছেলেটাকে মানুষ করতে পারেন নি। তবে ছেলেকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। কখনো চান নি তার ছেলের কোনো ক্ষতি হোক।"
এবার ইরিনা বলল," তিনি একসময় জানতে পারেন সুন্দরবনের গাছ চুরির ও অবৈধ চালানে তার ছেলেও শামিল আছে। তাই তিনি ছেলের দেখা পেতে সুন্দরবনের বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু তার ছেলে তার সাথে দেখা করতে যায় নি বরং তার উপর কড়া নজর রাখল।"
মিম বলল," উনার ছেলে মানে এম এ হামিদ একজন খারাপ লোক? কিন্তু টিভি, পেপার সব জায়গাতে তো তাকে সবাই খুব সৎ একজন বন কর্মকর্তা হিসাবে জানে।"
এবার ক্রোকোম্যাক্স বলল," হ্যা জানে কিন্তু তা ভুল। এই আংটিটা পাওয়ার পর এম এ মুহিত অনেক অজানা রহস্য উদ্ঘাটন করেছিলেন। কিন্তু তার বাড়িতে আমাদের যাতায়াতের কথা তার সিকিউরিটি গার্ডরা জেনে যায়। তারা হামিদকে সবকিছু বললেও সে কিছু বুঝতে পারে না। কিন্তু সে ভালো করে অনুসন্ধানের পর বুঝতে পারে তার বাবার কাছে অদ্ভুত কিছু আছে। কিন্তু সেটা যে কি তা বুঝতে পারে না।
এবার ইরিনা বলল," হামিদ এরপর তার বাবার সাথে দেখা করে। সে তার বাবার কাছে কোনো অদ্ভুত জিনিস আছে কিনা জিজ্ঞাসাও করে। কিন্তু তার বাবা কখনো চাননি এই আংটিটা তার ছেলের হাতে পড়ুক। তখন তিনি এটি তার হাত থেকে খুলে বাক্সতে রেখে দেন। এরই মধ্যে তার অদ্ভুত আংটি বইটা প্রকাশিত হয়। তখন তার ছেলে ভাবে নিশ্চই এটা তার বাবার কল্পনা নয়, বাস্তব। তাই সে সেদিন রাতে তার বাবার কাছে আংটিটা ছিনিয়ে আনতে যায়। কিন্তু এম এ মুহিত আগে থেকেই ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। তাই তিনি তার ছেলে আসার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। সাথে করে আংটির বাক্সটাও নেন। তিনি চাইলে তার ছেলেকে শেষ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার ছেলেকে ভালোবাসার কারনে তা পারেন নি।
কিন্তু তিনি যখন তার বাড়ি থেকে পালাচ্ছিলেন তখন হামিদের রাখা সিকিউরিটি গার্ডরা তাকে দেখে ফেলে এবং তার পিছু নেয়।যখন তিনি বুঝতে পারেন তাকে কেউ ফলো করছে। তিনি দৌড়ানো শুরু করেন। এবং সুন্দরবনের একদম গভীরে চলে যান। এদিকে সিকিউরিটি গার্ডরাও তার পেছন পেছন তাকে তাড়া করতে থাকে।
এটুকু বলে ক্রোকোম্যাক্স থামল।
এবার ইরিনা বলতে শুরু করে," তখন এম এ মুহিত বুঝতে পারেন তাকে যদি ওরা ধরে ফেলতে পারে তবে ওই অসাধারণ আংটি ভুল লোকের হাতে পড়ে যাবে। তাই দৌড়ানোর সময় তিনি ওই বাক্সটাকে বনের ভেতর ফেলে দেন। যেটা তুমি কুড়িয়ে পেয়েছিলে।
