তিনি আব্বুর ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন, "বিয়ের পর আমার ১২ বছরেও কোন সন্তান হয় না । তোর বাবাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বলি । কিন্তু তিনি আমায় প্রচন্ড ভালোবাসেন । তাই তিনি বিয়ে করতে রাজি হননি । আমরা সিদ্ধান্ত নিই একটা ছেলেকে দত্তক নিব । সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাশেদকে দত্তক নিই । রাশেদের তখন এক বছর বয়স । অনাথ আশ্রমের সামনে কে যেন ফেলে রেখে গেছিল । আমরা আইনী ভাবে রাশেদকে দত্তক নিই । তার তিন বছরের মাথায় আমি অনুভব করি আমি প্রেগনেট । তারপর তুই জন্ম নিস । রাসেদ কোনদিন জানে না সে এ বাড়িতে দত্তক হিসেবে এসেছে । আর রাশেদকে পেয়ে আমরা নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখেছিলাম । আমি চাইনা এ কথা রাশেদ কোন ভাবে জানতে পারুক ।" আমি রুম থেকে বেরিয়ে আমার রুমে চলে এলাম । বাথরুমের ঝর্না ছেড়ে তার নিচে বসে থাকলাম । ভালো লাগছে না প্রচ্ন্ড কষ্ট হচ্ছে । এতো কষ্ট তো হবার কথা না । কেন এমন হচ্ছে?
.........................
আশিষ ঘোষ আমাদের বাড়িতে আসলেন । তিনি রুমে বসে আছেন । নিলু ভাবি দরজায় দাঁড়িয়ে । আমি আশিষ ঘোষ কে বললাম, " আপনি সত্যিই কি সমাধান দিতে পারবেন । হাসির শব্দ আর নুপুরের শব্দের কি ব্যাখ্যা দিবেন ।" তিনি এক দৃষ্টিতে নিলু ভাবির দিকে তাকিয়ে আছেন । আমি ভাবির কাছে এসে বললাম, "তুমি কিছু বলবে তাকে?" ভাবি আমার দিকে নির্লিপ্ত সুরে বলল, "তোমার কি সত্যিই মনে হচ্ছে তুমি একজন সাইকো রোগি । পৃথিবীতে নানান মানুষের সাথে নানান ঘটনা ঘটে থাকে । তারা কি সবাই উম্মাদ ।" ভাবি চলে গেল । আমি আশিষ ঘোষ কে বিশ্রাম নিতে বললাম । কিন্তু তিনি বসবেন না তিনি পুকুর পাড়ে যাবেন । আমি তাকে নিয়ে গেলাম । তিনি বকুলতলায় বসলেন । কিছুক্ষন পুকুরের দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে বললেন, "তোমার জানালায় কিছু ছোট ছোট পিতলের ঘন্টা একত্রে বাধা । বাতাসে সেগুলোর শব্দ একেবারে নুপুরের মতো শোনায় । আর যে হাসির কথা বলছো সেটা তোমার কল্পনা ।" আমি সেই অর্ধ-উলঙ্গ মেয়ের কথা বললাম । তিনি এ ব্যাপারে আমার সাথে রাতে কথা বলবেন ।
আগামিকাল ইলার বিয়ে । ইলা নিলু ভাবির কাছে মেহেদি দিচ্ছে । আমি দরজায় দাড়িয়ে দেখছি । ভাইয়া কোথা থেকে যেন হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, "নিলু, ইলার তো সব কিনাকাটা শেষ তুমি কিছু কিনবে না ।" ভাবি মুচকি হেসে বলল-"আগামিকাল সকালে গেলেই হবে । বরযাত্রী তো আসবে বিকেলের দিকে ।" জামাল আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কি সাইকো রোগি তোমার কিছু লাগবে? আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম । দিপা এসে বলল আশিষ ঘোষ আমায় ডাকছেন । আমি তার কাছে গেলাম । তিনি বই পড়ছেন । আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন," বসো মিতু"। আমি সোফায় বসলাম । তিনি আমাকে একটা বই দেখিয়ে বললেন, "এই বইটি