হয়তো - ছোট গল্প
অসংখ্য রহস্যময়, ভৌতিক, গোয়েন্দা গল্পগুলো অনলাইন এ পড়তে ঘুরে আসুন লিংক গুলোতে: ভৌতিক গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রহস্য, ছোট গল্প
।।এক।।
- লাশকাটা ঘরের টেবিলে শোয়ার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
প্রশ্নটা শুনে চমকে পিছনের দিকে ফিরে তাকালাম। দেখি একটা মাঝ বয়সি লোক আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হসপিটালের ওয়ার্ড বয় সম্ভবত।
- আমাকে বলছেন?
- এখানে আপনাকে ছাড়া আর কাউকে তো আমি দেখছি না! আমার মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি আপনি মর্গ দর্শন করবেন।
- কি যা তা বলছেন?
লোকটা খৈনি খাওয়া দাঁত বার করে খিক্ খিক্ করে হাসলো। মনে হলো হারামীটা নিশ্চই সেই Ph.D করা ডোম। কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গেলো।
তারপর সে হাসি থামিয়ে গম্ভীরভাবে বলল - রাতে এদিকে আসবেন না। আসলে মরতে হবে। আগে যারা এসেছিলো তারাও...। কেউ বাঁচেনা... আপনিও বাঁচবেন না।
লোকটা এভাবে বারণ করে গেলো কেনো? এখানে কি তবে কোনো দু'নম্বরি কাজ হয়? হয়তো আমি হটাৎ এদিকে এসে সব দেখে ফেলবো তাই আগাম সাবধান করে গেলো। না! জানতেই হবে ব্যাপারটা ঠিক কি?
এখন চলে যেতে হবে। এখনো এখানে দাড়িয়ে থাকলে লোকটা আবার আসতে পারে। তার থেকে ভালো আর একটু রাত বাড়লে আবার আসবো।
।।দুই।।
আজ সন্ধ্যা থেকেই বাইরে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। একঘেয়ে বৃষ্টির শব্দ কেমন যেনো গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি থামলেই যেনো অস্বস্তি হচ্ছে। এক রাশ বিষন্নতা ধিরে ধিরে গ্রাস করছে আমাকে।
আমি অপেক্ষা করছি গভীর রাতের। রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টিটাও যেনো ধরে এলো। হাতের রেডিয়াম ডায়াল ওয়ালা ঘড়িটায় তখন রাত ঠিক ১২ টা বেজে ৫০ মিনিট। এক টানা ব্যাঙ আর ঝিঁঝির ডাকে কানে তালা লাগার জোগাড়।
১ টা বাজার সাথে সাথে আমি উঠে পড়লাম। পায়ে হাটা পথ থেকে নেমে হালকা ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম মর্গের পিছনের জানালাটার দিকে। জানালার পাশে দাড়িয়ে ভিতরে উঁকি দিলাম। আলো জ্বলছে - উজ্জ্বল হলুদ আলো। সেই আলোর নিচে স্টিলের স্ট্রেচারের উপরে সাদা কাপড়ে মোড়ানো রয়েছে একটা লাশ।
আমার সারা শরীরে যেনো একটা বিদ্যুৎ প্রবাহ খেলে গেলো। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো একটা ঠান্ডা ভয়ের স্রোত। আর সেই সঙ্গে অনুভব করলাম পরিবেশ নিস্তব্ধ। ব্যাঙ আর সেই ঝিঁঝির ডাক আর শোনা যাচ্ছে না। মনের মধ্যে ভয়টা আরো গাঢ় হয়ে উঠতে লাগলো।
।।তিন।।
সেই লোকটা এখন দাড়িয়ে আছে স্ট্রেচারের পাশে। সামনে সারি দিয়ে সাজিয়ে রাখা ঝকঝকে যন্ত্রপাতি গুলোর দিয়ে তাকিয়ে হেসে উঠলো সে। এই অপ্রত্যাশিত হাসির দমকে আমার ঘোর লাগা ভাবটা কিছুটা কেটে গেলো।
বাইরে পায়ের শব্দ হচ্ছে। কেউ এগিয়ে আসছে ঘরটার দিকে। ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেলো। এখন একজন ডাক্তার আর দু'জন ঘরের মধ্যে স্ট্রেচারের সামনে। সেই লোকটার হাসিও থেমে গিয়েছে। ঘরে চার জন মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
ডাক্তারের নির্দেশে সেই লোকটা লাশের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটু একটু করে সরাতে লাগলো লাশের উপরের সাদা চাদর। মানুষ গুলোর দিক থেকে সরে আমার চোখ চলে গেলো লাশের দিকে। আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে আটকে গেলো মৃতদেহটার উপরে। যেনো সেখানে গভীর ঘুমে মগ্ন চল্লিশ বছর পরের আমি।
ডাক্তারবাবু রিপোর্ট প্যাড বের করলেন। তার উপরে লেখা -
"Application, Certificate and Order for Reception and Detention of a Person as a Temporary Patient and as a Chargeable Patient in an approved institution in pursuance of section 184 of the Act."
To the person in charge of BONGAON J.R.DHAR SUB DIVISION HOSPITAL.
Date : 28 July 2058
- গৌরব বিশ্বাস
(২৮/০৭/২০১৮)