এরপর তিনি একটু মোড় নিয়ে অন্য দিকে দৌড়াতে থাকেন। যাতে তার পেছনে আসা লোকগুলো ওই দিকেই না যায়। এমন সময় তার সামনে বাধে সুন্দরবনের ভেতরে বয়ে চলা ক্ষিনধারা নদী।
তিনি তখন মরতে রাজি ছিলেন কিন্তু ছেলের ভয়ঙ্কর রুপ দেখতে প্রস্তুত ছিলেন না। তাই তিনি আত্মহত্যা জেনেও নদীতে ঝাপ দেন। আর ওই নদীতে থাকা ভয়ঙ্কর কুমিরের খাদ্য হন। মৃত্যুর আগে তিনি উচ্চারণ করে যান আংটিটা যেন ভুল লোকের হাতে না পড়ে।
মিম এতখন অবাক হয়ে সবটা শুনছিল।
এবার ও বলল, " আরে আমি তো এই রকম স্বপ্নই একদিন ঘুমের ঘোরে দেখেছিলাম। এটা কিভাবে সম্ভব? আর এই আংটিটা আমিই কেনো পেলাম? "
এবার ক্রোকোম্যাক্স বলল," সেই কথাই তো বলার জন্য আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে। সবই জানতে পারবে তুমি।"
এবার ইরিনা বলতে শুরু করল,,,,,,,,,,,,
এবার ক্রোকোম্যাক্স বলল," সেই কথাই তো বলার জন্য আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে। সবই জানতে পারবে তুমি।"
এবার ইরিনা বলতে শুরু করল," এম এ মুহিত যে আংটিটা বনের মধ্যে রেখে গিয়েছিলো তা আমরা সিগন্যাল পাঠিয়ে জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমরা আংটিটা নিতে আসিনি কারন আমরা জানতাম যে এই আংটিটা এমন একজনের হাতে পড়বে যাকে একদিন সত্যি সত্যিই 'জিলঝিলা' পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন করা হবে। আর তুমিই সেই ভাগ্যবতী যাকে জিলঝিলার জন্য এবার মনোনয়ন করা হয়েছে।
এবার মিম বলল," আপনারা কিভাবে বুঝলেন আমি ভালো লোক। আর আপনারা তিন বছর আগেই কিভাবে বুঝেছিলেন যে আংটিটা ঠিক লোকের হাতে পড়বে?
এবার ক্রোকোম্যাক্স বলল," আমাদের গ্রহে ভবিষ্যৎ দর্শী যন্ত্র আছে। যার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছিলাম আংটিটা ঠিক লোকের হাতেই পড়বে। তাই আর শক্তি খরচ করে পৃথিবীতে আসি নি আংটিটা নিতে। আর তুমিও সময় আসলে জানতে পারবে তুমি আসলেই আংটিটা পাওয়ার যোগ্য কি না।
মিম ওদেরকে জিজ্ঞাসা করল," পৃথিবীতে আসতে আপনাদের আবার শক্তি খরচ হয়? "
ইরিনা বলল," হয় মানে! পৃথিবীতে একবার আসা যাওয়া করতে আমাদের মহাকাশযানটির যতটুকু শক্তি খরচ হয় তা দিয়ে তোমাদের পৃথিবীর সমৃদ্ধশালী দেশ জাপানে ফেলা পারমানবিক বোমার মতো ১০২ টা বোমা তৈরি করা সম্ভব।
মিম কথাটা শুনে বেশ অবাক হল।