তোমার? আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম । বইটি আমাকে দিয়েছিল তমা । হুমায়ন আহমেদের দেবী উপন্যাস । তিনি বললেন, " তুমি বইয়ের চরিত্রগুলোর সাথে মিশে যেতে চাইছো । এইটা একটা আলাদা আকর্ষণ বলতে পার ।" আমি নিলু ভাবির কথা বললাম সে আগে থেকে বলতে পারে সব কিছু । তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "কিছু কিছু মানুষ এই ক্ষমতাটা তৈরী করতে পারে । যেমন জামাল সাহেব এখন তোমায় ডাকতে আসবে । তিনি বকুলের মালা বানিয়েছেন তোমার কোপাতে দিবার জন্য ।" আমি অদ্ভূত ভাবে তাকিয়ে আছি তার দিকে । আমি বললাম আপনি কি করে জানেন? তিনি বললেন, "দিপা তোমার ঘর থেকে বই আনার সময় জামাল সাহেবের হাতে বকুলের মালা দেখেছে ।" কিন্তু এখনই আসবে এটা কি করে জানলেন । বাড়ি ভর্তি মানুষ তুমি নানান কাজে ব্যস্ত । মানুষের ভিড়ে সে তোমায় বলতে পারছে না । জামাল সাহেব আমায় বিরক্তকর মনে করছেন । তাই তিনি এ সুযোগটা কাজে লাগাবেন ।" জামাল আসলো । সে আমায় ডেকে ছাদে নিয়ে গেল । আমার চোখ বন্ধ করতে বলল । আমি চোখ বন্ধ করলাম । চোখের সামনে নিলু ভাবির মুখটা ভেসে উঠল । জামাল আমায় ধাক্কা দিয়ে বলল, মিতু চোখ খুলো । আমি চোখ মেলে দেখি আমার হাতে বকুলের মালা । জামাল আমার কোপায় পরে দিল । কিছুক্ষণ আমরা ছাদে থাকলাম । ছাদ থেকে নেমে দেখি নিলু ভাবি আশিষ ঘোষ এর দরজায় দাড়িয়ে আছে । আমি কাছে যেতেই সে বলল, তিনি চলে গেছেন । আমি বললাম,"কেন! তিনি আর এ বাড়িতে থাকার প্রয়োজন মনে করছে নাহ । আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম । তিনি অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন ।
আমি আম্মু কাছে এসে দেখি তিনি শুয়ে আছেন । আমি আম্মুর পাশে বসে বললাম ,"আচ্ছা আম্মু, নিলু ভাবির পরিবার থেকে কেউ কখনো আমাদের বাড়িতে আসেন না কেন?" আম্মু উঠে বসলেন । তিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলেন । জানালার দিকে তাকিয়ে বললেন, "নিলুর পরিবারে কেউ নেই । তার বাবা অনেক আগেই মারা যায় । তার মা ছিল । বিয়ের পর কয়দিনের মধ্যে তার মা মারা যায় । নিলু ছিল তার মায়ের একমাত্র সন্তান । নিলুদের ছোট্ট একটা বাড়ি ছিল । তার মা মারা যাবার পর সে সেটা বিক্রি করে দেয় । যদিও আমরা আপত্তি করেছিলাম কিন্তু সে শুনেনি । কিন্তু তুই হঠাৎ এসব বলছিস কেন?" আমি বললাম না এমনিতেই । দরজায় তাকিয়ে দেখি নিলু ভাবি দাঁড়িয়ে । আমি ছুটে গিয়ে ভাবি কে জড়িয়ে ধরি । তিনি আমায় শান্তনা দিয়ে বলে,"তুই তো আমার ছোটবোন । এখানে মন খারাপ করার কি আছে ।
নিলু ভাবি আর আমি ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি । তিনি আমায় বললেন,"মিতু, এমন যদি হয় । তোমার ভাইয়া আর আমি হঠাৎ হারিয়ে গেলাম ।" আমি ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম,"সবার থেকে হারালেও তুমি আমার থেকে কখনোই হারাবে না ।" ভাবি মুচকি হাসলেন ।