-। ভয়ংকর প্রতিশোধ ।-
-। ভয়ংকর প্রতিশোধ ।-
আবীরের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তার কাজ
মোটামোটি শেষ হয়েছে। সুপ্তিকে সে খুন
করতে পেরেছে। শুধু খুন নয়, খুন করার পর
এক ধারালো ছুরি দিয়ে সুপ্তির মাথাটাকে
দেহ
থেকে আলাদা করেছে। কাজটা করতে খুব
বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
ধস্তাধস্তির
এক পর্যায়ে সুপ্তি অনেক দুর্বল হয়ে গেলে
আবীর তার হাতের কাছে থাকা লোহার
রড
দিয়ে সজোরে আঘাত করে সুপ্তির মাথায়।
এক আঘাতেই সুপ্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
তবুও মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আরো কয়েক ঘা লাগায়। যার ফলে সুপ্তি মারা যায়।
তার
মাথার পেছনটুকু কেমন যেন থেঁতলে যায়।
তার পর আবীর সুপ্তির মাথাটা কেটে
আলাদা করে। আবীরের পাশেই পড়ে আছে
সুপ্তির দ্বি খন্ডিত লাশ। আবীর একটা সিগারেট ধরায়। কয়েকটান দেয়ার পর
সে
জ্বলন্ত সিগারেটটাকে সুপ্তির কপালে
চেপে ধরে। কপালের মাঝখানের
খানিকটা
মাংস পুড়ে গোল হয়ে যায়। "বাঃ বেশ ভালোই দেখাচ্ছে তো, মনে হচ্ছে যেন
একটা টিপ পড়েছে", আপন মনে বলতে
থাকে
আবীর। হাত দিয়ে চুলের মুঠোটা ধরে
কাটা
মাথাটাকে তার চোখের সামনে এনে নাড়াচাড়া করে। কেমন নিরীহ
দেখাচ্ছে
মুখটা। গলা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত
পড়ছে। এখন একটা কাজ ই বাকি।
লাশটাকে
মাটিতে পুঁতে ফেলা। আবীরের বাড়িটা অনেক বড়। আশে পাশে জনবসতি তেমন
একটা
নেই। সামনে পেছনে অনেক জায়গা।
ঘরের
পেছনে লাশটাকে সে মাটি চাপা দিবে
বলে মনস্থির করল। জনবসতি কম থাকার কারনে সে তার বাড়ির ভেতর কি করছে
না
করছে তা অন্য কেউ খেয়াল করবে না। সে
খুব ধীর স্থির ভাবে কবর খুড়ল এবং
লাশটাকে ভেতরে রেখে উপরে মাটি
চাপা দিল। তার কাজ আপাদত শেষ। বাকি কাজ ৭
দিন পর। ৭দিন পর সে লাশটাকে আবার
তুলবে। তারপর দেখবে লাশের অবস্থা কি
হয়েছে। কেমন পচন ধরেছে, কোন কোন
জায়গায় বেশি পচন ধরেছে, কোনো পোকা
হয়েছে কিনা লাশের গায়ে এই সব। তার অনেক দিনের শখ হচ্ছে একটা মানুষকে
নিজের হাতে খুন করা এবং সেই
মানুষটার
সুন্দর শরীর কিভাবে পঁচে, গলে নষ্ট হয়
তাপর্যবেক্ষণ করা। শখটা হয়তো খুবই
অদ্ভুত এবং ভয়ানক কিন্তু তবুও এতে তারকোন
কিছু
যায় আসে না। এই শখটুকু পূরণ করার জন্য
তাকে অনেক কিছু করতে হয়েছে। মা
বাবা
মারা যাওয়া এবংআত্মীয় স্বজন খুব কম আছে এরকম একটি মেয়েকে টার্গেট
করতে
হয়েছে। যাতে মেয়েটি হঠাত্ নিঁখোজ
হয়ে
গেলে তাকে খোঁজাখোজি শুরু না হয়। সেই
মেয়েটিই হল সুপ্তি। তার সাথে দুই মাস প্রেমের অভিনয় করতে হয়েছে এবং
শেষমেশ সারপ্রাইজ দেবার নাম করে
বাসায় ডেকে এনে খুন করে কবর দিতে
হয়েছে। এখন দেখা যাক পরে কি হয়।
সেটা
৭ দিন পর দেখা যাবে। ¤ ¤ ¤ ¤ ¤ ¤ ¤ ¤
৭ দিন পরের কথা। আবীর বারান্দায়
বসে
আছে। এই ৭ দিনে সে তার বাড়িতে কিছু
ব্যাপার লক্ষ করেছে। রাতের বেলায়
বাড়িতে কেমন যেন একটা অস্বাভাবিক শান্ত পরিবেশ বজায় থাকে। সুপ্তিকে খুন
করার আগ পর্যন্ত প্রতি রাতে ঝিঁ ঝিঁ
পোকার ডাক শোনা যেত।এখন তাও শোনা
যায় না। এই বাড়িতে একটা কুকুর আছে।
ইদানিং কুকুরটা মাঝ রাতে ঘেউ ঘেউ
করে ডেকে উঠে। এসব ভাবতে ভাবতে আবীর
উঠে
দাড়ালো। এখন রাত ১২ টা। তার অসমাপ্ত