এবার ক্রোকোম্যাক্স বলল," আমাদের সময় শেষ হয়ে আসছে আমাদের এখন যেতে হবে। আমাদের অনুষ্ঠান আর দুদিন বাদে শুরু হবে। আমরা সেদিন তোমাকে নিতে আবার আসবো। তুমি রেডি থেকো। ঠিক দুদিন পর রাত ১২.০০ তে আমরা আসবো।
মিম বলল," আপনারা আবার আসবেন? "
ইরিনা বলল," হ্যা আমরা আবার আসবো তোমাকে আমাদের গ্রহে নিয়ে যেতে। এতদিন তুমি ভালো থেকো আর সাবধানে থেকো। আর হ্যা তুমি তোমার শত্রুদের কাছে গেলেই তোমার আংটিটা থেকে আলো বিচ্ছুরিত হবে। এটা তোমাকে তোমার শত্রুদের চিনতে সাহায্য করবে। যাই হোক আমরা আসছি। গুড বাই। "
এটা বলে ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্স ওদের নভোযানে উঠল। আর সাথে সাথে সেটা ছাদ থেকে উপরে উঠে গেল আর আলোর ঝলক হয়ে আকাশের তারার সাথে মিলিয়ে গেল। মিম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তারাভরা আকাশের দিকে।
মিমের ঘুম ভাঙলো ওর আম্মুর ডাকে। ঘুম থেকে উঠে চোখটা খুলে দেখে জানালা দিয়ে সূর্যটা উকি দিচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুপুর ১২ টা বাজে। মিমের আম্মু ওকে খাবারের জন্য ডাকছে।
এত দেরি হল কি করে ঘুম থেকে উঠতে মিম বুঝই কূল পাচ্ছে না। তখন ওর রাতে এলিয়েনদের সাথে সাক্ষাৎ করার ঘটনা মনে পড়ল। ওর সবকিছু কেমন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। হঠাৎ ও ওর আঙ্গুলে আংটিটা দেখতে পেল।
মিম তখন বুঝল তা সত্যিই স্বপ্ন ছিল না। বাস্তবই ছিল।
এদিকে মিমের আম্মু ডেকেই সারা। মিম তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে গেল।
মিমের আম্মু ওকে জিজ্ঞাসা করল," কি রে তুই নাকি পিকনিকে যেয়ে হারিয়ে গিয়েছিলি? "
মিম মনে মনে ভাবল এই হয়েছে সারা। এখন আবার অভিনয়! "
মিমের আব্বু বলল," কি রে কথা বলছিসনা যে।? "
মিম বলল," আব্বু তুমিও? "
আম্মু বলল," কি, তোর আব্বুও কি?"
মিম বলল," কে বলেছে তোমাদেরকে এসব আজগুবি কথা?"
আম্মু বলল," আজগুবি না? তোর সব ফ্রেন্ডরাই তো বলল। "
মিম কি আর বলবে। ওর বন্ধুদের উপর চরম রাগ হলো। কিন্তু ও গুলোকে তো আর এখন কাছে পাচ্ছে না যে ধুলাই দিবে। পরে যখন দেখা হবে ততক্ষণে তো ওর রাগ পানি হয়ে যাবে। আর ওর বন্ধুরা বেচে যাবে।
মিম বলল," ও সব কিছু না। আসলে হয়েছে কি, সেদিন সারা দিন ঘুরে ঘুরে রাতে খাবার খাওয়ার সাথে সাথে চোখজোড়া এটে এসেছিলো ঘুমে। তাই,,,,,,,,,,
মিমের আম্মু অগ্নিশর্মা হয়ে বলল," ঘুম পেয়েছে তাই বাসে না উঠেই ঘুমিয়ে পড়বি? ওরা যদি তোকে ভুল করে রেখেই চলে আসতো তবে কি হতো বলতো?