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি । রাশেদ ভাইয়ার মা বাবার পরিচয় নেই । আবার নিলু ভাবিরও কেউ নেই কি অদ্ভূদ ব্যাপার । সেদিন স্বপ্নের কথাটা তো নিলু ভাবিকে বলায় হয়নি । ঘুম আসছে না । নিলু ভাবি কে বলতে হবে । উঠে ভাবির রুমের দিকে যেতে লাগলাম । জামাল বলল কোথায় যাচ্ছ । আমি ভাবির কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে দেখি বকুল তলায় দুজন মানুষের ছায়া । ভয় পেলাম না । কারণ আমি মাঝে মাঝেই দেখি । আমি বকুল তলায় গেলাম । কে জিঙ্গেস করতেই তৈমুরের গলার শব্দ পেলাম । তৈমুর আমায় কথা বলতে বারণ করছে । ইলাও আছে । আমি অবাক হয়ে বললাম, "আগামিকাল তোমাদের বিয়ে আর তোমরা আজ রাতে এখানে কি করছো?" তৈমুর ইলার আঙুলের আংটি দেখিয়ে বলল,"এইটা পরিয়ে দিতে আসছি ।" নিলু ভাবিকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলাম । ইলা বলল নিলু ভাবিই তাকে এখানে নিয়ে এসেছে । তৈমুর চলে গেল । ইলা বাড়ির ভেতর চলে গেল । আমি ভাবিকে নিয়ে বসলাম পুকুর ঘাটে।
ভরা পূর্ণিমায় পরিবেশটা মোহের মত লাগছে । জোসনার প্রতিচ্ছবি পুকুরের পানিতে ভেসে আছে । আমি নিলু ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম, "সেদিন তুমি আমায় মিথ্যে বলেছ । তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যাটা জানো কিন্তু বলছো না ।" ভাবির চোখ রক্ত বর্ণ ধারন করেছে । মাথার চুলগুলো সামনে ঝুলানো । আমি ভয় পাচ্ছি ভিষণ । সে কিছুক্ষণ সেভাবে থাকার পর মুচকি হেসে বলল,"তোমার উত্তর তোমার সামনে আসছে মিতু ।" আমি পুকুরের দিকে তাকাতেই দেখি পুকুরের মাঝখান থেকে আলোর রশ্মি বের হচ্ছে । রশ্মি ভেদ করে সেই অর্ধ-উলঙ্গ মেয়েটি বেরিয়ে আসলো । তার কোলে স্বপ্নের সেই ফুটফুটে শিশুটি । মেয়েটি ভাবির কোলে শিশুটি কে দিয়ে ভাবির পাশে বসে বলল, "আমি আর পারছি না আপু তোমার মেয়েকে সামলাতে । যা দুষ্ট হয়েছে ।" ভাবি শিশুটি কে দুধ পান করাচ্ছে । আমার চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছি নাহ । মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,"তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন? এমন না যে তুমি আমায় আগে কখনো দেখনি । আর তুমি সাইকোলজিস্টের কাছে কেন গেছ । সেকি আর আমাদের খবর রাখে" । বলেই ভাবি আর মেয়েটি হাসতে লাগলো । তাদের হাসি এতো সুন্দর । আমি চোখ সরাতে পারছি না । আমি কথা বলতে পারছি না । যেন কথা বলতেও অনেক শক্তি লাগছে । আমি বললাম, "তোমার নাম কি?" সে ভাবির পাশ থেকে আমার পাশে এসে বসল । আমার কাধে হাত রাখল । একটা ঠান্ডা বাতাস আমাকে শীতল করে দিয়ে গেল । সে হাস্যউজ্জল চেহারা নিয়ে বলল, "মৃধা" । মেয়েটি হাসতে হাসতে পানির নিচে চলে যাচ্ছে আমি কিছু বলতে পারছি না । নিলু ভাবিও নেমে যাচ্ছে । আমি নিলু ভাবিকে চিৎকার করে ডাকছি । তুমি যেও না । তুমি আমাদের ছেড়ে যেও না ।