কাজটা এখনই সে সমাপ্ত করবে। একটা
লোহার শাঁবল আর কোদাল হাতে তুলে নিল
সে। মুখে একটা মাস্ক পরে নিল যাতে গন্ধ
একটু কম লাগে। তারপর এগিয়ে গেল
কবরটার
দিকে। কবরটার সামনে এসে থামলো।
চারপাশটা একবার ভালো করে দেখে
নিল। আজকেও এক থমথমে পরিবেশ বিরাজ
করছে।
চারদিকে পিনপতন নীরবতা। আকাশে
বাঁকা
একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয়
চারপাশের সবকিছু মোটামোটি দেখা যাচ্ছে। আবীর কাজে নেমে পড়ল।শাঁবলটা
পাশে রেখে কোদাল দিয়ে কবরের মাটি
খুঁড়তে লাগল। কিছুক্ষন খোঁড়ার পর
লাশটার
অস্তিত্ব টের পেল। তারপর মাটিতে বসে
হাত দিয়ে কবরের মাটি সরাতে লাগল। সরানো হয়ে গেলে দ্বি খন্ডিত লাশটার
দেখা মিলল। আবীর লাশটার দিকে
তাকালো। তার এক সময়ের প্রেমিকা
সুপ্তি
এখন পঁচা, গলা এক মাংস পিন্ডে পরিনত
হয়েছে। কাটা মাথাটার দিকে তাকালো সে। সুপ্তির মুখটা এখন আর চেনার উপায়
নেই। কি বিভত্স! বেঁচে থাকতেমানুষ এই
মুখটাকে সুন্দর রাখতে কত কি প্রসাধনী
ব্যবহার করে। আর মরার পর সেই মুখের
পরিনতি কি হয়! লাশ পঁচার বিকট গন্ধে
বাতাস ভারী হয়ে আসছে। আবীর আর সহ্য করতে না পেরে বমি করে দিল। তার এখন
মনে হচ্ছে এই কাজ গুলো সে শুধু শুধু
করেছে।
এখন লাশটাকে দ্রুত মাটি চাপা দিতে
হবে।
চোখ বন্ধ করে লাশের পাশে বসে কথাগুলো
ভাবছিল সে।
হঠাত্ অনুভব করল কি একটা যেন তার হাত
চেপে ধরেছে। চোখ খুলে নিজের হাতের
দিকে চাইল। যা দেখল সেটা বিশ্বাস
করার মত না কারন সে ভূত বিশ্বাস করে না।
আবীর দেখল লাশটার হাতটা তার হাত
শক্ত
করে চেপে ধরে আছে। কাটা মাথাটা
সামনেই ছিল। লাশের চোখ দুটো খুলে
গেছে। তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোটের মাংস বলতে আর কিছু নেই। দাঁত গুলো
বেরিয়ে পড়েছে। যেন তার দিকে
তাকিয়ে
হাসছে।আবীর তার হাত ছাড়ানোর
প্রানপণ
চেষ্টা করল। অবশেষে ছোটাতে পারল এবং
হঠাত্ করে হাত ছুটে যাওয়ায় সে
মাটিতে
পড়ে গেল। কোন রকমে উঠে বসল সে।
দাড়ানোর শক্তি আর নেই। চাঁদের আলোয়
দেখতে পেল মাথা কাটা লাশটা মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। হাতে লোহার
শাঁবল নিয়ে এগিয়ে আসছে তার দিকে।
আবীর প্রাণপণ চেষ্টা করল উঠে
দাঁড়িয়ে
দৌড় দিতে। কিন্তু পারল না। তারপেশি
গুলো যেন অসাড় হয়ে আছে। নড়াচড়া করতে
ভুলে গেছে। অতিরিক্ত ভয়ের কারনেই
এমনটা হচ্ছে। শেষবারের মত দেখতে
পেল
কাটা মাথাটা মাটির উপর বসা থেকে
তার দিকে তাকিয়ে আছে এবং মাথাকাটা
লাশটা শাঁবল হাতে তার খুব কাছে চলে
এসেছে। শাঁবলটা তার গলা বরাবর
এগিয়ে
আসছে।
শেষবারের মত আবীর অনুভব করল তার গলায়
ভীষণ ব্যাথা হচ্ছে যার সাথে অন্য কোন
ব্যাথার তুলনা চলে না। তারপর সে
সমস্ত
ব্যাথা বেদনার উর্ধ্বে চলে গেল।
পরদিন কিছু বাচ্চা ছেলেকে দেখা গেল আবীরের বাসায়। ক্রিকেট খেলার সময়
তাদের বল ঢুকে যায় এখানে। তারপর বল
নিতে বাসার ভেতর ঢুকলে তারা দুটি
লাশ
দেখতে পায়। একটি লাশ পঁচা, গলা,
মাথাটি শরীর থেকে আলাদা। অন্যটি এখনো পঁচে
নি। তবে তার গলায় শাঁবল ঢুকানো।
শাবলের
আঘাতে গলাটা প্রায় দ্বিখন্ডিত হওয়ার
দশা। রক্তে ভেজা। এই দৃশ্য তারা সহ্য
করতে পারে না। চিত্কার দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে
যায় সেখান থেকে। এই নরকীয় পরিবেশ
থেকে বাইরের মুক্ত বাতাসে।
(সমাপ্ত)