মিমের আব্বু বলল," আহা মেয়েটাকে ওভাবে বকছো কেনো? ওর কি দোষ? "
মিমের আম্মু আরো রেগে বলল," কি ওর কোনো দোষ নেই? তোমার জন্যই মেয়েটা দিন দিন এমন হচ্ছে। কতবার বারন করেছিলাম পিকনিকে যেতে হবে না। কে শোনে কার কথা,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এদিকে মিম আর মিমের আব্বু খেয়েদেয়ে চুপচাপ উঠে পড়লেন। আর মিমের আম্মু এখনো বকেই চলেছে। মায়েরা যেন এমনই হয়। মিম আর মিমের আব্বু ডাইনিং রুম থেকে এসে হাপ ছেড়ে বাচলো।
এবার মিম ওর রুমে চলে গেল। এখনো মায়ের কন্ঠ ক্ষীণ শোনা যাচ্ছে। দরজাটা বন্ধ করতেই রুমটা শান্ত হয়ে গেল।
আজ পিকনিকের পরের দিন তো তাই কলেজ বন্ধ ছিল।
তাই সরাদিনই মিমের অবসরই কাটলো। এর ভেতর ও অনেকবারই আংটিটা নিয়ে ভেবেছিল। আর ও অপেক্ষা করছিল কবে আবার এলিয়েন দুটো ওকে নিতে আসবে।
পরের দিন সকালে মিম কোনো রকমে ব্রেকফাস্টটা করে কলেজে গেল। বন্ধুের সাথে গল্প করছিল এমন সময় ও তুলিকে দেখল। ও তখন কলেজের গেট দিয়ে ঢুকছিল।
মিম ভাবলো ওকে আজ একটু বকা দিতেই হবে না। কারন ও বেশ বেড়ে গিয়েছে কিছু না বলে বলে। মিম তুলির কাছে যেয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই তুলি ওর আঙ্গুলের আংটিটার দিকে বিষ্ফরিত চোখে তাকালো। মিমও বেশ অবাক হল ও আসতে না আসতেই কি করে তুলি ওর আংটিটা দেখে ফেলল।
মিমও তখন ওর আংটিটার দিকে তাকিয়ে দেখল আংটিটা থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। মিম তাড়াতাড়ি হাতটা লুকিয়ে ফেলল। মিম ভাবল তুলি সাধারণ মানুষতো তাই আংটি থেকে আলো বেরোতে দেখে হয়ত ভয় পেয়ে গেছে বেচারি।
মিম তখন তুলির দিকে তাকিয়ে দেখল ও রাগেতে ফুসাছে,সাপের মতো। ওর চোখদুটো যেন বের হয়ে যাবে এখনি। মুখটা রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।
মিমতো তুলির এহেন রুপ দেখে রিতিমতো ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু আংটিটা দেখে তুলি এত রাগ হচ্ছে কেনো?............
মিম তখন তুলির দিকে তাকিয়ে দেখল ও রাগেতে ফুসাছে,সাপের মতো। ওর চোখদুটো যেন বের হয়ে যাবে এখনি। মুখটা রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।
মিমতো তুলির এহেন রুপ দেখে রিতিমতো ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু আংটিটা দেখে তুলি এত রাগ হচ্ছে কেনো?
সাধারণ মানুষের তো আংটি থেকে আলো বের হতে দেখলে ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু তুলি রাগ কেনো হল? মিম কিছুই বুঝতে পারল না।
এবার তুলি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে মিমের সামনে থেকে চলে গেল। মিম বেচারি ওকে যে বকতে এসেছিল তাই ভুলে গেল ভাবতে ভাবতে।
এদিকে মিম ভালোভাবেই সব ক্লাসগুলো করল। কিন্তু একটা ক্লাসেও তুলিকে দেখল না। মেয়েটা গেল কোথায়? কিছুই বুঝতে পারছে না মিম।