কেউ সজোরে আমার গালে থাপ্পর মারল । চেয়ে দেখি জামাল আমার হাত ধরে আছে । বাড়ির সবাই বকুল তলায় এসে জমা হয়েছে । জামালের পাশেই ভাইয়া ভাবি দাঁড়িয়ে । অথচ আমি এখনো দেখতে পাচ্ছি ভাবি আর মেয়েটি পানির ভেতর দিয়ে তাদের শহরে প্রবেশ করছে । জামাল আমায় কাধে নিয়ে রুমে আসলো । আমি চুপ করে আছি । আম্মু এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন । আম্মু জামালকে কবিরাজের কথা বলল । জামাল কবিরাজ বিশ্বাস করে না । তবু আম্মুর অনুরোধে ইলার বিয়ের পর নিয়ে যাবে আমাকে । ভাবি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে । ভাইয়া ভাবির হাত ধরে নিয়ে গেল । ভাইয়া কে অনেকটা রাগ্বানিত মনে হলো । আমি ঘুমিয়ে পরলাম ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি জামাল ঘরে নেই । বাহিরে এসে দেখি সবাই বাড়ি সাজাতে ব্যাস্ত । ইলা বারান্দায় বসে আছে । ইলাকে ভিষণ সুন্দর লাগছে । ইলা আমায় কাছে ডাকলো । আমি ওর পাশে বসলাম । ইলা আমার কানে কানে বলল, "গতরাতে তৈমুরের কথা কাউকে বলো আপু প্লীজ" । তারমানে গতরাতের সব ঘটনা সত্যি । কোন ভ্রম ছিলো না । আমি ইলাকে আশ্বাস দিয়ে নিলু ভাবিকে খুজতে লাগলাম । নিলু ভাবি বকুল তলায় । অনেকরকম ফুল দিয়ে মালা তৈরী করছে । আমায় দেখে মুচকি হাসলো ভাবি । আমি ভাবির পাশে গিয়ে বসলাম । জামাল একটু দূর থেকে চেচিয়ে বলল,"এই যে সাইকো আজকে আবার কিছু করে বসো না ।" ভাবি জামাল কে বললেন,"তোমার কাজ কর তুমি? ভাবির গালে থাপ্পরের আঘাতের চিহ্ন । আমি জিঙ্গেস করতেই সে বলল,"গালে মশা পরেছিল তাই মারতে গিয়ে দাগ হয়ে গেছে ।
ভাবি মিথ্যে কথা বলছে । গতরাতের সব সত্যি ছিল । ভাবি এমনটা করেছে বলে ভাইয়া রেগে গিয়ে থাপ্পর মেরেছে । তারমানে আমি যাহ আন্দাজ করছি সেটায় সত্যি । ভাইয়া আর ভাবি মানুষ না । তারা আসলে জ্বীন । ভাবি এখানে থাকতে চাচ্ছে না । সে তার শহরে ফিরে যেতে চায় । কিন্তু ভাইয়া আমাদের ছেড়ে যাবে না ।
বিকেলে বরপক্ষ আসল । খুব ভালো ভাবেই ইলার বিয়ে সম্পূর্ণ হলো । ইলা তার শশুর বাড়ি চলে গেল । রাতে পুরো বাড়ি শান্ত । আত্মীয় স্বজনরা সবাই চলে গেছেন । আমি ভাবীর রুমের পাশ দিয়ে যেতেই তাদের কথা শুনতে পাই । ভাবি ভাইয়া কে বলছে,"আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে থাকতে পারবো না ।" ভাইয়া ভাবি কে শান্তনা দিয়ে বলছে,"যদি আমরা তাকে মৃধার কাছ থেকে নিয়ে আসি তাহলে তার অস্বাভাবিক আচরণে সবাই চিন্তিত হবে । কারণ সে মানুষের মতো না । আর মানুষের শিশু এমন ছোট্ট থেকে চলাফেরা করতে পারে না ।"
নিলু ভাবি রুম থেকে বেরিয়ে এসে আমার হাত ধরে রুমের ভেতরে নিয়ে গেল । আমি ভয়ে কাপছি । আমার গলা শুকিয়ে আসছে । ভাইয়া ভাবিকে বলল,"তুমি মিতুর সাথে কোন বাজে ব্যবহার করবে না" । ভাইয়া আমার কাধে হাত রেখে বলল,"ভয় পাচ্ছিস কেন । আমি তোর ভাই । আমি যদি না থাকি তবে আম্মুর খেয়াল রাখবি । আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম । তুমি কোথাও যাবে না । ভাইয়া পুকুরের দিকে ইশারা করে বলল, "আমাদের শহর ওখানে । তুই তো গেছিস তাই না । তাহলে আর ভয় কিসের। যখন মন খারাপ হবে চলে যাবি ।"