এদিকে মিমের কলেজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে। মিমের আব্বু ওকে নিতে এসেছে। মিম ওর আব্বুর সাথে বাড়ি চলে এল। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে একটা ঘুম দিল। ঘুম থেকে উঠে ছাদে গেল।
ছাদের পরিবেশটা মিমের খুব ভালো লাগে। তাছাড়া এই বিকেল বেলা ছাদের রুপটাও পাল্টে যায়।পশ্চিমে হেলানো হালকা রক্তিম সূর্য আর তার সাথে হালকা সাদা মেঘের পাজা আকাশটাকে যেন অপরুপ ভাবে সাজিয়েছে। মিম তাকিয়ে ছিল সেই আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে।
এমন সময় ওর মনে পড়ল সেদিন রাতের কথা। এলিয়েনরাতো ওকে আজ রাতেই নিয়ে যাবে বলেছিল। তবে কি ওরা আজ রাতে ওকে নিতে আসবে? কিন্তু কতখন থাকতে হবে সেখানে? অনেক্ষন থাকতে হলে আম্মু আব্বুকে কিভাবে ম্যানেজ করবে মিম তাই ভেবে পাচ্ছে না।
এমন সময় আম্মুর ডাক শোনা গেল। মিম নিচে নামলে দেখল আম্মু আব্বু কোথায় যেন বেরোচ্ছে।
মিম জিজ্ঞাসা করায় আম্মু ওকে বলল, " তোর খালামনি খুব অসুস্হ। তাই আমরা সেখানে যাচ্ছি। কাল সকালেই ফিরে আসব। সব কিছু রান্না করা আছে। খেয়ে নিস রাতে"।
আব্বু বলল," আমরা আসছি তবে। সাবধানে থাকিস। "
মিমের তো খালামনির জন্য খুব খারাপ লাগছিল। আবার ভিনগ্রহে যাবার বন্দোবস্ত হয়ে গেল ভেবে ভালোও লাগছিল।
রাত ১১ টা ৪৫ বাজে। মিমের মনে শুধু ইরিনাদের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি হবে আজ রাতে কে জানে। বার বার মিম ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
রাত ১১ টা ৫৫ বাজে। মিম আস্তে আস্তে ছাদের দিকে যাচ্ছে। একসময় ও ছাদে এসে দাড়ালো। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে মিম। ওর চোখে অজানাকে জানার এক তীব্র ইচ্ছা খেলা করছে।
রাত ১১ টা ৫৯ বাজে। মিম দেখল আকাশে একটা ক্ষিন আলো ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। ওর বুঝতে বাকি রইল না এটাই এলিয়েনদের মহাকাশযান। মহাকাশযানটি মিমদের ছাদে ল্যান্ড করল।
যানটি থেকে বেরিয়ে এল ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্স। এসেই ওরা পরস্পরের কুষলাদি বিনিময় করল।
ইরিনা বলল," তৈরি হয়ে যাও মিম। তোমার যাবার সময় হয়ে গিয়েছে। "
মিম বলল," আমি প্রস্তুত আছি। "
এবার ওরা তিনজন মহাকাশযানে উঠে বসল। দরজা বন্ধ করার সাথে সাথে হালকা একটু ঝাকুনি অনুভব করল মিম। বুঝলো ওদের যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রায় ১৫ মিনিট পর মিম আবার ঝাকুনি অনুভব করল। সাথে সাথে ক্রোকোম্যাক্স বলল," আমরা গন্তব্যে পৌছে গিয়েছি। "
এবার ইরিনা দরজাটা খুলে দিল। মিম নিচে নেমে পড়ল। ও দেখল ওর জন্য একটা সুন্দর পথ তৈরি করা হয়েছে। তার দুপাশে কত রকমের প্রানী। এক ধরনের রয়েছে ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সের মতো সবুজ রঙের। আর এক ধরনের রয়েছে নীল রঙের। আবার কেউ কেউ লাল, কমলা, হলুদ। মিম বুঝতে পারলো এরা সব বিভিন্ন গ্রহের প্রানী।
রাস্তাটি শেষ হয়েছে একটা সুরম্য প্রাসাদের দরজার সামনে। সেই দরজাটির সামনে দাড়িয়ে আছে সবুজ রঙের বিশাল দেহি একটা প্রানী। প্রানী বললে ভুল হবে কারন তাদের কাছে তারাই মানুষ।
মিম গেটের সামনে আসতেই লোকটি উচ্চস্বরে বলে উঠল, " স্বাগতম স্বাগতম, টিউবিউল গ্রহে তোমাকে স্বাগতম। "
মিমের পেছন পেছন ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সও আসছিল।
ইরিনা মিমের সাথে লোকটার পরিচয় করিয়ে দিল, " ইনি হচ্ছেন আমাদের টিউবিউল গ্রহের একমাত্র রাজাধিরাজ মহামান্য টেনেসাস। "
মিম তার সাথে কুষল বিনিময় করল। এবার প্রাসাদের দরজা খুলে দেওয়া হল।
টেনেসাস মিমকে বললেন, " আমার মহামান্য অতিথি আপনি টিউবিউলের সবথেকে নন্দিত প্রাসাদে আপনার পদধূলি দিয়ে এই প্রাসাদকে ধন্য করুন। "
তিনি মিমকে প্রাসাদে আগে প্রবেশ করতে বললেন। মিম বেশ অবাকই হল তাদের এমন আতিথেয়তায়।
মিমের পেছন পেছন টেনেসাস আর তার পেছনে ইরিনা আর ক্রোকোম্যাক্সও আসছিলো।
রাজপ্রাসাদের ভেতরটা একদম অপূর্ব। এমন সুন্দর জায়গা মিম পৃথিবীতে আগে কখনো দেখে নি। মিমরা বৈঠক খানায় প্রবেশের সাথে সাথে সকলে উঠে দাড়িয়ে ওকে সম্মান জানালো।
এবার টেনেসাস সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, " ইনিই আমাদের সেই মহামান্য অতিথী যাকে এবছর জিলঝিলার মতো মহান পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে। আর শুধু তাই নয় সে এই পুরষ্কারে মনোনিত সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি। "
একথা শুনে সবাই বাহবা দিতে লাগলো।
এবার টেনেসাস ইরিনাকে বলল মিমেরর রেস্টের ব্যাবস্হা করতে। সন্ধ্যার সময় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে।
ইরিনা মিমকে নিয়ে একটা রুমে গেল। খুব দামি পাথর দিয়ে দেয়ালে নকশা খোদাই করা। বড় একটা ঝারবাতি রয়েছে যেটা রুমটাকে ঝলমলে করে রেখেছে। বিছানাটা পাখির নরম পালকে তৈরি। আসবাবপত্র গুলো মনে হয় স্বেত চন্দন কাঠের তৈরি। রুমটা থেকে কস্তুরির ঘ্রান বের হচ্ছে।
মিম ঘুরে ঘুরে পুরো রুমটা দেখছিল এমন সময় ইরিনা এল। ওর হাতে সুন্দর একটা নকশাকরা থালার উপর একটা ড্রেস রয়েছে। ইরিনা মিমকে ড্রেসটা পরে নিতে বলল।
মিম ড্রেসটা নেওয়ার পর ইরিনা চলে যাচ্ছিল মিম ওকে ডাক দিল।
মিম বলল ," আচ্ছা আমাকে পুরষ্কারে মনোনিত করা হয়েছে সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এত সম্মান কেনো দেখাচ্ছেন বুঝলাম না। "
ইরিনা বলল, " বিশেষ অতিথীকে তো বিশেষভাবে সম্মান দেখাতেই হয়। "
মিম বলল," মানে? "
ইরিনা বলল," সময় আসলে সবই বুঝতে পারবে।
মিম বলল, " আগেই বলা যাবে না? "
ইরিনা বলল," কিছু বিষয় সিক্রেট থাকাই ভালো। "
মিম ওর কথার মধ্যে কেমন রহস্যের গন্ধ পেল। কিন্তু সেটা যে আসলে কি তাই বুঝতে পারলো না। আদৌ কি এই এলিয়েন গুলো ভালো কিনা মিম কিছুই বুঝতে পারছে না। তাছাড়া এরা ওকে নিয়ে যেভাবে আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে তাতে মিমের বেশ সন্দেহ হচ্ছে। কি যে আছে কপালে তা আল্লাহই জানে।
চলবে,,,,,,,,,,