আমি কাদঁতে কাঁদতে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম । কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে । ভাইয়া ভাবি কি তাহলে আমাদের সাথে আর থাকবে না । আমি সিড়ির রেলিং ধরে কান্না করছি । দিপা সিড়ির নিচে থেকে আমার কান্না দেখছে । আমার একটু উপরে জামাল দাঁড়িয়ে । জামাল আমায় ধরে রুমে নিয়ে গেল । জামাল আমার কান্নার কারণ জানতে চাইলো কিন্তু আমি তাকে কিছু বললাম না। তাকে কি বলব আমি । সেকি বিশ্বাস করবে । ভাইয়া আর ভাবি মানুষ না ।
সকালে সবাই তৈরী হচ্ছি ইলাকে নিয়ে আসতে তার শশুড়বাড়ি যেতে হবে । আম্মু, আমার শাশুড়-শাশুড়ি আগে গেলেন । আমি, জামাল, দিপা এক গাড়িতে চড়ে রওনা দিলাম । নিলু ভাবি আর ভাইয়া পরে আসছে বলে আমাদের পাঠিয়ে দিল । আমরা ইলার শশুড় বাড়ি পৌছালাম । কিন্তু ভাইয়ারা এখনো আসছে না দেখে আমার অস্বস্তি লাগছে । এর মধ্যে রাজিয়া বেগম আমাদের বাড়ির টেলিফোন থেকে ফোন করে বলল, বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন ধরেছে । আমি তাকে ভাইয়া আর ভাবি কোথায় জিঙ্গেস করতেই সে চিৎকার দিয়ে বলল, "আল্লাহ গো ভাইজান আর আপামনি তো আগুনে আটকা পরেছে ।"
আমরা তাড়াতাড়ি চলে আসলাম সবাই । ততক্ষনে অর্ধেক বাড়ি পর্যন্ত আগুন লেগে গেছে । ফায়ার সার্ভিস আসলো । আগুন নিভানো হলো । কিন্তু ভাইয়া আর ভাবি কোথায় নেই ।সবাই রাজিয়া বেগম কে জিঙ্গেস করছে । রাজিয়া কাপা কাপা গলায় বলছে,"আপামনি দৌড়ে রান্না ঘরে যায় । গ্যাসের গন্ধে ময় হয়ে গেছে বাড়ি । ভাইজান আমারে তাড়াতাড়ি বাহিরে যাইতে কইল । ভাইজান আপামনিকে নিয়ে আসতে আসতে একটা বিকট আওয়াজ হয় । আর আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরুতে থাকে । তারা দুজনেই আগুনে আটকে যায় ।"
আমি জানি তারা আগুনে পুড়ে মরেনি । আমি বকুল তলায় বসে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছি । জামাল আমায় ধরে আছে । আমি দেখতে পাচ্ছি ভাবি আর ভাইয়া তাদের মেয়েকে নিয়ে খেলছে । মৃধা আমায় ডাকছে । ভাইয়া বারবার মৃধাকে বারং করছে । আমি পুকুরের দিকে ইশারা করে জামালকে বললাম,দেখো ঐ যে ভাইয়া আর ভাবি । তারা তাদের মেয়ের সাথে কি সুন্দর করে খেলছে ।" জামাল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো । তারপর পুকুরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমায় জড়িয়ে তার বুকের মাঝে আকড়ে ধরল ।
চার বছর পর-
আম্মু মারা যাবার পর আমার একটা মেয়ে হয় । তার নাম রাখি মৃধা । এই কয়েক বছরে জামাল পুকুর ভরাট করার অনেক পরিকল্পনা করেছে । কিন্তু সে সফল হয়নি । আমি বেচে থাকতে তা হবে না বলে তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি । ভাইয়া আর ভাবি মাঝে মাঝে আমার সাথে দেখা করতে আসে । আমিও যাই । নিলু ভাবির মেয়ের নাম "আম্র" । অর্ধ-উলঙ্গ মেয়েটির বিয়ে হয়নি । সে পরিবারের রানী । আর রানীরা বিয়ে করে না । আজ দিপাকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে । ইলা আর তৈমুর এসেছে । জামাল আমায় ডাকছে । আমি বকুল তলা থেকে উঠে বাড়ির ভেতরে গেলাম । দিপাকে তো সাজাতে হবে
----------সমাপ্ত
© bnbooks.blogspot.com